আমফান ত্রাণে দুর্নীতি নিয়ে চর্চা চলছে সর্বত্র। রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের শো কজ, সাসপেন্ড চলছে। এদিকে বুধবার হাজরায় কলকাতা পুলিশের এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতি প্রসঙ্গে ফের তির ছুঁড়েছেন সিপিএমের বিরুদ্ধে। তির বললে বলা ভুল তাঁর বক্তব্যের মোদ্দা কথা সিপিএমের আমলে সবটাই ছিল দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। ৮০ বা ৯০ নয়, একেবারে ১০০ শতাংশ। যে সময়ে বিজেপি রাজ্যের সিংহাসন দখলের স্বপ্ন দেখছে, বিরোধী শক্তি হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে, তখনই দু'দফায় শাসন ক্ষমতায় থাকার পর সিপিএমের বিরুদ্ধে কেন তোপ দাগলেন মমতা? তৃণমূলের কথা অনুযায়ী যে সিপিএম রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে কেন তারাই আক্রমণের লক্ষ্য? এ বিষয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
এ রাজ্যে এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের মূল প্রতিপক্ষ বিজেপি তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব লকডাউনের বাজারেই পাঁচ-পাঁচটি ভার্চুয়াল জনসভা করে ফেলেছে। এই সভা শুরু করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, শেষের সভায় বক্তব্য রেখেছেন সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। ২০২১ -এ বাংলা দখলে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে গেরুয়া শিবির। ময়দানের কোন পজিশনে থাকবেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়, এসব নানা বিষয়ে এখন ‘ছক্কা-পাঞ্জা’ চলছে। এরইমধ্যে আমফান থেমে গেলেও ত্রান-দুর্নীতির ঝড়ে দিশেহারা তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল ও বিজেপির এই লড়াইয়ের মাঝে সিপিএমের নেতৃত্ব তথা বামফ্রণ্ট ও কংগ্রেস জোট বাঁধার মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছে। সকলের লক্ষ্যই এক। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন।
আরও পড়ুন- প্রশান্ত কিশোরের “দিদিকে বলো” কে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে “বাপ কে বলো”
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন টার্গেট করলেন সিপিএম-কে? ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিপিএম ও কংগ্রেস জোট নিয়ে কেউ কেউ একটু আশান্বিত হয়েছিলেন। ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায় বাম-কংগ্রেস জোট ধরাশায়ী। বিজেপি মাত্র তিনটে আসনে জয় পেয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে তারা ভাল ভোট কেটেছে। কিন্তু ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে পদ্মশিবির এরাজ্যে ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি পাওয়ায় হিসেব অনেকটাই গুলিয়ে দিয়েছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, রাজনীতিতে এটাই বাস্তব যে বিরোধী পক্ষের মধ্যে যদি ভোট কাটাকাটি হয় তাহলে শাসকদলের জয় পাওয়া অনেক সহজ ও নিশ্চিত হয়। অর্থাৎ গুরুত্ব দিতে হবে দুই প্রতিপক্ষকেই। তাহলেই তো রাজনীতি জমবে। মনে করা হচ্ছে, সেই পুরনো রণকৌশলই নিচ্ছেন তৃণমূলনেত্রী। সিপিএমকে ফের প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা। গুরুত্ব বাড়িয়ে দেওয়া। যেন ময়দানে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে সিপিএম।
আরও পড়ুন- ‘সিপিএম আমলে ১০০ শতাংশ চুরি হত, এখন ৯০ শতাংশ কমেছে’
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ করেছিল সিপিএমের একটা বড় অংশের ভোট বিজেপিতে ট্রান্সফার হয়েছে। সেই কারণেই ভাল ফল করেছে গেরুয়া শিবির। রাজনীতির কারিবারিদের একাংশ মনে করেছিলেন, পরবর্তীতে এই ভোটাররা সরে গেলে বিজেপির শক্তি কমবে। ভোট ট্রান্সফার একটা সাময়িক ঘটনা। তারপর তিনটে বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপি পরাজিত হয়। কিন্তু রাজ্য-রাজনীতিতে এমন কোনও পরিস্থিতি এখনও দেখা যায়নি যে তৃণমূলের মূল বিরোধী শক্তি হিসাবে সিপিএম ফের ময়দানে উত্তীর্ণ হয়েছে। বরং ফের তাদের কংগ্রেসের হাত ধরতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সিপিএম যদি তাঁদের শক্তি বাড়াতে পারে তাহলে আখেরে লাভ হবে তৃণমূল কংগ্রেসের। বিরোধী ভোট ভাগ হবে, হইহই করে জয়ের পতাকা উড়বে ঘাসফুলের। ৯ বছর আগে সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসনকালের দুর্নীতির প্রাসঙ্গ টেনে নিয়ে আসার আর কী কারণ থাকতে পারে!
বিরোধী ভোট কাটাকাটি হলে সবসময়ই তার ফায়দা পায় শাসকদল। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। ২০২১ বিধানসভায় বিজেপিকে সহজে কুপোকাত করার জন্য প্রয়োজন সিপিএমের শক্তিবৃদ্ধি। তৃণমূল নেত্রীর ওই মন্তব্যের পর সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তীরা কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। অভিজ্ঞ মহলের মতে, ওই অতীত অভিযোগের জুৎসই প্রতিক্রিয়া দেওয়া খুবই সহজ। অনেকটাই ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার মত। আগামী দিনে এমন অনেক ঘটনাই ঘটবে যার ফলে সিপিএম পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসবে। লক্ষ্য একটাই, ২০১৯ সালে বিজেপির দিকে ঢলে যাওয়া কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশ যদি ফিরে আসে বামেদের দিকে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন