scorecardresearch

কিউয়ি ফাস্ট বোলাররা এমনি এমনি সফল নন, এর আড়ালে রয়েছে বিজ্ঞান

কীভাবে নিজেদের মাটিতে এত সফল নিউজিল্যান্ডের পেস বোলাররা? কী কী প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে এই সাফল্যের আড়ালে? আলোচনায় ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়

kyle jamieson
আগুনে ফর্মে কাইল জেমিসন। ছবি সৌজন্য: ব্ল্যাক ক্যাপস

ওয়ান-ডে সিরিজ থেকে শুরু করেই নিউজিল্যান্ডের অভূতপূর্ব প্রত্যাবর্তন, বিশেষত বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দলের বিরুদ্ধে তাদের প্রদর্শন সারা ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এর আগে বেশ কিছু কলামে উল্লেখ করেছিলাম, লড়াকু কিউয়িদের তাদের নিজেদের মাটিতে হারানো সহজ হবে না। তবে ভারতীয় হিসেবে এবং ভারতের সমর্থক হিসেবে একটা কাঁটায়-কাঁটায় টক্কর আশা করেছিলাম। নিউজিল্যান্ড দুই-টেস্ট সিরিজ জিতে নিল যথাক্রমে ১০ ও সাত উইকেটে।

পরিসংখ্যান যদি দেখা যায়, তাহলে ২০১২-র মাঝামাঝি থেকে কিউয়িরা তাদের দেশের মাটিতে পরপর ছ’টা সিরজ জিতে প্রায় দুর্ভেদ্য। কুড়িটি ম্যাচ জিতে নিজেদের মাটিতে তারা হেরেছে মাত্র তিনটি ম্যাচ। অথচ দেশের বাইরে জিতেছে মাত্র ১০টি ম্যাচ, হেরেছে ২৩টি। সব বড় দলকেই তাদের দেশের মাটিতে হারানো কঠিন হয়, কিন্তু নিউজিল্যান্ড দল অদ্ভুত এবং বৈজ্ঞানিক ভাবে তাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং আবহাওয়াকে পরিপূর্ণ ভাবে কাজে লাগিয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের মাঠগুলিতে যদি পিচের অবস্থান দেখা যায়, অধিকাংশই উত্তর-দক্ষিণ মুখী। হাওয়া বয় দক্ষিণ-পশ্চিম, অথবা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে। সেই হাওয়ার সুযোগ নিয়ে কিউয়ি ফাস্ট বোলাররা, সেই শেন বন্ড থেকে শুরু করে লকি ফারগুসন, ক্রিস মার্টিন, ট্রেন্ট বোল্ট, বা অ্যাডাম মিলনে, বল ভিতরে আনার চেষ্টা করেন, অর্থাৎ বেশিরভাগ ইন-সুইং করিয়ে থাকেন। হাওয়ার বিপরীতে যাঁরা বল করেন, যেমন সাইমন ডুল থেকে শুরু করে ইয়ান ও’ব্রায়েন বা টিম সাউদি, তাঁরা আউট-সুইং করিয়ে থাকেন।

এটা কিন্তু প্রথাগত সুইং বোলিং নয়, যা হাওয়ার সাহায্য নিয়ে সাধারণত হয়ে থাকে। বরং নিউজিল্যান্ডের অদ্ভুত প্রাকৃতিক আবহাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে কিউয়িরা। শৈশব থেকেই ক্রিকেট খেলার সময়, এবং ঘরোয়া ক্রিকেটেও, প্রকৃতিকে ব্যবহার করেই বড় এবং অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন এই বিশ্বমানের বোলাররা। নিউজিল্যান্ড বরাবরই ক্রিকেট খেলার পক্ষে কঠিন জায়গা। ‘ড্রপ ইন’ পিচ হওয়াতে তারা খেলতে পারে নিজের শক্তির বিচারে। সবুজ উইকেটে বল সুইং করানোর চেষ্টা, এবং ফুল-লেংথ বল করে থাকে তারা।

ক্ষুরধার মস্তিষ্কের পরিচয় দিয়ে প্রকৃতির বিস্ময়কে কাজে লাগিয়ে একের পর এক তাবড় তাবড় টিমকে হারিয়ে চলেছে কিউয়িরা। তা সত্ত্বেও ভারতের কাছ থেকে কিছুটা হলেও লড়াই আশা করেছিলেন ভারতীয় সমর্থকরা। একই আবহাওয়ায় খেলছে টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর টিম। মনঃসংযোগ, ধৈর্য, সুইং ও সিম বোলিং খেলার টেকনিক, ‘অ্যাপ্লিকেশন’, এইসব জায়গায় কোথাও হয়তো খামতি ছিল। এর আগে সুইং ও সিমের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডে ভারত সিরিজ হারে ৪-১ ব্যবধানে, যদিও উইকেটে সবুজের যা আস্তরণ ছিল, তা নিউজিল্যান্ডের কাছাকাছিও নয়।

ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যানরা বিশ্ব স্বীকৃত। বল যদি সুইং এবং সিম করে, তবে দ্বিতীয় টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে ওঠে ৩৮৪ (২৪২ ও ১৪২) রান। তাহলে কি তাঁরা শুধু ব্যাটিং-সহায়ক উইকেটেই রান করবেন? সিলেকশন নিয়েও এক বিরাট প্রশ্নচিহ্ন থাকবে। কে এল রাহুল ও ঋদ্ধিমান সাহাকে নিয়ে আলোচনা উঠবেই।

এক লাফে দুটি টেস্টে ১০০ পয়েন্ট পেয়ে আইসিসি-র টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তালিকায় সপ্তম স্থান থেকে ১৮০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এলো নিউজিল্যান্ড, মাত্র সাতটি টেস্ট খেলে। অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শক্ত সিরিজ তারা খেলে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। ভারতকে খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চারটি টেস্ট অস্ট্রেলিয়ায়, এবং নিজেদের মাটিতে চারটি টেস্ট ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের আবহাওয়ায় এগিয়ে থাকলেও অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাটিতে হারানো শক্ত হবে। এই ক্ষেত্রে ভারত পয়েন্টের নিরিখে এক নম্বর স্থান ধরে রাখতে পারবে কিনা, সেটাই এখন দেখার।

পরিশেষে বলি, অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বাংলা ক্রিকেট দলকে, কোচ অরুণ লাল ও সমস্ত সাপোর্ট স্টাফকে। এই ক্রিকেট মরসুমে ছ’টি ম্যাচ সরাসরি জিতে, শক্তিশালী কর্ণাটককে পর্যুদস্ত করে ৯ মার্চ রঞ্জি ফাইনাল খেলবে বাংলার বীর সৈনিকরা। আজ ১৩ বছর পর সমগ্র বাংলার আপামর ক্রিকেটপ্রেমী উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে থাকবেন রঞ্জি ট্রফির ফাইনালের দিকে।

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন https://t.me/iebangla

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Opinion news download Indian Express Bengali App.

Web Title: New zealand fast bowlers recipe for success saradindu mukherjee