/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2018/11/debesh-ray.jpg)
অলংকরণ- অরিত্র দে
সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও সাংসদ মহম্মদ সেলিম - দুই আলাদা জায়গায় আসামের নাগরিকপঞ্জী নিয়ে বাংলার তৃণমূল কংগ্রেস ও তার নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনে আপত্তি করেছেন।
আপত্তি থাকলে কেউ আপত্তি করতেই পারেন। আপত্তি তো প্রধানত বিজেপি-র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্থিতিকে গৃহযুদ্ধ বলায় বিজেপি-র জাতীয় সভাপতি অমিত শাহ, রাজনৈতিক ক্রোধ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘উনি কি জানেন গৃহযুদ্ধ কাকে বলে?’’
সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘মমতা ব্যানার্জি বাংলায় যা করছেন, বিজেপি আসামে তাই করছে।’’
মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘এর আগে যখন আমরা কয়েকজন সংসদের সদস্য আসামে গিয়েছিলাম, তখন তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ যাননি। তাহলে এখন কেন শিলচর গেলেন, শুধু অশান্তি বাড়াবার জন্য?’’
আমি যে-কয়েকটি কাগজে এই সংবাদগুলি পড়েছি তার কোনোটিতেই এই তিনটি তথ্যের একটিও পাইনি।
১) সূর্যকান্ত মিশ্র কোন কোন বিষয়ে আসামের বিজেপি সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের নীতিগত ও সেই নীতিপ্রয়োগের পদ্ধতিগত মিল দেখেছেন।
২) মহম্মদ সেলিম কিছু সাংসদের আসাম যাওয়া নিয়ে যে-কথা বলেছেন, সেটা কোন বছরের ঘটনা। কারণ সত্তরের দশকের শেষ থেকেই তো আসামের মানুষকে নানা অজুহাতে আসাম থেকে তাড়ানোর চেষ্টা হয়ে চলেছে। উনি কোন বছরের কথা বলেছেন।
৩) অমিত শাহ কি তাঁর উদ্ধৃত ভাষণে কোথাও বলেছেন যে গৃহযুদ্ধ বলতে তিনি কী বোঝেন?
এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর এই দুই দলের আসাম-সংক্রান্ত রাজনীতি বোঝার পক্ষে খুব জরুরি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার, মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কি কোনো তালিকা তৈরি করে বাংলার প্রায় লক্ষ লোককে অনাগরিক ঘোষণা করেছেন ও তাদের অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করেছেন, যার অর্থ তাঁরা এখানে থাকতে পারবেন না?
ইংরেজি ‘পোলারাইজড’ শব্দটির একটি বাংলা প্রতিশব্দ তৈরি হয়েছে, ‘মেরুকরণ’। সূর্যকান্ত মিশ্র নিশ্চয়ই বলবেন, মমতা বাংলায় বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়কে ‘ভিন্ন’ করে দিচ্ছেন ও তেমন রাখাটা ও করাটা তাঁর রাজনৈতিক পদ্ধতি ও নীতি। সূর্যকান্ত মিশ্র নিশ্চয়ই উদাহরণও দেবেন। সে-সব ঠিক কী বেঠিক সে প্রশ্ন অবান্তর।
আরও পড়ুন, দেবেশ রায়ের নিরাজনীতি (পর্ব ৬)
কেন?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এক নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা ও লক্ষ লক্ষ নাগরিককে সেই তালিকা থেকে বাদ দেয়া, আর, রাজ্যের কোনো সরকারি দল, তাদের প্রভাব, সুতরাং ভোট বাড়াতে যদি 'ভিন্ন' করার কৌশল নেয়- তাহলে সে-দুটো কাজ একই কাজ বলে প্রমাণিত হয়?
সূর্যকান্ত মিশ্র অনেক সময়ই এমন কথা বলেন যা সাধারণ যুক্তিতে সাজানো যায় না। আমি তাঁর চাইতে পুরনো পার্টি মেম্বার ও ভোটের কাজ করে আসছি বরাবর। জলপাইগুড়ির বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে তিস্তার চরের এক জায়গায় ঠাকুর অনুকলচন্দ্রের শিষ্যদের বসতি ছিল। তাঁরা ভোটের আগে দেওঘরে তাঁদের প্রধান কেন্দ্রের থেকে নাকী ‘আদেশ’ আনতেন। ঘটনাক্রমে, সেই ১৯৫৭ সাল থেকেই কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী ছিলেন এমন একজন কমিউনিস্ট নেতা, যিনি আত্মীয়তার দিক থেকে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের মাসতুতো ভাই। আমাদের কর্মীরা তাঁদের বোঝাতেন, ঠাকুরের ভাইকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভোট দেওয়া কি উচিত? এঁদের ভোট বরাবরই আমরা পেয়েছি ও অন্যত্র ঠাকুরের যে শিষ্যরা বসবাস করতেন, তাঁরাও কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে প্রচার করতেন।
আরও পড়ুন, দেবেশ রায়ের নিরাজনীতি (পর্ব ৬)
সেটাকে কি ভিন্ন করা বলে? বা গোপন সাম্প্রদায়িকতা বলে? ভোটের সময়ে ভোট পাওয়াটাই তো প্রধান ও একমাত্র কাজ। ব্যক্তিগত উদাহরণ না-দিয়ে আমি সরাসরিই জিগগেশ করতে পারতাম - কোন মুসলিম প্রধান অঞ্চলে কোনো ভোটে কোনো কমিউনিস্ট পার্টি অমুসলিম প্রার্থী দেয়নি বা দেয় না?
কিন্তু তেমনভাবে প্রশ্ন তোলাটা হত আমার ব্যক্তিগত অসততা। তই এখন অসততা যে ভোটেরই অপরিহার্য পদ্ধতিগত অংশ - সেই কথাটা বলতে চাইছি। সূর্যকান্ত মিশ্র ও মহম্মদ সেলিম দলগত অসততা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। সেই ‘অসততা’ আসাম-সংকটের ‘মমতা-অতিরিক্ত’ অসততার ইঙ্গিত দেবে না।
ঐতিহাসিক দিক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শতকরা শতাধিক অংশ সঠিক যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে আসামের সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে এই নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা লক্ষ লক্ষ লোককে অনুপ্রবেশকারী বলে ঘোষণা করা - ভারতবর্ষে রাজ্যে রাজ্যে, ভাষাভাষীদের মধ্যে ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে দলগত ও জাতিগত দখলের আওতায় আনা - বস্তুতই এক দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত মাত্র। দেশভাগের মুখে যেমন ঘটেছিল।
গোধরা দাঙ্গার নায়ক নিশ্চয়ই প্রশ্ন করতে পারেন যে - মমতা ব্যানার্জি কি গৃহযুদ্ধের অর্থ বোঝেন? কারণ, এই প্রশ্নের ভিতরই উত্তরটা নিহিত আছে - অমিত শাহ জানেন গৃহযুদ্ধ বলতে কী বোঝায়।
/indian-express-bangla/media/agency_attachments/2024-07-23t122310686z-short.webp)
Follow Us