(চিকিৎসক আন্দোলন যখন জোরদার, সেই সময়ে বারবার সোশাল মিডিয়ায় উঠে আসছে বিনায়ক সেনের নাম। প্রশ্ন উঠছে, বিনায়ক সেনের বিরুদ্ধে যখন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছিল, তখন কেন অধিকাংশ সংগঠন- ব্যক্তিবর্গকে তাঁর পাশে দাঁড়াতে দেখা যায় নি। কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত কলকাতায় চিকিৎসকদের মিছিলে হেঁটেছিলেন তিনি। এরপর বিনায়ক সেনের কাছে পৌঁছয় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা। জানতে চাওয়া হয় এই আন্দোলন সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য। তিনি ইংরেজিতে যে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন, তার তর্জমা প্রকাশিত হল।)
স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়তি নিরাপত্তার দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়েছে পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল)-এর পশ্চিমবঙ্গ ও জাতীয় শাখা।
আরও পড়ুন, সুজাত ভদ্রের লেখা চিকিৎসকদের আন্দোলন বনাম মমতার অবস্থান
একই সঙ্গে ডাক্তারদের এই আন্দোলন একটি অভূতপূর্ব রাজনৈতিক পরিসর সৃষ্টি করেছে, যার মধ্যে থেকে সকলের জন্য স্বাস্থ্যের মতো বৃহত্তর দাবি সামনে আনা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা Commission on Social Determinants of Health (মারমট কমিটি) জোরের সঙ্গে বলেছে অসাম্যের কারণে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটছে। (এখানে উল্লেখ্য, মৃত্যু অর্থে Death নয়, Killing শব্দটি ব্যবহার করেছে ওই কমিটি)। এ ঘটনা ভারতের পক্ষে কতটা সত্যি তা একটি পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। ভারতে মোট গড় উৎপাদনের মাত্র ১.৫ শতাংশ ব্যয় করা হয় স্বাস্থ্য পরিষেবায়।
আরও পড়ুন, অমিতরঞ্জন বসুর লেখা জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন, ২০১৯
এখানেই শেষ নয়। গিনি কোএফিশিয়েন্ট (গিনি কোএফিশিয়েন্ট এক ধরনের স্ট্যাটিস্টিক্স-এর হিসাব পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বণ্টনের হিসাব পরিমাপ করা যায়। ১৯১২ সালে ইতালিয় স্ট্যাটিসটিসিয়ান কোরাডো গিনি এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। অর্থনৈতিক অসাম্য, আয়ের ও সম্পদের বণ্টন হিসাব করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়) দেখাচ্ছে ভারতে অসাম্য ক্রমবর্ধমান, আদৌ কমতির দিকে নয়। দেশে কর্মহীনতার সর্বনাশা মাত্রাও একই ছবি তুলে ধরছে।
আরও পড়ুন, জয়ন্ত ঘোষালের লেখা চিকিৎসার চেয়েও বড় সমস্যা যখন রাজনীতি
এই পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন নিরাপত্তা সহ অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে সুবিধার দাবির ন্যায্যতা রয়েছে, তেমনই একইসঙ্গে এই সময়ে স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য পরিষেবার রাজনৈতিক-অর্থনীতির দাবিগুলিকেও আরও একবার সামনে আনার প্রয়োজন রয়েছে। এই সময়ে যে দাবিগুলিকে সামনে আনা প্রয়োজন তা হলো:
সমাজের খরচে সকলের জন্য স্বাস্থ্য
খাদ্যের অধিকার
পরিশ্রুত জলের অধিকার
চিকিৎসার যথাযথ সুযোগ
এসবের জন্য প্রয়োজন একটি মানবিক ও প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো, যা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছতে সক্ষম।