সবজির বাজারে পেঁয়াজের ঝাঁঝ কিছুতেই কমছে না। কিন্তু শুধু পেঁয়াজ নয়, প্রায় সমস্ত আনাজই এখন অগ্নিমূল্য। সবজি-বাজার মুখী হতে চাইছে না আমজনতা। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য পেঁয়াজ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন কয়েক দিন ধরেই। এখানে অল্প-বিস্তর চাষ হলেও মূলত পেঁয়াজ আমদানি করতে হয় অন্য রাজ্য থেকে। কিন্তু বাকি সবজি কি আদৌ এই রাজ্যে উৎপাদিত হচ্ছে! তবে এই সব নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের হেলদোল নেই। খাদ্যগ্রহণ যেখানে বেঁচে থাকার প্রাথমিক শর্ত, সেই ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এ নিয়ে কারও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। অভিজ্ঞ মহলের মতে, পরিস্থিতি কেন নিয়ন্ত্রণে নেই তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
বাজারের আগুনের তাপ বাড়তে থাকলেও এখনও পর্যন্ত ডান-বাম কাউকে সদর্থক ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। ৩০-৪০ টাকার পেঁয়াজ শনিবারের বাজারে মিলছে ১৪০ টাকায়। মানের বিচারে পেঁয়াজ আর একটু ভাল হলে ১৬০ টাকা দর হাঁকবে! শীতের গাজরের দাম ৮০ টাকা। বাঁধা কপির কেজি ৪০ টাকা। আনাজের দর দেখে আমবাঙালি সবজি ক্রয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের দিনাতিপাত করাই এখন বড় দায়। কিন্তু রাজনীতির কারবারিদের দেখা মিলছে না। তাদের কোনও তাপউত্তাপ নেই।
রাজ্যের নাকি একটা টাস্ক ফোর্স রয়েছে। মাঝে মধ্যে হানাও নাকি দেয়! কিন্তু এবার কার্যত দেখা গেল টাস্ক ফোর্সের হানার পর রহস্যজনক ভাবে সবজির দাম আরও বাড়ল। কলকাতার দু'একটি বাজারে এই টাস্ক ফোর্স হানা দেওয়ার সময় অনেকেই মনে করছিলেন এবার বোধহয় সবজির দাম নিয়ন্ত্রণ হবে। কোথায় কী! ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও সবজির মূল্য দেখে কপালে চোখ জনতার। নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা নয়, নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছে।
সম্প্রতি রাজ্যে তিন বিধানসভার আসনে উপনির্বাচন হল। হইহই করে জয় হাশিল করল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপি ধরাশায়ী। কিন্ত বাজারদর নিয়ে কারও মুখে রা নেই। অতীতে মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানাসহ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছিল পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি। বামফ্রণ্ট আমলে একবার পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে রাজ্যে হইচই হয়েছিল। অভিজ্ঞমহল মনে করছে, আমআদমি সবজি নিয়ে ভুক্তভোগী হলেও রাজনীতির কারবারিদের তাতে কোনও মাথাব্যথা নেই। ক্ষমতা দখলের লড়াই চালিয়ে যাওয়াই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। সামনের ২০২০ পুরসভা নির্বাচন ও ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য দখলে রাখার ছক কষছে ঘাসফুল এবং গেরুয়া শিবির। বাজারদর নিয়ে সেভাবে লাগাতার পথে নেই কংগ্রেস-সিপিএম। বাজারদর নিয়ে কারও চিন্তা নেই।
দেশে মুষ্টিমেয় লোকের হাতে কোটি কোটি টাকা রয়েছে। এই বাজারদর নিয়ে তাদের মাথা ঘামানোর কোনও প্রয়োজন নেই। স্বভাবতই আমআদমির খাবার জুটলো কী না জুটলো তা ভাবার সময় নেই নেতাদেরও। তাছাড়া দেশে এখন এমন কিছু জ্বলন্ত ইস্যু রয়েছে সেদিকেই প্রচারের মুখ রয়েছে। আদৌ কবে সবজির বাজারদর নিয়ন্ত্রণে আসবে সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন।