মাননীয় এইচ ডি কুমারস্বামী,
মুখ্যমন্ত্রী,
কর্নাটক
স্যার, আমি একজন সাংবাদিক। আঞ্চলিক ভাষার সাংবাদিক। নামকরা সাংবাদিক নই। আপনার সঙ্গে আমার কোনওদিন দেখা হবে না। কথাও হবে না। আমি বা আপনি কেউই পরস্পরকে হাই হ্যালো করব না, কোনও মাধ্যমেই। কিন্তু আপনি আমার কাছে ঋণী। আপনাকে সেই ঋণের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে এই কয়েকটা শব্দ ও বাক্য, যা আমার একমাত্র ক্ষমতা, বা সক্ষমতা। একে আমি আমার হাতিয়ার বলে চিনি ও জানি। আমি এবং আমাদের মতো আরও কেউ কেউ।
স্যার, আপনার দলের নির্বাচনী ইস্তেহার আমি পড়িনি। আমি জানি না সেখানে কী কী কথা ছিল। নিশ্চিত ভাবেই অনেক প্রতিশ্রুতি ছিল, যা আপনি হয়ত পালন করবেন, হয়ত করবেন না। আমি জানি না, আপনার দলের নির্বাচনী ইস্তাহার তৈরির সময়ে আপনারা কেউ ৫ সেপ্টেম্বরের কথা মাথায় রেখেছিলেন কি না। না, শিক্ষক দিবসের কথা বলছি না। ২০১৭-র ৫ সেপ্টেম্বরের কথা বলছি। সেদিন খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ।
গৌরী লঙ্কেশ খুনের অব্যবহিত পরেই বিশেষ তদন্ত দল তৈরি হয়েছিল। সিদ্দারামাইয়া সরকারের গড়া সে তদন্ত দল কী কী করেছিল, সে হিসেব প্রায় সকলেরই জানা, অন্তত এ ব্যাপারে যাঁরা আগ্রহী তাঁরা তো জানেনই। কিন্তু সে তদন্তদল গঠনের তিনদিনের মধ্যেই আপনি তার উপর অনাস্থার কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে আপনি বলেছিলেন, প্রাক্তন আইপিএস অফিসার কেম্পাইয়ের অঙ্গুলিহেলনে এই সিট তৈরি হয়েছে। বলেছিলেন, সিটের নেতৃত্বে যিনি রয়েছেন, তিনি সৎ নন। তাঁর বিরুদ্ধে বাজেয়াপ্ত হওয়া সোনা বাজারে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আপনি বলেছিলেন, সরকারের উচিৎ সৎ পুলিশ অফিসারদের দিয়ে যথাযথ তদন্ত করা। ওই সাংবাদিক সম্মেলনে এই ইস্যুতে আপনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের নকশালদের হাতে গৌরী খুনের তত্ত্ব প্রচারের নিন্দা করে আপনার বক্তব্য ছিল, এটা রাজ্যের বিষয়।
এর পর অনেকদিন গেছে স্যার। সিট কাউকে পাকড়াও করেছে, কাউকে ছেড়ে দিয়েছে। পুরনো খবর ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই গৌরী লঙ্কেশ হত্যা সম্পর্কিত সমস্ত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্য। ঘটনার প্রায় ৫ মাস পর, হিন্দু যুব সেনা নেতা নবীনকে গ্রেফতার করা হয়। এর কদিন পর খবর রটে যে, মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে। রটনার পরাক্রম এতটাই বেশি ছিল যে পুলিশকে বিবৃতি দিয়ে জানাতে হয় যে মূল অভিযুক্ত অধরাই রয়েছে।
৭ মার্চ ডেকান হেরাল্ডে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ৩ ব্যক্তি, গিরীশ, অভিলাষ ও অনিল কুমার ছাড়া পেয়ে যায়। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, তাদের কাছ থেকে জোর করে সাক্ষ্য আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছিল।
স্যার, গত ২৩ তারিখ আপনি শপথগ্রহণের আগের দিনই, বিশেষ তদন্তদল কর্নাটক, গোয়া ও মহারাষ্ট্রের মোট ৮ জায়গায় তল্লাশি চালায়। গত সপ্তাহেই এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় আরও চারজনকে। এদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি সনাতন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আমরা সাংবাদিক। এই পেশা আমার মত কেউ-না একজনকে গৌরী লঙ্কেশের সঙ্গে বেঁধে রাখে। আমরা বেশ্যা বলে সম্বোধিত হই। প্রেস্টিটিউট। আমাদের অপমানিত হতে হয় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে, যাঁদের আবার কেউ কেউ বেশ্যা বলে থাকেন। বেশ্যা শব্দটা খুব সংকীর্ণভাবেই ব্যবহৃত হয় এসব সময়ে। আপনি, আপনারা এবং আমি, আমরা- দুপক্ষই জানি যে আমাদের মধ্যে সকলে ভালো নন, সৎ নন। এবং আমাদের দুপক্ষকেই অন্যের কৃত অন্যায়ের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। আবার এমনও ঘটে, যে আমরা সবাই সব সময়ে সঠিক পথে থাকতে পারি না। ভুল করি। যে ভুলের কথা গৌরী লঙ্কেশ ৫ সেপ্টেম্বরের ভোর বেলার ট্যুইটে বলে গিয়েছিলেন, যার কিছু ঘণ্টা পরেই খুন হয়ে যাবেন তিনি।
Ok some of us commit mistakes like sharing fake posts. let us warn each other then. and not try to expose each other. peace... comrades
— Gauri Lankesh (@gaurilankesh) September 4, 2017
মাননীয় কুমারস্বামী স্যার, আপনার বর্তমান জোটসঙ্গী, কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ৫ সেপ্টেম্বর, ঘটনার রাতেই ট্যুইট করে জানিয়েছিলেন, যে গৌরী লঙ্কেশের হত্যা গণতন্ত্রের হত্যা। গণতন্ত্রের হত্যার পরে সাধারণভাবে হত্যাকারী ধরা পড়ার কথা। কিন্তু পড়েনি। এবং আপনি, আপনারা, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে লড়েছেন।
আমি, একজন আঞ্চলিক ভাষার সাংবাদিক, আপনার কাছে দাবি জানাচ্ছি, গৌরী লঙ্কেশের হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হোক। আমি দাবি জানাচ্ছি, গৌরীর হত্যারহস্যের সমাধান হোক। ভোট মিটে গেছে স্যার। আপনাদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধ্যকতার হিসেব নিকেশের পালা আপাতত চুকেছে। গণতন্ত্রের (যে গণতন্ত্র মাঝেমাঝেই খুন হয়ে যায়) দোহাই, আমার, আমাদের সহকর্মী গৌরী লঙ্কেশের হত্যাতদন্ত শেষ করুন।
@HDkumaraswamy1
You owe us. Us. Journalists.
নমস্কারান্তে,
তাপস দাশ
কলকাতা
৩০-০৮-২০১৮
পুনশ্চ- কর্নাটকে সরকার আস্থা ভোটে হেরে গিয়েছে। নতুন সরকার তৈরি অবশ্যম্ভাবী। এবারের সরকার গৌরী লঙ্কেশ হত্যাকাণ্ডের অপরাধীদের শাস্তি দিতে কতদূর আগ্রহী হবে দেখা যাক। পুরনো সরকারের প্রধানকে লেখা খোলা চিঠি এই পরিস্থিতিতে তামাদিই হয়ে পড়ল।
২৪-০৭-২০১৯