তৃতীয় দফার ভোটে হিংসায় উত্তাল বাংলা। সরগরম বঙ্গ রাজ্য-রাজনীতি। মঙ্গলবারের ভোটে তৃণমূল প্রার্থীর মাথায় বাঁশ পড়েছে, বিজেপি প্রার্থীকে ঘাড় ধরে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে, এছাড়াও একাধিক অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রাজনৈতিক খুনের অভিযোগও উঠেছে। অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, রাজ্যে এখনও পাঁচ দফা নির্বাচন বাকি রয়েছে। সেক্ষেত্রে ধাপে ধাপে যে ভাবে নির্বাচনের দিন রাজনৈতিক সংঘর্ষ বাড়ছে তাতে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা উচিত বলে মনে করছে নাগরিক সমাজ।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরাজ্যে রাজনৈতিক অশান্তি ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তৃতীয় দফার নির্বাচনে কিছু ক্ষেত্রেই ভোটারদের কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে কর্ডন করে নিয়ে গিয়ে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। অভিযোগ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু কেন্দ্রেই ভোটাররা আতঙ্কে ভোটই দিতে পারেননি। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে সর্বত্র অবাধ ভোট দেওয়া সম্ভব কী? এবার আর ভোট কেন্দ্রে বা তার আশেপাশে নয়, একেবারে গ্রামের রাস্তাতেই ভোটারদের আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভোটকে কেন্দ্র করে খুন বা অশান্তি এরাজ্যে নতুন কোনও বিষয় নয়। তবে যে ভাবে মঙ্গলবার দফায় দফায় হিংসার ঘটনা ঘটেছে তাতে 'শান্তিপূর্ণ' ভোটদান নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নাগরিক সমাজ মনে করে, ভোটের হিংসা বন্ধ করতে বুদ্বিজীবী বা নেতৃত্ব স্থানীয় রাজনীতিকদের যৌথভাবে প্রকাশ্যে রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন করা উচিত। রাজনৈতিক হানাহানি নিয়ে অনেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। অবশ্য যাঁদের বুদ্বিজীবী তকমা দেওয়া হয় তাঁদের একটা বড় অংশ এখন নানা রাজনৈতিক শিবিরে বিভক্ত। অনেকেই সরাসরি ভোট ময়দানেও নেমে পড়েছেন।
ভোটের আগে থেকেই 'খেলা হবে' স্লোগানে মেতেছে বাংলা। তবে কী 'খেলা হবে' তা খোলসা করেননি কেউই। কেউ আবার বলেছেন ভয়ঙ্কর খেলা হবে। এবার প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কী জোরদার খেলা শুরু হয়ে গেল? জোর করে এজেন্ট বসতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠছে নানান বুথে। প্রার্থীরা ধরনায় বসে পড়ছেন কেউ বুথে তো কেউ রাস্তায়। কোনও কোনও না প্রার্থী নিত্য আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। পুলিশ প্রশাসনের নাগের ডগায় ঘটেছে একাধিক অশান্তির ঘটনা। কিছুতেই থামছে না রাজনৈতিক হিংসা। দফা বাড়িয়েও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না অশান্তি।
একে অপরের বিরুদ্ধে ছাড়াও নির্বাচন কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও অন্যদিকে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনকে গন্ডগোলের জন্য দায়ী করছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো। অভিজ্ঞ মহলের মতে, দায় এড়াতে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ চলতেই থাকবে। গণতন্ত্রের এই উতসবে রক্তের হোলি খেলা বন্ধ হওয়া উচিত। দেশের অন্য কোনও রাজ্যে ভোটকে কেন্দ্র করে এমন প্রাণহানি বা হিংসার ঘটনা এখন অতীত। বাংলার এবিষয়ে এমন অগ্রগতি বন্ধ করতে সকলের সক্রিয় হওয়া বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করে অভিজ্ঞ মহল।