‘’He grinned. And (she) knew she would soon be dead.
Then he bit.
Elise Hermansen tried to scream into his hand as she saw the blood sparying from her own throat.’’
না, এলিজ হারমানসেনের গলায় কোনো রক্তচোষা ড্রাকুলা কামড় বসায়নি। স্ক্যান্ডিথ্রিলারের দুনিয়ায় মান্ধাতার আমলের কল্পকাহিনির কোনো স্থান নেই। আছে লিঙ্গ রাজনীতি, ব্যক্তিগত ত্রুটিবিচ্যুতিতে নাজেহাল কিছু মানবিক গোয়েন্দাচরিত্র, এবং নিখাদ ভায়োলেন্স। আর এই ভায়োলেন্সকেই নিছক দৃশ্যকল্প থেকে চিন্তাকল্পে পৌঁছে দিতে সুইডেন-নরওয়ে-ডেনমার্ক-আইসল্যান্ডের লেখকরা শতক পুরনো জনপ্রিয় সাহিত্যধারাটির খোলনলচে বদলে ফেলছেন। সে পরিবর্তন শুধু বিষয়বস্তু বা লেখনীশৈলীতেই নয়, গোয়েন্দা গল্পের প্রতিটি আনাচে কানাচেই দেখা যাচ্ছে।
যেমন ধরুন খুনের হাতিয়ার।
শুরুর অপরাধস্থলে একবার ফিরে যাই। এলিজ নরওয়েজিয়ান লেখক ইও নেসবোর উপন্যাস ‘দ্য থার্স্ট’ (গোয়েন্দা হ্যারি হুলা সিরিজ)-এর একটি চরিত্র। শেষ দশ বছরের বই বিক্রির হিসাবে নেসবো সম্ভবত জনপ্রিয়তম স্ক্যান্ডিথ্রিলার লেখক। সারা পৃথিবী জুড়ে তাঁর বই বিক্রি হয়েছে প্রায় তিরিশ মিলিয়নের কাছাকাছি। এবং এই লাখ লাখ পাঠকের সঙ্গে প্রায় প্রতিটি নতুন বইয়েই নেসবো পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন অভূতপূর্ব সব মারণাস্ত্রের। এলিজ হারমানসেনের খুনি যেমন ব্যবহার করেছে ধারালো লোহার দাঁত। প্রতিটি খুনের আগে সেই দাঁতে যান্ত্রিক শান পড়ে, যাতে শ্বদন্তসুলভ হাতিয়ারের প্রথম আঘাতেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় শিকারের গলা। ওই একই সিরিজের আরেকটি বই ‘দ্য লেপার্ড’-এ আমরা দেখছি আরেক নৃশংস আততায়ীকে যে তার শিকারের মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় একটি ধাতব বল। সেই বলের ওজনে ক্রমশই দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে মানুষটির, অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে টের পায় একে একে জিভ, ঠোঁট, মাড়ি অসাড় হয়ে আসছে। মানুষটির হাত খোলাই থাকে, কিন্তু শুধু হাতে সে বল টেনে বার করা সম্ভব নয়। ধাতব বলের সঙ্গে লাগানো আছে একটি তার, যদিও আততায়ী হিসহিসে গলায় জানিয়েছে সে তারে ভুলেও হাত না লাগাতে। সেই সতর্কবাণীর মধ্যে এমন কোনো রহস্যময়তা থাকে যে মানুষটি তার ধরে টানতে ভরসা পায় না। কিন্তু মৃত্যুযন্ত্রণা বড় বালাই, মস্তিষ্কে অক্সিজেনের জোগানও কমছে, একটা ঘোরের মধ্যেই মানুষটি শেষমেশ হাত বাড়ায় তারটি টেনে বলটি মুখের বাইরে নিয়ে আসতে।
ধাতব বলের মধ্য থেকে চকিতে বেরিয়ে আসে চব্বিশটি সুতীক্ষ্ণ লৌহশলাকা।
নতুন পাঠক ভাবতেই পারেন রহস্যসাহিত্যের নামে তিনি হাতে পেয়েছেন একটি টর্চার-পর্ন। কিন্তু উপন্যাসটি খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে এ শুধু হিংস্রতার জন্য হিংস্রতা নয়। আধুনিক রহস্যসাহিত্যের লেখনীশৈলী স্ক্যান্ডিথ্রিলারের লেখকদের হাত ধরে ক্রমশই বদলে যাচ্ছে, আর সেই আধুনিকতার খাতিরেই সম্ভবত দরকার হচ্ছে কিছু আপাত নির্মম চিন্তাকল্পের। ধ্রুপদী হু-ডান-ইট বা বেড়াল-ইঁদুর খেলার কাঠামোটি এঁরা যে পরিত্যাগ করেছেন তা নয়, কিন্তু সামগ্রিক ভাবে সেই কাঠামোর গুরুত্ব কমে এসেছে। তার বদলে অনেক বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে লেখকের নিজস্ব জীবনদর্শন। নেসবোর রহস্যকাহিনিতে তাই অনাবশ্যক উত্তেজনার কোনো স্থানই নেই। অপরাধী এবং তার শিকারের সাক্ষাতের মুহূর্তগুলিতে এক সমান্তরাল জগতে লেখক ও পাঠকেরও দেখা হচ্ছে। লেখক মনে করিয়ে দিচ্ছেন যন্ত্রণাই নিয়তি, অস্তিত্বরক্ষা পুরোপুরি ভাবেই একটি সম্ভাবনামূলক (প্রোবাবিলিস্টিক) ফলাফল।
‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’ গল্পে সত্যজিৎ তোপসেকে দিয়ে বলিয়েছিলেন “খ-য়ে হ্রস্বউ আর ন – এই দুটো পর পর জুড়লে যেন আপনা থেকেই শিউরে উঠতে হয়”। কথাটা শুধু বাঙালি লেখক বা পাঠকের জন্যই প্রযোজ্য নয়, ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর গোয়েন্দাসাহিত্যের সমস্ত তাবড় লেখকই প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে সত্যজিৎ-এর কথাগুলোই বলে গেছেন। তাঁদের এবং তাঁদের পাঠকদের পৃথিবীতে নিরুপদ্রব জীবনযাত্রাই স্বাভাবিকতার আরেক নাম, ফলে হত্যাকাণ্ডটিই হয়ে দাঁড়ায় গল্পের ভরকেন্দ্র। তাই এরকিউল পয়ারোর গল্পের শিরোনাম দেখি ‘দ্য মার্ডার অফ রজার অ্যাকরয়েড’ বা ‘মার্ডার অন দ্য ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস’, মিস মার্পলের গল্পের নাম দেওয়া হয় ‘আ মার্ডার ইজ অ্যানাউন্সড’ বা ‘দ্য মার্ডার অ্যাট দ্য ভিকারেজ’। একটি হত্যাকাণ্ডই পাঠকের নিস্তরঙ্গ জীবনে নিয়ে আসছে প্রবল উত্তেজনার রসদ, তাই শার্লক হোমসের একাধিক গল্পের শিরোনামে ‘অ্যাডভেঞ্চার’ শব্দটির ছড়াছড়ি। আধুনিক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রহস্য সাহিত্যের শিরোনাম সেখানে অনেক বেশি বিমূর্ত, রহস্য বা অ্যাডভেঞ্চার জাতীয় শব্দগুলোকেই সেখানে সযত্নে পরিহার করা হচ্ছে। কারণ পাঠক, আপনার বাবা-ঠাকুরদার তুলনায় আপনার জীবনে অনিশ্চয়তা এত বেশি যে এই চাপিয়ে দেওয়া রহস্য বা অ্যাডভেঞ্চার দিয়ে আর আপনার রোমকূপে শিহরণ জাগানো সম্ভব নয়। ধ্রুপদী রহস্যসাহিত্য হয়ত আপনি এখনো পড়েন, ভবিষ্যতেও পড়বেন, কিন্তু সেই ধ্রুপদী কাঠামোয় একবিংশ শতককে দেখার চেষ্টাটাই বৃথা। আধুনিক পাঠকের জন্যই দরকার এই ধ্রুপদী কাঠামোটির বিনির্মাণ। আর ঠিক সেই কাজটিই ইয়ো নেসবোর মারণাস্ত্রগুলি করছে, ভেঙে ফেলছে রহস্যসাহিত্যের প্রচলিত ধ্যানধারণাকে। শক্ ভ্যালু বাড়ানোর জন্য নয়, ওই লোহার দাঁত বা চব্বিশ শলাকার ধাতব বল দৃশ্যকল্পকে বদলে ফেলতে চাইছে চিন্তাকল্পে। কপালে বুলেটের গর্ত বা বুকের বাঁদিকে ঢুকে থাকা ছোরার মতন কোনো দৃশ্য এই লেখকরা সাজিয়ে দিচ্ছেন না, পাঠককে নিজের মতন করে ভেবে নিতে দিচ্ছেন। এবং সে চিন্তাকল্পে থেকে যাচ্ছে একাধিক স্তর। চব্বিশটি ফলার অভিঘাতে শরীরের ঊর্ধ্বাংশটি ঠিক কতটা বিকৃত হতে পারে সে প্রশ্নও যেমন জাগতে পারে, তেমনই মনে হতে পারে এই অতি নির্মমতার পেছনেও কি লুকিয়ে আছে কোনো মেটাফর? আপনার উত্তরের সঙ্গে আমার উত্তর হয়ত মিলবে না। আপনি বলবেন শারীরিক যন্ত্রণাই জীবনের একমাত্র অবাঞ্ছিত নিশ্চয়তা, আমি বলব একাকিত্বের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খুনির হাতিয়ারকেও হয়ে উঠতে হয়েছে আরো নির্মম। কিন্তু বড় কথা এই যে আমরা দু’জনেই ভাবছি। মস্তিষ্ককে ভাতঘুমে পাঠিয়ে রুদ্ধ্বশ্বাসে পাতার পর পাতা উলটে যাওয়ার দিন শেষ হতে চলেছে।
নিঃসঙ্গতা এ যুগের অপরাধসাহিত্যের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ থিম। স্ক্যান্ডিনেভিয়াকে বাদ দিয়ে এমনকি বাকি ইওরোপ এবং আমেরিকার রহস্যসাহিত্যেও দেখা যাচ্ছে মূল চরিত্রগুলি উত্তরোত্তর একাকী হয়ে পড়ছে। এই একটা জায়গায় এসে অপরাধী, তার শিকার এবং গোয়েন্দা এই তিন শ্রেণির চরিত্রই যেন মিলেমিশে যাচ্ছে। যেন ছক্কার এক একটা দানে ঠিক হয়ে যাচ্ছে কে অপরাধী সাজবে, কে শিকার আর কে গোয়েন্দা। আশি কি নব্বইয়ের দশকে যখন অপরাধসাহিত্যকে নতুন ছকে আনার প্রয়াস চলছে, অপরাধীর মনস্তত্ত্বকে আলাদা করে বোঝার একটা ঝোঁক দেখা দেয়। এমন এক মনস্তত্ত্ব, যা শুধু আরেক অপরাধীই বুঝতে পারে। অপরাধীর মাথার ভেতরে পৌঁছনোর এই ঝোঁক থেকেই টমাস হ্যারিস নিয়ে এসেছিলেন তাঁর অবিস্মরণীয় চরিত্র হ্যানিবাল লেখটারকে, রবার্ট গ্রেস্মিথের ‘জোডিয়াক কিলার’কে নকল করে বেরিয়েছিল অগুন্তি প্যাস্টিশ, ২০১৭-র অন্যতম হিট টিভি সিরিজ মাইন্ডহান্টারেও দেখি সত্তর দশকের আমেরিকান গোয়েন্দারা অপরাধীর মনস্তত্ত্ব বুঝতে আলাদা ক্রাইম ডিভিসনই খুলে ফেলছেন। কিন্তু শূন্যদশকপরবর্তী লেখকরা এই ডাইকোটমি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলেন। জটিল মনস্তত্ত্বের হদিশ তাঁদের লেখাতেও পাওয়া গেল, কিন্তু সে মনস্তত্ত্বের মালিকানা অপরাধীর একচেটিয়া নয়। দু’টি উদাহরণ দেওয়া যাক। শেষ পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকাশিত অপরাধসাহিত্যের তালিকায় ব্যবসায়িক সাফল্যের হিসাবে একদম প্রথমে থাকবে ‘গন গার্ল’ এবং ‘দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন’ উপন্যাস দু’টি। আটলান্টিকের দু’পার থেকে বই দুটি প্রকাশিত হয়, আমেরিকান লেখিকা গিলিয়ান ফ্লিনের বই ‘গন গার্ল’ বেরোয় ২০১২ সালে আর ব্রিটিশ লেখিকা পলা হকিন্স ‘দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন’ শেষ করেন ২০১৬ সালে। শিরোনাম থেকে শুরু করে মূল প্লট, লিঙ্গ রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দু’টি উপন্যাস নিয়েই প্রভূত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বই দুটি প্রকাশিত হওয়ার পর বহু নারীবাদী আপত্তি জানিয়েছিলেন শিরোনামে ‘গার্ল’ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে। তাঁদের বক্তব্য বই দুটির মূল চরিত্ররা প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা হলেও ‘গার্ল’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে তাঁদের অসহায়তাকে প্রকট করে তোলার জন্যই। যেহেতু দু’টি বইয়েই পারিবারিক হিংসা (ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স) একটি গুরুত্বপূর্ণ সাবপ্লট, আপাতদৃষ্টিতে এই অভিযোগটি যুক্তিসঙ্গত ঠেকতে পারে। অথচ বই দু’টি পড়তে গিয়ে অধিকাংশ পাঠক-সমালোচকই ধাক্কা খেয়েছেন মূল চরিত্রগুলিকে প্রত্যক্ষভাবে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সে অংশগ্রহণ করতে দেখে। নারী-পুরুষ, শোষিত-শোষক, শিকার-অপরাধী জাতীয় বৈপরীত্যগুলি দু’টি বইয়েই ঝাপসা হয়ে এসেছে। ‘গন গার্ল’-এ প্রোটাগনিস্টই অ্যান্টাগনিস্টে রূপান্তরিত হয়েছেন আর ‘দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন’-এ লেখিকা এক নির্দিষ্ট অপরাধীকে খাড়া করলেও, সারা উপন্যাস জুড়েই সেই অপরাধীর মনস্তত্ত্বের অবিকল প্রতিফলন দেখা গেছে তার ভিকটিমের মধ্যে। সত্যি কথা বলতে কী, এই মনস্তাত্ত্বিক সাযুজ্যটাই ‘দ্য গার্ল অন দ্য ট্রেন’ এর ইউ-এস-পি। অপরাধীর মোটিভটিই বরং দুর্বল। দু’টি বইয়ের মূল চারটি চরিত্রই আবার বাঁধা পড়েছে সেই নিঃসঙ্গতার সূত্রেও। দু’টি বইয়েই বার বার দেখা গেছে ভালোবাসাহীন কিন্তু লোকদেখানো সামাজিক সম্পর্ক নিঃসঙ্গতাবোধকে প্রকট করে তুলেছে ও লিঙ্গনির্বিশেষে জাগিয়ে তুলেছে অপরাধপ্রবণতা, এবং জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে অপরাধপ্রবণ মনের গলিঘুঁজি।
অপরাধসাহিত্যের আধুনিক বিনির্মাণে চারিত্রিক ত্রুটিবিচ্যুতি শুধু ভিকটিমেরই ঘটেনি, ঘটেছে গোয়েন্দারও। হয়ত সে কারণেই এককালের প্রবল জনপ্রিয় প্রাইভেট আর্মচেয়ার ডিটেকটিভদের আধুনিক গোয়েন্দা সাহিত্যে দূরবীন দিয়েই খুঁজে বেড়াতে হচ্ছে। তাঁদের ছেড়ে যাওয়া জায়গাটি ক্রমশই দখল করে নিচ্ছেন ক্রাইম ব্র্যাঞ্চের পেশাদার ডিটেকটিভরা যাঁদের লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার সুযোগ নেই। ফলত আধুনিক গোয়েন্দাদের চারিত্রিক ত্রুটিবিচ্যুতিগুলিও আদপেই নায়কসুলভ নয়। শার্লক হোমস কোকেন এবং মরফিন নিতেন, কিন্তু সে দোষকে পাঠকরা চারিত্রিক ত্রুটি হিসাবে দেখেন নি, দেখেছেন এক জিনিয়াসের খামখেয়ালিপনা হিসাবে। আজকের হ্যারি হুলারা কিন্তু এমনই ড্রাগ অ্যাডিক্ট যে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত হতে হয়, হারাতে হয় পরিবার পরিজনকে, এমনকি নিজেদের অঙ্গহানির আশঙ্কাও থেকে যায়। শ্যাম্পেন এবং ক্রিম ডি মন্থের প্রতি পয়ারোর দুর্বলতাকে আগের প্রজন্মের পাঠকরা বনেদিয়ানা বলেই দেখেছেন, কিন্তু হেনিং মানকেলের গোয়েন্দা কুর্ট ভ্যালান্ডারের অতি বড় ভক্তও জানেন যে আকণ্ঠ মদ্যপান ভ্যালান্ডারকে শুধু বিবাহবিচ্ছেদের দিকেই ঠেলে দেয়নি, তাঁর শারীরিক ও মানসিক দক্ষতাকেও নিঃশেষিত করেছে। হ্যারি হুলা বা কুর্ট ভ্যালান্ডারের মতন বহু আধুনিক গোয়েন্দাই তাঁদের দাম্পত্যজীবন টিঁকিয়ে রাখতে পারেন নি, এবং সে ব্যর্থতার পুরো দায়টাই চেপেছে নিঃসঙ্গ পুরুষগুলির ওপর। কিন্তু শুধু ড্রাগ-মদ-বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয় ত্রুটিবিচ্যুতিই নয়, অপরাধসাহিত্যের আধুনিক বিনির্মাণকে ত্বরান্বিত করতে ইয়ো নেসবো বা হেনিং মানকেলরা অতি মুন্সিয়ানার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন ‘মর্যাল ডিলেমা’, যে অন্তর্দ্বন্দ্বকে অতিক্রম করতে তাঁদের গোয়েন্দারা বারংবার ব্যর্থ হয়েছেন। বন্ধুবাৎসল্য বা অপত্যস্নেহের মাশুল দিতে হয়েছে দুর্নীতি আর যথেচ্ছাচারের সামনে নতজানু হয়ে, এবং প্রতিটি নীতিগত ব্যর্থতাই কেড়ে নিয়েছে মানুষগুলির জীবনীশক্তি। ভবিষ্যতের অপরাধের মুখোমুখি হতে হয়েছে স্রেফ অভ্যাসের বশে, নেহাতই জীবিকার খাতিরে, সামাজিক কোনোরকম তাগিদ সেখানে অনুপস্থিত। এবং প্রতিটি এনকাউন্টারই জাগিয়ে তুলেছে এক চিরন্তন প্রশ্ন – অপরাধী কে? আমাদের দৈনন্দিন অবিচার্য অপরাধের নিরিখে, দোষী ও নির্দোষের সমান্তরাল মনস্তত্ত্বের নিরিখে, ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতাবোধের নিরিখে এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সহজ কথা নয়।
শুনতে পাই মহৎ সাহিত্য সমাজের দর্পণ। চেনা মুখ, চেনা মুখোশগুলিকে ধীরে ধীরে অপরাধসাহিত্যের আঙ্গিনায় ভেসে উঠতে দেখে মনে হচ্ছে ‘এদিন যাবে’, ক্রাইম থ্রিলারকে সিরিয়াসলি নেওয়ার সময় এসেছে।