ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর যদি একটা সম্ভাব্য় ভারতীয় দল টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য় করা হয়, তাহলে দেখা যাবে দু-তিনটে জায়গা ছাড়া আলোচনার কোনও জায়গা নেই টিম নিয়ে। রোহিত শর্মা, কেএল রাহুল এবং বিরাট কোহলি প্রথম তিনে প্রায় নিশ্চিত।
শিখর ধাওয়ান বনাম কেএল রাহুল
শুধু একটা বিষয় বিচার্য শিখর ধাওয়ান যখন ফিট হয়ে যাবেন, তখন তাঁকে নিয়ে নির্বাচকদের চিন্তাধারা কতটা ইতিবাচক থাকবে। একদিকে অভিজ্ঞ ও বিস্ফোরক ব্য়াটসম্য়ান ধাওয়ান, অন্য়দিকে তরুণ ও প্রতিশ্রুতিবান কেএল রাহুল।
রাহুল শেষ পাঁচ ইনিংসের তিনটি ফিফটি ও একটিতে সেঞ্চুরি করেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নির্ণায়ক টি-২০ ম্য়াচে ৫৬ বলে ৯১ রানে ম্য়াচ জেতানো ইনিংস খেলেন। তারুণ্য় বনাম অভিজ্ঞতার মৃদু লড়াই থাকবে। তবে রাহুলের একটা বাড়তি উপকারিতা তার উইকেট কিপিংয়ের ক্ষমতা।
চার নম্বরে কে এগিয়ে?
চার নম্বরের জন্য় প্রতিযোগিতা চলবে শ্রেয়স আয়ার, সনজু স্য়ামসন ও মণীশ পাণ্ডের মধ্য়ে থাকবে। আয়ারই হয়তো প্রথম সুযোগ পাবেন। তারপর মণীশ। তবে সবটাই নির্ভর করছে তাঁদের আসন্ন আইপিএল ফর্মের ওপর।
ঋষভ পন্থের জায়গাটা কি নিশ্চিত? বিরাট কোহলির অত্য়ন্ত প্রিয় খেলোয়াড় (ছোট ফর্ম্য়াটে) পন্থ। অসম্ভব প্রতিভা সম্পন্ন পন্থ এখনও তাঁর প্রতিভার সুবিচার করেননি। এখানেই বারবার প্রশ্ন উঠে আসছে এমএস ধোনির ব্য়াপারে।
এমএস ধোনি বনাম ঋষভ পন্থ
ধোনিকে নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আমার। ধোনি কি আদৌ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট খেলতে ইচ্ছুক? তিনি কি ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা হারিয়েছেন? অপেক্ষা করছেন নতুন নির্বাচক কমিটির আগমনের?
এখনও পর্যন্ত ছোট ফর্ম্য়াটে পন্থকে দেখা গিয়েছে উইকেটকিপিং করতে। যদিও তিনি আন্তর্জাতিক আঙিনায় মূলত টেস্ট ক্রিকেটে ব্য়াটিংয়ে সফল (ইংল্য়ান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে শতরান)। তিনি একমাত্র ভারতীয় উইকেটকিপার-ব্য়াটসম্য়ান যাঁর এই কৃতিত্ব আছে। আইপিএলেও দিল্লি ক্য়াপিটালসের হয়ে তাঁর রেকর্ড ঈর্ষণীয়।
গতবছর পন্থ তাঁর দলকে বহু ম্য়াচ জিতিয়েছেন একক প্রচেষ্টায়। পন্থের কিপিংয়ের ধারাবাহিকতা নিয়ে একটা প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। ডিআরএস (অ্যাপিলেও) তথৈবচ। এইসব প্রসঙ্গ মাথায় রেখে যদি ধোনির রেকর্ড বিচার করা হয়, তাহলে প্রাক্তন ও দেশের অন্য়তম শ্রেষ্ঠ অধিনায়ক অনেক এগিয়ে।
কী ইঙ্গিত দিচ্ছেন ধোনি?
ধোনি বরাবরই স্বল্পবাক ও অন্তর্মুখী চরিত্র। 'কাজ বেশি, কথা কম', তাঁর দীক্ষামন্ত্র। কিপিং সচারচর করেন না। নেটে ব্য়াটিং খুবই কম, নকিংই বেশি। ওয়ার্ম-আপে ফুটবল আর নেটে তাঁর বোলিং অত্য়ন্ত প্রিয়।
সম্প্রতি এক ভিডিও ক্লিপে দেখা গেল ধোনির। ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট অ্য়াসোসিয়েশনে একটা অত্য়াধুনিক প্র্য়াকটিস করার জায়গা উদ্বোধন করতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু পুরো ক্রিকেট কিট নিয়েই হাজির ছিলেন সেখানে। নেটে বহুক্ষণ ব্য়াট করেন তিনি। লন্ডনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের পর ধোনিকে আর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে দেখা যায়নি। তাহলে মনোযোগ দিয়ে প্র্য়াকটিস করছেন কেন?
ধোনির চেহারা এখনও বেতের মতো ছিপছিপে। যে কোনও ছাব্বিশ বছরের ক্রিকেটারের সঙ্গে ফিটনেসে সমানে পাল্লা দিতে পারেন। একদিনের ক্রিকেটে, টি-২০ ফর্ম্য়াটে এবং আইপিএলে তাঁর রেকর্ড দুর্দান্ত। বিশ্ব ক্রিকেটে যে তিনি অন্য়তম ফিনিশার তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্রিকেটীয় মস্তিষ্ক সোনা দিয়ে মোড়ানো।
ধোনির যা ছিলেন, যা হয়েছেন
যদিও পন্থের এই ফর্ম চলতে থাকে তাহলে সনডু-রাহুলদের গ্লাভ হাতে দেখে নিতে চাইবেন নির্বাচকরা ও দলের থিঙ্ক ট্য়াঙ্ক। ধোনির সবই ইতিবাচক দিক। যদি নেতিবাচক কিছু বলতেও হয়, তাহলে বলব তিনি অতীতে ব্য়াট করতে নেমে যে সংহার মূর্তি ধারন করতেন, সেটা এখন দেখা যায় না। সেট হতে কিছুটা সময় নেন তিনি। তারপর হাত খোলেন।
রিফ্লেক্স ও হাত-চোখের সংযোগ কিছুটা কমেছে। কিন্তু উইকেটে যদি সেট হয়ে গিয়ে টিকে যান তাহলে তাবড় তাবড় বোলারদের বিরুদ্ধে ব্য়াট শাসন করবেন। রানরেটকে তোয়াক্কা না-করে ম্য়াচ ফিনিশ করে আসবেন নিয়মমাফিক ভাবে। ধোনি ভাবেন না যে বাড়তি কিছু করছেন না।
হয়তো নির্বাচক ও থিঙ্ক ট্যাঙ্কের অঙ্কের মধ্য়েই নেই ধোনি। হতে পারে আর ব্য়াটই ধরলেন না কোনওদিন। দু'বারের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ককে হয়তো চিরতরে হারিয়েছি।
স্মৃতিতে ভাস্বর হয়ে রয়েছেন ধোনি
ডিআরএস (ধোনি রিভিউ সিস্টেম), উইকেট কিপিংয়ের ব্য়াক-ফ্লিপ, বা গ্লাভস ছাড়া কিপিং করে আউট করা। টি-২০ বিশ্বকাপের শেষ ওভারে যোগিন্দর শর্মার হাতে বল তুলে দিয়ে ফর্মে থাকা পাক অধিনায়ক মিসবা-উল-হককে আউট করা, যুবরাজ সিংকে না-নামিয়ে নিজে নেমে ৭৯ বলে অপরাজিত ৯১ রান করে শেষ শটে ছক্কা মেরে ১৯৮৩-র পর দেশকে বিশ্বকাপ জেতানো। এসবই আমাদের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে।
ধোনি যদি খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তাহলে দেখার কারা তাঁকে আটকায় বা বাদ দেয়! বিশ্ববন্দিত অধিনায়কদের সবসময় একটা 'লাকফ্য়াক্টর' কাজ করে। এটা অদৃশ্য় ভাবে কাজ করেছে তাবড় তাবড় অধিনায়কদের মধ্য়ে। আমার দেখা ক্লাইভ লয়েড থেকে বিরাট কোহলি অবধি।
কাকতালীয় ভাবে যদি এমএস ধোনির আবার আর্বিভাব হয় ভারতীয় ক্রিকেটে, এবং টি-২০ বিশ্বকাপে তাঁর হাতেই উইনিং রানটা আসে তাহলে ধোনির স্বপ্নের বিদায় হবে ক্রিকেট থেকে। আমরা শুধু তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করব এই সব মুহূর্ত। আর বলব সবই ভবিতব্য়।
শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে