Advertisment

বাইশ গজের 'স্টোরিজ অফ কামব্য়াক'

মোহিন্দর অমরনাথ থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়, স্টিভ স্মিথ হয়ে ডেভিড ওয়ার্নার। বাইশ গজের সফল প্রত্য়াবর্তনের ওপর আলোকপাত করলেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্য়ায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
stories of comeback in 22 yards by saradindu mukherjee in his cricket column

বাইশ গজের 'স্টোরিজ অফ কামব্য়াক' (অলঙ্করণ-অভিজিত বিশ্বাস)

সাম্প্রতিক কালে ক্রিকেটে অদ্ভূত ভাবে 'কামব্য়াক' অর্থাৎ প্রত্য়াবর্তন করে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়েছেন কিছু মহান ক্রিকেটার। মোহিন্দর অমরনাথ থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায়। স্টিভ স্মিথ হয়ে ডেভিড ওয়ার্নার। আসুন দেখা যাক কেমন ছিল তাঁদের ফেরার রাস্তাটা।

Advertisment

কী করে ভোলা যাবে মোহিন্দর অমরনাথের কথা ?

স্মৃতির অন্তরালে চলে যাওয়া মহিন্দর (জিমি) অমরনাথকে নিশ্চই মনে আছে আপনাদের। ১৯৬৯ সালে টেস্ট অভিষেক করেন। কেরিয়ারের শেষ টেস্ট খেলেন ১৯৮৮ সালে। ১৯ বছরের টেস্ট কেরিয়ারে অমরনাথ অগুন্তিবার দল থেকে বাদ পড়েছেন। তাঁর প্রত্য়াবর্তন নিয়ে অনায়াসে লোকগাথা লেখা হয়ে যেতে পারে।

বোলিং অলরাউন্ডার হিসাবে তাঁর টেস্ট জীবনের যাত্রা শুরু। পরে অমানুষিক পরিশ্রমে হয়ে উঠলেন দ্রুত গতির বোলিংয়ের বিরুদ্ধে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্য়াটসম্য়ান। কিংবদন্তি ব্যাটসম্য়ান সুনীল গাভাস্কর তাঁর 'আইডলস' বইতে লিখেছেন এমনটাই। দোর্দণ্ডপ্রতাপ পাকিস্তানের অধিনায়ক ইমরান খান তাঁর 'অলরাউন্ড ভিউ' বইতে লিখেছেন, ১৯৮২-৮৩ সালে তাঁর দেখা জোরে বোলিংয়ের বিরুদ্ধে শ্রেষ্ঠ ব্য়াটসম্য়ান অমরনাথই। এই নিয়ে ইমরানের কোনও সন্দেহ নেই।

সেই সময় ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজে ফাস্ট বোলার ছিলেন রবার্টস-হোল্ডিং-মার্শাল-গার্নার। ওদিকে পাকিস্তানের ইমরান খান, সরফরাজ নওয়াজ, সিকন্দর বখত। তাঁদের আগুন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে সাবলীল খেলেছিলেন অমরনাথ। তাঁর টেকনিক, ফুটওয়ার্ক, স্ট্রোক প্লে ও সর্বোপরি সাহসিকতার মেলবন্ধনে এক দুর্দান্ত লড়াই দেখার সৌভাগ্য় হয়েছিল আমাদের।

অস্ট্রেলিয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক গিডিয়ন হেগ লিখেছিলেন, তখন বাউন্সার দেওয়ার কোনও সীমা ছিল না। অমরনাথ হুক করতে কসুর করতেন না। অবশ্য রান যেমন করেছেন, মাশুলও দিয়েছেন তেমনি। স্য়ার রিচার্ড হ্য়াডলি অমরনাথের খুলি ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। ইমরান খান অমরনাথকে অজ্ঞান করে দেন। ম্য়ালকম মার্শাল তাঁর দাঁত ফেলে দিয়েছিলেন।

সেসময় পৃথিবীর দ্রুততম উইকেট ছিল পার্থ। জেফ টমসন এত জোরে অমরনাথকে বাউন্সার দিয়েছিলেন যে, বল চোয়ালে লাগার পর লাঞ্চে অমরনাথকে শুধু আইসক্রিম খেতে হয়েছিল। মাইকেল হোল্ডিং বলেছিলেন অমরনাথকে সকলের থেকে আলাদা করেছিল তাঁর ব্য়থা সহ্য় করার ক্ষমতা। এহেন অমরানথকে ১৯৬৯-এর পর ১৯৭৫ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল পরের টেস্ট খেলার জন্য।

১৯৮৩ বিশ্বকাপে অমরনাথ সেমিফাইনাল ও ফাইনালে ম্য়ান অফ দ্য় ম্য়াচ হন। দেশকে প্রথম বিশ্বকাপ জিততে সাহায্য় করেন। এরপর ৮৩-৮৪ সালে তাঁর রানের খরা চলে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। ০-০-০-১-০-০ ছিল তাঁর স্কোর। স্বভাবতই বাদ যান জিমি। স্বমহিমায় আবার ফিরেও আসেন তিনি। ১৯৮৮ সালে অমরনাথ খেলেন চির প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তারপরেই করেন সেই প্রবাদপ্রতিম উক্তি, "Selectors are a bunch of jokers"। এরপরেই ক্রিকেট থেকে চিরতরে হারিয়ে যান 'কামব্য়াক ম্য়ান'।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায় কিন্তু শুরুতেই ব্য়র্থ হন

সৌরভ চণ্ডীদাস গাঙ্গুলির প্রথম ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে আবির্ভাব হয় ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া ট্যুরে। সিরিজে উনি একটিই ম্য়াচ খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। ম্য়ালকম মার্শালের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান মাত্র তিন রান করে। এরপর টিম থেকে বাদ পড়েন তিনি।

ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করে সৌরভ স্বপ্নের প্রত্য়াবর্তন করেন ১৯৯৬ সালে লর্ডসে। ওই ইংল্য়ান্ড ট্য়ুরে জীবনের প্রথম টেস্ট খেলার আগে একটি ওডিআই খেলেছিলেন, ৪০-এর মতো রান করে গ্রাহাম থর্পের বলে আউট হন। ডাউন দ্য় লেগসাইড স্টাম্প করেন তখনকার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উইকেটকিপার জ্য়াক রাসেল। ওই ৪০ রান করে সৌরভ কিন্তু ভারতীয় থিঙ্কট্য়াঙ্ককে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ফর্মে আছেন।

নভজ্যোত সিং সিধু ওই ট্যুরের মাঝপথে অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিনের সঙ্গে মনোমালিন্য়ে জড়িয়ে ভারতে ফিরে আসেন। এই সুবর্ণ সুযোগ সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগান সৌরভ। এরপরের ইতিহাস সবার জানা। লর্ডসে অভিষেক টেস্টে ঝকঝকে ১৩৩ ও ট্রেন্ট ব্রিজে অবিশ্বাস্য় ১৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। নাক উঁচু জিওফ্রে বয়কট আদর করে সৌরভের নাম দিলেন 'প্রিন্স অফ ক্য়ালকাটা'। সুনীল গাভাস্কর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন সৌরভের। এরপর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

২০০৩ সালে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার পরেও সৌরভকে দল থেকে বাদ পড়তে হয় কোচ গ্রেগ চ্য়াপেলের সঙ্গে মতের অমিলের জন্য়। আবার চলে অপরিসীম পরিশ্রম। নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্য়ান দিলীপ বেঙ্গসরকার তাঁকে ফিরিয়ে আনেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। পেস সহায়ক উইকেটে মাথায়-বুকে বল লাগলেও একটি অনবদ্য় অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন সৌরভ। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপের দলে ফের সৌরভ জায়গা করে নেন।

বারবার দল থেকে বাদ পড়েও ফিরে আসতে গেলে অসাধারণ পারফরম্য়ান্স দেখাতে হয়। দৃঢ় মানসিকতা ও সফল হওয়ার অদম্য় ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন। সৌরভ প্রমাণ করেছিলেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়। নতুন প্রজন্মের কাছে হার না-মেনে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে যান তিনি।

কী অসাধারণ ভাবেই না ফিরলেন স্মিথ-ওয়ার্নার!

আমরা গত অ্যাশেজ সিরিজে দেখলাম স্টিভ স্মিথের দুর্দান্ত প্রত্য়াবর্তন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এক বছর নির্বাসিত থাকার পরেও কী দুর্দান্ত ভাবে ফিরে এলেন তিনি। ১১০-এর ওপর গড়ে ৭৭৪ রান করলেন।

অন্য়দিকে এক বছর নির্বাসনে থাকা দিকপাল ক্রিকেটার ডেভিড ওয়ার্নার চূড়ান্ত ব্য়র্থ। ১০টি ইনিংসে ৯০ রান করেন তিনি নয়ের গড়ে।

একদিকে যখন দর্শক-ফ্য়ানেরা স্মিথকে মাথায় নিয়ে নাচছেন, অপরদিকে সমালোচনায় অপমানে জর্জরিত ওয়ার্নার। রাগে-দুঃখে অপমানে, চোখের জলে ফিরে গেলেন নেটে।

শুরু হল নিরলস পরিশ্রম ও স্বমহিমায় ফিরে আসার প্রসত্তুি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ব্রিসবেনে করলেন ১৫৪ রান। অ্যাডিলেডে পিঙ্ক বলে ৩৩৫ রানের অপরাজিত চান্সলেস চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইন যদি ইনিংস ডিক্লেয়ার না করতেন তাহলে ব্রায়ান লারার অপরাজিত ৪০১ রানের রেকর্ড ভাঙলেও ভাঙতে পারত। পরিভাষায় বলা হয়, 'ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট'। ওয়ার্নারের প্রত্য়াবর্তন বোধহয় সমালোচকদের সেই বার্তাই দেয় ফের।

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে

Steve Smith David Warner Sourav Ganguly Cricket Kahon
Advertisment