মানুষ মৃত্যুকে বড় ভয় পায়… সব প্রাণীর মতোই, আবার অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে বেশি। সম্ভাব্য মৃত্যুর আগমন-মুহূর্তে পালিয়ে বা লড়াই করে বেঁচে থাকার চেষ্টা জীবমাত্রেরই প্রতিবর্ত প্রেরণা। অবচেতনের এই মৃত্যুভয় জীবের সহজাত, কিন্তু ভয়ের মুহূর্ত ব্যতীত অন্য সময়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা সচেতনভাবে মনে রাখা, তাকে নিয়ে চিন্তা করা, সম্ভবত মানুষের একক যন্ত্রণা। মৃত্যুর নিশ্চয়তা মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে নানাভাবে। সাহিত্যে, দর্শনেও তার ছাপ।
সেই মানুষই আবার মৃত্যুকে বেছে নেয়, অকালে। ডেকে নেয় অনাগত মৃত্যুকে। মানুষই তো সচেতন বিশ্লেষণে মৃত্যুর অস্তিত্বকে স্পষ্টভাবে জানে, অথচ তার পরবর্তী কিছুর অস্তিত্বের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। মৃত্যু তাই মানুষের চোখে ব্যক্তিগত সময়ের সমাপ্তি, ভালো-মন্দ সবকিছুর অবসান। আনন্দ, প্রিয়জন-সান্নিধ্য, জীবনভোগের অবসান হিসেবে তা যেমন ভীতিপ্রদ, তেমনই চরম দুঃখ-যন্ত্রণা বা হতাশা-ব্যর্থতার মুহূর্তে তাকে মনে হতে পারে কষ্টের উপশম। দারুণ সিদ্ধান্তহীনতার মুহূর্তেও মনে হতে পারে মৃত্যুই সমস্যার সহজ সমাধান। মানুষের এ এক অভূতপূর্ব সংকট। যে প্রাণী মৃত্যুকে মানুষের মতো করে চেনে না, সে সংকটের মুহূর্তে জীবনের মধ্যেই অন্যতর সমাধান খুঁজত। মানবজীবনের অর্থ বা অর্থহীনতার সঙ্গে আত্মহনন নিবিড়ভাবে জড়িত।
কামু বলেছিলেন, দার্শনিকের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদি কিছু থাকে, তবে তা আত্মহত্যা। সেই দার্শনিকতা আমাদের বর্তমান আলোচনার পরিসরের বাইরে। সাধারণ সমাজকর্মী বা স্বাস্থ্যকর্মীদের চোখেও আত্মহত্যা এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আত্মহত্যার কাব্যিক, দার্শনিক, ধর্মীয় বা সামাজিক ব্যাখ্যা যাই হোক না কেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে এ একধরণের প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যু। তাকে আটকানোর চেষ্টা অবশ্যই করা উচিত। মৃত্যুর হারও নগণ্য নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে প্রতি বছর আট লক্ষ মানুষ আত্মহত্যায় প্রাণ দিচ্ছেন। অর্থাৎ প্রতি চল্লিশ সেকেন্ডে একজন নিজের হাতে খুন হচ্ছেন। যতজন এভাবে মারা যাচ্ছেন, তার কুড়ি গুণ মানুষ আসলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী। তার মানে প্রতি দুই সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন। যখন এই লেখাটি লিখছি, তখন আমাদের আশেপাশেই অজস্র সহনাগরিক আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, পরিকল্পনা করছেন, জোগাড়যন্ত্র করছেন, এমনকি চেষ্টাও। কাল সকালে যাঁদের মৃত্যু সংবাদ পাওয়া যাবে, তাঁদের মধ্যে কেউ হয়ত আমার বা আপনার বন্ধু বা আত্মীয়।
আরও পড়ুন, প্রতি সেকেন্ডে ৪০ জন আত্মহত্যা করছেন, কী ব্যাখ্যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার?
বস্তুত এমন পৃথিবীতে, এমন সময়ে বাস করছি আমরা, যা অনেককেই আত্মহত্যায় প্ররোচিত করছে। সমস্যা গভীর। এই বছরের মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের থিম তাই ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ। নিজের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানো। একটু তলিয়ে ভাবলে অবশ্য অনুভূত হবে অন্য মানুষ বা সমাজ, রাষ্ট্র, পরিস্থিতির চাপ ইত্যাদি থেকে বাঁচানো, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ানো, তথা লড়াইয়ের সময়ে তাঁদের পাশে থাকার প্রয়োজন। পার্থিব শরীরে শেষ আঘাতটি করেন আত্মহত্যাকারী নিজেই, কিন্তু তিলে তিলে অথবা সহসা ঝটকায় তাঁর বাঁচার ক্ষমতাকে মেরে ফেলে পরিস্থিতি।
আত্মহত্যা রুখতে গেলে বোঝা প্রয়োজন মানুষ আত্মহত্যা করে কেন? আত্মহত্যার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা বা রোগকে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় অবসাদ (ডিপ্রেশন), অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি বেশ কিছু অবস্থার নাম। এদের কখন রোগ বলা যায় আর কখন রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক। সেই জটিলতা এড়িয়ে, অসুখ বলে দাগিয়ে দেবার চেষ্টা ছেড়ে বরং অ-সুখ, অর্থাৎ কষ্টটুকুকে সহমর্মিতার সঙ্গে বোঝার চেষ্টা করা দরকার। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সেটাই প্রথম ধাপ। মনে রাখা প্রয়োজন, মানসিক সমস্যায় ক্লিষ্ট মানুষটির প্রতি সমানুভূতি বা সহানুভূতিশীল হবার জন্য রোগ নির্দিষ্ট করা জরুরি নয়, বরং মনোরোগীর তকমা এবং তার সঙ্গে জড়িত সামাজিক অপবাদ কাউকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আবার চরম শারীরিক যন্ত্রণা বা নিরাময়ের অযোগ্য কঠিন শারীরিক ব্যাধির কারণেও কেউ আত্মহত্যা করতে পারেন।
আত্মহত্যা কিছুটা ছোঁয়াচেও বটে, যদিও জীবাণুঘটিত রোগ নয়। কেউ আত্মহত্যা করলে তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিসরে অন্যদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়ে যায়। স্কুল বা সেনাবাহিনীর মতো গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। অবশ্য প্রথম আত্মহত্যাটির ফলেই পরেরগুলো হল, নাকি নিহত সকলেই একই পরিবেশে একইরকম চাপে ছিল বলে বাঁচার পথ পায়নি, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি আত্মহত্যা করলে বা গণমাধ্যমে আত্মহত্যার দৃশ্য বা বিবরণ দেখলেও আত্মহত্যার চেষ্টা করার সম্ভাবনা বাড়ে। গবেষকেরা একে "suicide contagion" বলে থাকেন। এতে মনে হয়, নির্দিষ্ট শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক কারণে কোনো মানুষ যখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন, তখন একটি আত্মহত্যার ঘটনা তাঁর সামনে মডেল হয়ে উঠতে পারে এবং তিনি সেই পথটিই বেছে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন, দরিদ্র অর্থনীতি- নোবেল লরিয়েটদের বই ও দারিদ্র্য দূরীকরণের নয়া দিগন্ত
আত্মহত্যাকারীদের বয়স অনুসারে আত্মহত্যার কারণ আলাদা হয়। আবার দেশকাল ভেদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আত্মহত্যাকারীর বয়স আলাদা হয়। এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা এখানে সম্ভব নয়, কিন্তু কয়েকটি তথ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। বেশিরভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে দরিদ্র বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এর মধ্যে ইউরোপের পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর মানুষদের আত্মঘাতী হবার সম্ভাবনা প্রবল। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বাব্যাপী আত্মহত্যার ৭৯% ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে। উন্নত দেশগুলিতে বর্ষীয়ান নাগরিকদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। কোথাও অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকেরা অর্থনৈতিক সমস্যায়, একাকীত্বে বা শারীরিক কারণে জীবনের মান খারাপ হওয়ায় আত্মহত্যা করেন। অনেক জায়গায় আবার মধ্যবয়সে (৪৫ থেকে ৫৪ বছর) আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। এই বয়সে পরিবারে ও কর্মজগতে বেশ কিছু অনিশ্চয়তা তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকে। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলিতে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা সর্বাধিক। চরম অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং জীবনের দিশাহীনতা সম্ভবত এর জন্য দায়ী। ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সের কিশোর-তরুণদের (নারী-পুরুষ মিলিয়ে) মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হল আত্মহত্যা। (প্রথম স্থানে আছে সড়ক দুর্ঘটনা।) অল্পবয়সীদের মধ্যে এই ব্যাপক সংখ্যক আত্মহত্যা বিরাট দুশ্চিন্তার কারণ। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট যত বাড়ছে, এই সংকটও ততই বাড়ছে।
এই তথ্যগুলো থেকে একথাও প্রমাণিত হয় যে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে সামাজিক বা অর্থনৈতিক বাস্তবতাগুলির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ নানাবিধ মানসিক ব্যাধি আত্মহননের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলেও একমাত্র কারণ কখনোই নয়। অতএব শুধুমাত্র মনোরোগ চিকিৎসার ওষুধ প্রয়োগ করে সব আত্মহত্যা প্রতিরোধ করার ভাবনা অবৈজ্ঞানিক। মধ্য যৌবনে চাকরি হারিয়ে সপরিবারে পথে বসতে চলেছেন যিনি, যৌবনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে কর্মজগতের ভয়াবহ সংকট দেখে সহসা স্তম্ভিত যে সদ্য আঠারো-উনিশ, চল্লিশ বছর বয়সে যে নাগরিক সহসা আবিষ্কার করলেন যে তিনি আর নিজের জন্মভূমির বৈধ নাগরিক নন, অর্থাৎ এই দুনিয়ায় তাঁর কোনো দেশ নেই… তাঁদের সমস্যা গোড়া থেকে সারাতে পারে কোন ওষুধ? যে মেয়েটির শ্বশুরবাড়ি পণের দাবিতে অথবা বংশমর্যাদার অহংকারে নিয়ত অপমান অত্যাচারে তাকে ঠেলে দিচ্ছে আত্মহননের দিকে, তাঁকে বাঁচাতে গেলে শুধু তাঁর চিকিৎসাই কি যথেষ্ট? নাকি আরো বেশি করে চিকিৎসা প্রয়োজন সেই শ্বশুরালয়ের আদি বাসিন্দাদের? সেই চিকিৎসা কি ওষুধ না সুশিক্ষা? চিকিৎসা করবেন কি চিকিৎসক একা, নাকি আমি-আপনি সকলে মিলে?
বৃহৎ ও ক্ষুদ্র পরিসরে বহু মানুষের আত্মহত্যা রুখতে গেলে, অতএব, দীর্ঘ ও আন্তরিক সামাজিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অত্যাবশ্যক। কীভাবে সে পথে আমরা এগোতে পারি, তা স্বতন্ত্র আলোচনার বিষয়। কিন্তু প্যারাসিটামল দিয়ে যেমন জ্বর কমানো হয়, জ্বরের কারণটিকে সারানোর আগে, তেমনিভাবে নিজের আশেপাশে ব্যক্তি মানুষকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ছোট ছোট কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারি আমরা। নিজের পরিচিত পরিজনদের আরেকটু সময় দিতে পারি আমরা। স্মার্ট ফোন থেকে মুখ তুলে পাশের মানুষটিকে দেখতে পারি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারি। শুধুমাত্র এটুকুতেই অনেককিছু হওয়া সম্ভব।
আপনার ঘনিষ্ঠ মহলে কি এমন কেউ আছেন, যাঁকে ইদানিং বা বহুদিন ধরে দুঃখী মনে হয়? এমন কেউ যিনি মাত্রাতিরিক্ত আতঙ্ক বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত? অসম্ভব একলা কোনো মানুষ? অথবা কেউ ক্রমশ নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন? ভয়ানক শারীরিক যন্ত্রণা বা দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন কেউ? কর্মহীনতা, কর্মচ্যুতি বা ব্যর্থতার গ্লানিতে ভুগছেন কেউ? অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা সামলাতে পারছেন না? নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন কোনো পরিচিত? কেউ কি মনে করছেন যে তিনি অপ্রয়োজনীয়, অন্যদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে গেছেন? মরে যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করছেন কেউ? অন্য মানুষের জন্য নিজের চোখ, কান আর মন খোলা রাখলে সহজেই এঁদের খুঁজে পাবেন। নিজের উদ্যোগে কথা বলুন এঁদের সঙ্গে। সরাসরি বলুন।
এই সিরিজের সব লেখা একসঙ্গে পড়তে ক্লিক করুন এই লিংকে
দু'একটা ভ্রান্ত ধারণা দূর করা প্রয়োজন। অনেকে মনে করেন, যাঁরা আত্মহত্যার কথা বলেন, তাঁরা আদতে তা করে উঠতে পারেন না। আবার অনেকে মনে করেন, বিষাদগ্রস্ত মানুষকে জিজ্ঞেস করতে নেই আত্মহত্যার কথা ভাবছেন কিনা, কারণ তাতে নাকি আত্মহত্যার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দুটো ধারণাই ভুল। কেউ আত্মহত্যার কথা বললে, গুরুত্ব দিন। তাঁর নিরাপত্তা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সাধ্যমতো উদ্যোগী হোন। পরিচিত কারো মধ্যে আত্মহত্যার ঝুঁকিগুলোর কোনোটা খুঁজে পেলে তাঁর সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজনে সরাসরি আত্মহত্যার প্রসঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। ধাপেধাপে এগোনো যায় আলোচনা। খুব হতাশ লাগছে কি? খুব অবসাদ বোধ হয়? নিজের ওপর রাগ হয় বা চারপাশের সবার ওপর, অথবা বিশেষ কারো ওপর? নিজের ক্ষতি করতে ইচ্ছে করে? মরে যেতে ইচ্ছে হয় কখনও? আত্মহত্যার কথা কি মনে এসেছে? আত্মহত্যার কোনো পদ্ধতিও ভেবেছেন নাকি কখনও? এভাবে এগিয়ে বিষয়টিকে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করে চিকিৎসার ব্যাপারে তৎপর হওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি নিয়মিত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, কিন্তু সমালোচনা না করা… সহমর্মিতা প্রদর্শন করা, কিন্তু অনুকম্পা না দেখানো… এগুলোও জরুরি।
আত্মহত্যা সংক্রান্ত আইনের ইতিহাস কিছুটা বিচিত্র। আব্রাহামিক ধর্মে প্রাণ হল পবিত্র, যে কারণে তাঁরা গর্ভপাতেরও বিরোধিতা করে থাকেন (যদিও ধর্মযুদ্ধে বহু নরহত্যা করেছেন)। একই ধর্মীয় যুক্তিতে তাঁরা মনে করেন আত্মহত্যা হল ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপরাধ। এই কারণে পাশ্চাত্য আইনে আত্মহত্যার চেষ্টা ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ব্রিটিশ ঐতিহ্যের ভারতীয় পিনাল কোডেও তাই ছিল। ক্রমশ সকলে বুঝলেন যে আত্মহননশীল মানুষকে ক্রিমিনাল তকমা দেবার মধ্যে আছে নিদারুণ নিষ্ঠুরতা। মনোরোগ চিকিৎসক ও সমাজকর্মীদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় ভারতীয় দণ্ডবিধি এক্ষেত্রে নিজের অবস্থান বদলেছে। আত্মঘাতী মানুষকে আর অপরাধী বলা হচ্ছে না। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, যে মানুষ আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে চলেছেন, তাঁকে অবজ্ঞা করা, তাঁকে নিয়ে পরিহাস করা নৈতিক অপরাধ। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া আইনের চোখেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেই অপরাধ কোনো ব্যক্তি করলে যেমন তিনি দোষী, তেমনই কোনো অমানবিক সমাজ বা রাষ্ট্র করলেও সেই অপরাধের বিচার হওয়া উচিত। হাজার হাজার চাষির আত্মহত্যা, নাগরিকত্ব হারানোর ভয়ে সাধারণ মানুষের আত্মহত্যা… এসবই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্ররোচনার ফল। আত্মহত্যা প্রতিরোধ করার শপথ নিলে এই সব আত্মহত্যা রুখে দেবার শপথও নিতে হবে।