সোমবার যখন সুপ্রিম কোর্টের বিদায়ী প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র রাজধানীতে তাঁর বিদায়ভাষণ দিচ্ছেন, তখনই দিল্লি হাইকোর্ট মানবাধিকারকর্মী গৌতম নওলাখাকে শীর্ষ আদালতের সাম্প্রতিক রায়ে চার-সপ্তাহের গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি দিল। আপাতভাবে মনে হতে পারে, বিষয়টি হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দ্বন্দ্বের ফল। যেন, শীর্ষ আদালতের রায় খারিজ করে গৌতমকে মুক্তি দিল হাইকোর্ট। অন্তত, পুণে পুলিশ ও মহারাষ্ট্র সরকারের আইনজীবীর ধারণা ছিল তেমনই। কিন্তু, আইন যে কখনও সোনার পিতলমূর্তির আরাধনা করে না, তা বুঝিয়ে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি এস মুরলিধর ও বিচারপতি বিনোদ গোয়েলের বিশেষ বেঞ্চ। তাঁরা রাজ্য সরকার ও পুলিশকে জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়টি তাঁরা মন দিয়ে পড়েননি। সেই রায়েই গৌতমের মুক্তির রুপালি রেখাটি আঁকা আছে। কেননা, শীর্ষ আদালত স্পষ্টই জানিয়েছে, চার-সপ্তাহের মধ্যে গৃহবন্দিরা নিজেদের মুশকিল আসানের (রেমিডি) জন্য নিম্ন আদালতের শরণাপন্ন হতে পারবেন। গৌতম তা-ই করেছেন। দিল্লির নগর-দায়রা আদালতের রায়কে ‘বাতিলযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে তা খারিজ করেছেন বিচারপতিরা। এই রায়ের ভিত্তিতে অন্য চার-গৃহবন্দি মানবাধিকারকর্মী ভারাভারা রাও, সুধা ভরদ্বাজ, ভেরনন গঞ্জালবেস ও অরুণ ফেরেইরার মুক্তিও এখন সময়ের অপেক্ষা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শাসকদলে যে-উল্লাস দেখা গিয়েছিল, তা এখন অনেকটাই ম্লান হয়ে যাবে। এই রায় নতুন করে বুঝিয়ে দিয়েছে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আদালতই ভরসা দেশের।
তাহলে কি আইনসভাকে ছাপিয়ে বিচারসভাই শেষকথা বলবে। সংসদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে সুপ্রিম কোর্ট। গত-পক্ষকালে বিভিন্ন জনস্বার্থজড়িত মামলার রায়ে তেমন মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আবেদনের গুরুত্ব বুঝেই মামলাগুলি গ্রহণ করেছে শীর্ষ আদালত। কিন্তু, লক্ষণীয়, প্রতিটি মামলার অভিমুখ ছিল কেন্দ্র। বেশির ভাগ মামলায়ই বিচারপতিরা আপাতভাবে রায় দিয়েছেন শাসকের বিরুদ্ধেই। তা নিয়ে বিরোধীরা উল্লসিত হলেও, দুটি গুরুতর মামলায় আপাতভাবে জয়ী হয়েছে শাসকগোষ্ঠী, যা সাধারণভাবে দেশের পক্ষে মোটেই কল্যাণকর নয়।
বাবরি মসজিদ মামলায় আদালত জানিয়ে দিয়েছে, কোনও জনগোষ্ঠীর ধর্মাচরণের জন্য মসজিদ কখনও অপরিহার্য নয়। এর ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের জমি-অধিগ্রহণে সরকারের সামনে আর-কোনও বাধা থাকল না। লোকসভা নির্বাচনের আগে হিন্দুত্ববাদী শাসকদল ও সরকারের পক্ষে বাবরি মসজিদের জমিতে রামমন্দিরের অন্তত ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ভোট-বৈতরণীপারের সম্ভাবনা কিছুটা সহজ হয়ে গেল। কিন্তু, এখানেও প্রশ্ন উঠতে পারে, মসজিদ অপরিহার্য না-হলে বিতর্কিত স্থানে মন্দিরও অপরিহার্য কি না।
একইভাবে মহারাষ্ট্রের ভীমা-কোরেগাঁওয়ে দলিতদের দ্বিশতবার্ষিক বিজয়োৎসবে সনাতন সংস্থার হামলায় দু-জনের মৃত্যুর ঘটনায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একযোগে যে-পাঁচজন মানবাধিকারকর্মীকে পুণে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল, সেই গ্রেফতারের বিরুদ্ধাচরণ করেনি শীর্ষ আদালত। মামলার এফআইআরে যাদের নাম ছিল, তাদের বদলে ওই পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে প্ররোচনার অভিযোগে। তাঁদের একজনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার প্রমাণবিহীন মারাত্মক অভিযোগও করা হয়। তবু, আদালত সেই মানবাধিকারকর্মীদের ক্লিনচিট না-দিয়ে, অভিযোগের তদন্তের জন্য আদালতের নজরদারিতে বিশেষ-তদন্তকারী দলগঠনের আবেদনও নস্যাৎ করেছে। তদন্তের ভার পুণে পুলিশের হাতে রেখে অভিযুক্তদের আগের মতোই গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই রায়ের বিপরীত সূত্রেই মুক্ত হলেন গৌতম নওলাখা।
অন্যান্য মামলাগুলির গুরুত্বও কম ছিল না। যেমন, সুপ্রিম কোর্ট তৃতীয়-লিঙ্গের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে সমপ্রেমের স্বীকৃতি দিয়েছে। মান্ধাতার আইনে এতকাল সমপ্রেম ছিল অপরাধমূলক। আইনের সেই কলঙ্কজনক ৩৭৭-ধারাটির বিলোপ ঘটিয়েছে আদালত। গেরুয়াবাদীরা এতদিন প্রকাশ্যেই এই ধারার সহায়তায় সমপ্রেমীদের প্রতি ছিল খড়্গহস্ত। অথচ, ভারতীয় সংস্কৃতি, মনস্তত্ত্ব ও শারীরবিদ্যা বিষয়টিকে প্রথমাবধিই মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা রূপেই গণ্য করেছে। যে-সঙ্ঘীরা সবক্ষেত্রেই বেদ ও মহাভারতের ভ্রান্ত-উদাহরণ দেয়, সেই মহাভারতেই আমরা অর্জুনের নারীরূপে কৃষ্ণবিলাস ও মোহিনীরূপে কৃষ্ণের ইরাবানসন্তুষ্টির বর্ণনা যেমন পাই, তেমনই ঋগ্বেদের বর্ণনায় দেখা যায়, স্ত্রীবাচক দুটি অরণির (যজ্ঞকাঠ) ঘর্ষণেই জন্ম হয়েছে অগ্নির। অর্থাৎ, অগ্নিদেবের জন্ম পিতৃত্বহারা, তাঁর জন্ম দুই নারীর প্রতীকী-প্রণয়েই। খাজুরাহ বা কোনার্ক মন্দিরের সমপ্রেমের ভাস্কর্য আজও সমুজ্জ্বল। কিন্তু, এ-সব কে বোঝাবে ধর্মান্ধদের। ধর্মীয় মৌলবাদী ও আধিপত্যপন্থীদের প্রধান প্রবণতাই হল, জগৎ ও জীবনের সমস্ত বৈচিত্র একাকার করে দেওয়া। পারলে তারা কদমগাছেও কমল ফোটাতে চায়। তাদের বীজমন্ত্রই হল, আমি বা আমরা যেমন, সকলেই তেমন হবে। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের সেই বাসনায় জল ঢেলে দিয়েছে। তবে, আদালতের রায় সমাজজীবনে কতটা প্রযুক্ত হবে, তা-ও ভাবার। কিন্তু, প্রথম-পদক্ষেপ হিসাবে এই রায়টি নিশ্চিতভাবেই জরুরি ছিল।
নাগরিকের আধারসংখ্যার মাধ্যমে রাষ্ট্র ব্যক্তিপরিসরের গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করছে কি না, এই বিতর্কে বহুদিন ধরেই উদ্বেল হয়েছে দেশ। সুপ্রিম কোর্ট আগে ব্যক্তিপরিসরের স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছে, তাই মানুষের আশা ছিল, আধার-মামলায় আদালতের চূড়ান্ত-রায় ব্যক্তির অনুকূলেই যাবে। কিন্তু, আদালত জানিয়ে দিয়েছে, আধার অসাংবিধানিক নয়। যদিও, বিচারপতিরা জানিয়েছেন, ব্যাংক ও মোবাইল-পরিষেবায় আধার আর আবশ্যিক নয়। কিন্তু, এখন এই ছাড় কতটা বাস্তবোচিত, তা ভেবে দেখার। কেননা, ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও মোবাইলসংস্থাগুলি গ্রাহককে তার অ্যাকাউন্ট ও ফোনের সঙ্গে আধারসংখ্যা জুড়তে বাধ্য করেছে। দেখা গেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাগরিকের আধারতথ্য ফাঁসও হয়েছে। সর্বোপরি, দেশে যখন নাগরিকপঞ্জি তৈরির সূচনা হয়েছে, তখন আধারের সার্বিক প্রাসঙ্গিকতার প্রশ্নটি থেকেই যায়। যাবতীয় প্রশ্নের সম্ভাবনা জিইয়ে রেখেই এই মামলার রায় যে প্রধানমন্ত্রী ও শাসকদলকে স্বস্তি দিয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়গুলির মধ্যে পরকীয়া-মামলাটিও গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যে পরকীয়ার অভিযোগে অজস্র সালিশিসভার শিকার হয়েছেন মেয়েরা। বীরভূমের সুবলপুর গ্রামে বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের জেরে জনজাতি তরুণীকে সালিশিসভার রায়ে তেরোজন গ্রামবাসী মিলে ধর্ষণও করেছে। দাম্পত্যের ক্ষেত্রে ৪৯৭-ধারাটিই ছিল এইসব মাতব্বরির প্রচ্ছন্ন-প্ররোচনা। সেই অপরাধের আপাত-উৎস ধারাটি বাতিল করে আদালত নিশ্চয়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে। ওই ধারায় পরকীয়া এতদিন অপরাধ হিসাবে গণ্য হত। ফলে, তা ছিল শাস্তিযোগ্য। আদালত আইনটিরই মূলোচ্ছেদ করায় পরকীয়া-সম্পর্ক বৈধ হয়ে গেল, তা নয়। পরকীয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট নারী-পুরুষ আর অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত হবে না মাত্র। তবে, ব্রিটিশ-আইনের ওই ধারায় এতকালে কারও শাস্তি হয়েছে বলে মনে করতে পারেননি আইনজীবীরা। সেই দিকটি ভাবলে মনে হতে পারে, একটি মৃত-আইনের নিছক-সৎকারসাধন করেছে আদালত। বিশেষত, আগের মতোই এখনও বিবাহবিচ্ছেদের মামলায় পরকীয়ার অভিযোগ আদালতগ্রাহ্য হবে। এই ক্ষেত্রে সমাজের সঙ্গে ব্যক্তিদ্বন্দ্বের বিষয়টি কিন্তু আদালত খতিয়ে দেখেনি। কেন্দ্র বলেছিল, বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে ৪৯৭-ধারাটি অপরিহার্য। কিন্তু, আদালত তা প্রত্যাখ্যান করেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, পরকীয়া বিয়ে ভাঙার কারণ নয়, তা আসলে অসুখী-বিয়ের উৎস। সমপ্রেমের আইনি স্বীকৃতির মতোই, পরকীয়ার অপরাধমুক্তি বৃহত্তর সমাজে কতটা প্রভাববিস্তারী হবে, তাতে সন্দেহ থেকেই যায়। কেননা, আদালত যতই অগ্রগামী ও আধুনিক রায় দিক, সমাজ যে তার সমানুপাতিক নয়, তার দৃষ্টান্ত তো সংবাদপত্রে নিত্যনৈমিত্তিক। এই রায়ঘোষণার দিনই ত্রিপুরায় সালিশিসভার চাপে আত্মঘাতী হয়েছেন এক তরুণী, আরেকজনকে পিটিয়ে মেরেছে গ্রামের মাতব্বররা।
শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী নারীর প্রবেশাধিকারের পক্ষে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের চার পুরুষ-বিচারপতি। বিরোধিতা করেছেন কেবল নারী-বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র। এই মামলাটি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে এক কঠোর পদক্ষেপ। মনে করা হয়, আটশো-বছর-প্রাচীন শবরীমালার মন্দিরের প্রধান-বিগ্রহ আয়াপ্পা চিরব্রহ্মচারী। ঋতুমতী নারীরা সেই মন্দিরে প্রবেশ করলে তাঁর কৌমার্য ভেঙে যেতে পারে। বিষয়টি কৌতুকেরও। সামান্য রজঃসলা মানবীর উপস্থিতিতেই যদি দেবতার কৌমার্য ভেঙে যায়, তাহলে তার প্রতি ভক্তের বিশ্বাস ও ভক্তি কীভাবে অটল থাকে, তা ভেবে দেখার। মামলার রায়ে বিচারপতিরা এই নিষেধাজ্ঞাকে তুলনা করেছেন অস্পৃশ্যতার মতো কুসংস্কারের সঙ্গে। এই নিষেধাজ্ঞা সংবিধানের সমানাধিকারেরও বিরোধী। নারী হয়েও বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র কেন নারী-অধিকারের বিরুদ্ধে মত দিলেন, তার কারণ রহস্যময় হতে পারে। কিন্তু, তাঁর যুক্তিটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, ধর্মের বিষয়টি যুক্তি দিয়ে বিচার করা যায় না। অর্থাৎ, পক্ষান্তরে, দেশের শীর্ষ-আদালতেও নির্ধারিত হল, ধর্ম এক অযৌক্তিক ক্রিয়াকলাপমাত্র। মামলাটির ভিন্ন-তাৎপর্যও আছে। দেশের অন্যান্য মন্দিরে এমন নিষেধাজ্ঞা না-থাকলেও, কিংবা শবরীমালা থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও, ঋতুকালে মেয়েরা নিজেদের হাজার-বছরের সংস্কার অগ্রাহ্য করে গৃহদেবতা বা মন্দিরবিগ্রহের পূজার্চনায় ব্রতী হবেন কি না।
সাম্প্রতিক সবকটি রায়ের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন প্রাক্তন-প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। অবসরের (২ অক্টোবর) আগে তিনি কয়েকটি মামলায় যুগান্তকারী রায় দিয়ে যতই নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার প্রয়াস করুন, তিনিই যে সরকারি চাপে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা বিসর্জন দেওয়ার অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছিলেন, যে-অভিযোগ ছিল সুপ্রিম কোর্টের চার বিচারপতিরই, তা থেকে কি মুক্ত হলেন তিনি? গুজরাতের সোহরাবুদ্দিন শেখ হত্যাকাণ্ডের সিবিআই-বিচারক ব্রিজগোপাল হরকিষন লোয়ার (যিনি অভিযুক্ত অমিত শাহকে আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন) নাগপুরে রহস্যমৃত্যুর তদন্ত দাবি খারিজ করেছিলেন বিচারপতি দীপক মিশ্র। তখন তাঁকে ইমপিচমেন্টের দাবিও তুলেছিলেন ওই চার-বিচারপতি। সেই প্রেক্ষিতে এই রায়গুলি যে তাঁকে মহিমান্বিত করবে, তা নয়। কেননা, সাম্প্রতিককালে তাঁর কোনও ‘যুগান্তকারী’ রায়ই সর্বসম্মতভাবে হয়নি। প্রধানত পাঁচ-মানবাধিকারকর্মীর গ্রেফতারের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে কোর্ট ও কেন্দ্রের বিরোধ বলে ভাবা হলেও, সেই রায় শেষপর্যন্ত কেন্দ্র ও মহারাষ্ট্র সরকারের পক্ষেই গেছে। প্রাথমিকভাবে আদালত বলেছিল, যদি দেখা যায় বিরুদ্ধমত প্রতিহত করতেই এই গ্রেফতার, তাহলে তা খারিজ করে দেওয়া হবে। প্রথমদিনের শুনানিতে এমনও বলা হয়েছিল, বিরুদ্ধমত সমাজনামক প্রেশারকুকারের সেফটিভাল্ব। তা না-থাকলে প্রেশারকুকারে বিস্ফোরণ হতে পারে। যিনি এমন মতপোষণ করেছিলেন, সেই বিচারপতি ধনঞ্জয় চন্দ্রচূড় প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি এ এম খানউইলকরের চূড়ান্ত-রায়ে সহমত হননি। আদালতের বিশেষ-বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিরা পুণে-পুলিশের গ্রেফতারি-নথিতে সমাজকর্মীদের মাওবাদীযোগের অভিযোগেই প্রাধান্য দিয়েছেন। অথচ, ধৃত-সমাজকর্মীরা যে আদৌ ভীমা-কোরেগাঁওয়ের হামলায় প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত নন, রোমিলা থাপার ও প্রভাত পট্টনায়েকের মতো বিশিষ্ট আবেদনকারীদের এমন যুক্তিতে আমল দেয়নি আদালত। কিন্তু, বিচারপতি চন্দ্রচূড় তাঁর আগের মতেই স্থির থেকে নিজস্ব রায়ে লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্রের অস্পষ্টতা পুলিশের অভিযোগে প্রকট। বিরুদ্ধ-মতের কণ্ঠরোধ করার উদ্দেশ্যেই সমাজকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। আধার-মামলায়ও বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছেন, আধারের মাধ্যমে নাগরিকের উপর সরকার নজরদারি করছে কি না, তা-ও ভাবা দরকার। কিন্তু, সেই মামলার মতোই মানবাধিকারকর্মীদের গ্রেফতারির মামলায়ও প্রধান বিচারপতি তাঁর সতীর্থর যুক্তিতে আমল দেননি। প্রধান বিচারপতি এইসব রায়ে দেশবাসীর আপাত-কৃতজ্ঞতা পেলেও, বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের কাঁটা যে তাঁকে ও কেন্দ্রকে বিদ্ধ করেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বিশেষত, তাঁর রায়ের ফাঁক থেকেই দিল্লি হাইকোর্ট যে গৌতম নওলাখাকে মুক্তি দিয়েছে, তা-ও লেখা থাকবে আইনের নথিতে। তা সত্ত্বেও, সুপ্রিম কোর্টই যে আপাতত মানুষের ভরসাস্থল, তা-ও কমকথা নয়।
(মতামত ব্যক্তিগত)