Advertisment

সিবিআই, রাজনীতিকরণ এবং অবক্ষয়; 'সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে'

সুপ্রিম কোর্টের এক সময়কার মুখ্য বিচারপতি আর এম লোধা একবার বলেছিলেন, "সিবিআই আসলে খাঁচায় বন্দি পাখি ছাড়া আর কিছুই না, মনিব যা শেখায়, কেবল তা-ই বলতে পারে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
cbi-office

বিরোধীদের দাবি, সিবিআই আতঙ্ক গ্রাস করেছে তৃণমূলকে। সিবিআইটাই ওদের অস্ত্র, দাবি তৃণমূলের। ফাইল চিত্রঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

দেশের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা - সিবিআই। সময়ের সঙ্গে একটু একটু করে হারাতে থেকেছে তার নিরপেক্ষতার ভাবমূর্তি। একই সরকার কেন্দ্রে থাকা অবস্থাতেই এক দশকের মধ্যে বদলে গিয়েছে সিবিআই-এর চেহারা। সম্প্রতি মঈন কুরেশি মামলায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক এবং দু'নম্বর পদে থাকা দুই ব্যক্তিকে অপসারণ করা নিয়ে উত্তাল রাজনৈতিক মহল। প্রশ্ন উঠছে সংস্থার ভূমিকা নিয়ে।

Advertisment

সিবিআই প্রধান অলোক ভার্মাকে দায়িত্ব থেকে অপসারিত হতে হয়েছে ২৫ অক্টোবর মাঝরাতে। সিবিআই প্রধানের নিয়োগ এবং অপসারণের দায়িত্বে থাকা কমিটিতে তিন সদস্য থাকলেও রাতারাতি ক্ষমতায় রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী একাই। এই ঘটনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেছে নানা মহলে। অনেকেই বলেছেন এই ঘটনা ভারতীয় সংবিধানের রীতি বহির্ভূত। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে ভার্মা বলেন, "অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিবিআইকে নীরব থাকতে হয়।"

আরও পড়ুন: সিবিআইয়ে রদবদল কতটা প্রভাব ফেলবে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে?

আজ থেকে বছর দশেক আগে কেমন ছিল সিবিআই এর ভূমিকা? ধরে নেওয়া যাক ২০০৯ সালের কথা। রাজনীতিকরণের ঐতিহ্য তখনও ছিল। ভালমতোই ছিল। ১৯৮৪-র দাঙ্গায় বেমালুম নির্দোষ প্রমাণ হয়েছিলেন জগদীশ টাইটলার। আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় ছাড় পেয়ে গিয়েছিলেন মায়াবতী থেকে মুলায়ম সিং যাদব। তাজ হেরিটেজ করিডোর নিয়েও যথেষ্ট চাপ ছিল সিবিআই-এর ওপর। তদন্তের রিপোর্ট মনপসন্দ না হলে সিবিআই এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনও দেখেছে এদেশ। ১৯৯৯ সালে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা প্রধান ইউ সি মিশ্রর সঙ্গে তৎকালীন মুখ্যসচিব ব্রজেশ মিশ্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল শুধুমাত্র মায়াবতী কাণ্ডকে ঘিরে।

রাজনীতির রঙ লাগল তদন্তে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলাতেও ২০০৪ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরে আসার পর তৎকালীন সিবিআই প্রধানকে আদবানিকে নির্দোষ প্রমাণ করার কারণ লিখিত ভাবে জানাতে হয়েছিল সরকারকে। টু-জি কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে বোফোর্স কেলেঙ্কারিতেও ব্যতিক্রম ঘটেনি কোনো। মোদ্দা কথা, স্পর্শকাতর রাজনৈতিক মামলার তদন্ত করতে গিয়ে আদতে সরকারকে তোষামোদ করেই চলতে হয়েছে সিবিআইকে।

আরও পড়ুন: নাগেশ্বরের নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা কেড়ে অলোক ভার্মার বিরুদ্ধে সিভিসি-কে ২ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

সুপ্রিম কোর্টের এক সময়কার মুখ্য বিচারপতি আর এম লোধা একবার বলেছিলেন, "সিবিআই আসলে খাঁচায় বন্দি পাখি ছাড়া আর কিছুই না, মনিব যা শেখায়, কেবল তা-ই বলতে পারে।" বিখ্যাত এই মন্তব্যের পরপরই সকলের সামনে আসে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান রঞ্জিত সিং-এর বাড়িতে ঘন ঘন আসতেন টু-জি এবং কয়লা কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তি।

এই পর্যন্ত ছবিটা একরকম। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। ছবিটা আরও বদলাতে শুরু করল যবে থেকে আপাত কম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মামলায় সিবিআই-কে তদন্তের ভার দেওয়া আরম্ভ হল। অলোক ভার্মার সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে ক্ষমতায় আরেকজনকে রাখা শুরু করল কেন্দ্র - রাকেশ আস্থানা। ভার্মার আপত্তি সত্তেও বাড়ানো হতে থাকল আস্থানার ক্ষমতা। চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে এই অবস্থার শুরু। দু'পক্ষকেই ঘুষ দিয়ে কাজ হাসিল করার সংস্কৃতিতে ভরে গেল গোটা ব্যবস্থাটা। বর্তমানে অপসারিত অলোক ভার্মা এবং রাকেশ আস্থানার অভিযোগ সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। দুজনেই দুজনের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে একই ব্যক্তির থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করছেন কেন্দ্রের কাছে। আরও কত অধঃপতন অপেক্ষায় রয়েছে, বলবে সময়।

cbi
Advertisment