Advertisment

সেনাপতি বিরাট, আপনার বার্তা কিন্তু ইতিবাচক নয়

বিরাট কোহলির ভক্ত হয়েও বলতে বাধ্য হচ্ছি, যখন ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নামছেন, তখন প্রত্যেকটি ম্যাচের গুরুত্বই অসীম। লিখলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
virat kohli

বিরাট কোহলি শুধু ক্রিকেটার নন, দেশের প্রতিনিধিও

সেনাপতি বিরাট চলেছিলেন যুদ্ধে, তাঁর মতে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে। শত্রুশিবিরও তৈরি ছিল তাদের সাধ্যমতো। যুদ্ধ হলো হাড্ডাহাড্ডি। বিরাটের সৈন্যরা হারলেন, পর্যুদস্ত হয়ে। যুদ্ধের পর সেনাপতি হারের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বললেন, "আসলে এটা যুদ্ধই নয়, মহড়া মাত্র। সেইজন্য হারজিতের কোনও মূল্য নেই।" নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম একদিবসীয় ম্যাচে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও সহজে আত্মসমর্পণ করে ভারত। ম্যাচের শেষে সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক বিরাট কোহলি ব্যাখ্যা দিলেন, এটা টি-২০ ও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বছর, তাই একদিবসীয় ক্রিকেটের অন্তত তাঁর এবং ভারতীয় দলের কাছে খুব একটা মূল্য বা গুরুত্ব নেই।

Advertisment

ভারতীয় অধিনায়কের এই উক্তির ফলস্বরূপ যা হওয়ার, তাই হলো। সিরিজের তৃতীয় তথা শেষ ম্যাচেও ভারতকে অনায়াসে হারিয়ে ২২ বছর পরে সিরিজ 'হোয়াইটওয়াশ' করে দিল লড়াকু কিউয়িরা ৩-০ ব্যবধানে। কিছুদিন আগে লিখেছিলাম যে নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে হারানো শক্ত হবে, টি-২০ সিরিজে ভারতের বিরুদ্ধে ৫-০ হারার পরেও। বিশ্বকাপের ফাইনালে আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনার ভুল সিদ্ধান্তের জন্য ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায় কিউয়িদের। অতি ভদ্র কিউয়িরা সেটাও মেনে নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৩-০ টেস্ট সিরিজ হারের পর ভারতের কাছে টি-২০ সিরিজ হার উস্কে দেয় তাঁদের লড়াই করার ক্ষমতাকে।

ভারতের হয়ে খেলার অর্থ

অনেকে বলেছিলেন, টি-২০ সিরিজে সুপার ওভারে 'চোক' করে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এইসব সমীকরণ মাথায় নিয়েও কী লড়াইটাই না করল তারা, কাগজে কলমে অনেক বেশি শক্তিশালী ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে। পৃথিবী-বন্দিত খেলোয়াড় বিরাটের ম্যাচের পর সাক্ষাৎকারে ওই উক্তি কিউয়িদের জয় কোনও অংশে খাটো করতে পারে নি। বিরাট কোহলির ভক্ত তথা ফ্যান হয়েও বলতে বাধ্য হচ্ছি, যখন ভারতীয় দলের হয়ে মাঠে নামছেন, তখন প্রত্যেকটি ম্যাচের গুরুত্বই অসীম।

আইসিসি প্রত্যেক দেশের জন্য একটা ক্রিকেটিং ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করে দেয়। উদাহরণস্বরূপ ধরে নেওয়া যাক, ভারতকে ১০টি টেস্ট, ২৫টি একদিনের ম্যাচ, এবং ১৫টি টি-২০ খেলতে হবে। তেমনই অস্ট্রেলিয়াকে সাতটি টেস্ট, ৩০টি একদিনের ম্যাচ, এবং ২৫টি টি-২০ খেলতে হবে। প্রত্যেকটি দেশ টেস্ট, টি-২০, ওডিআই খেলে, কিছু কম, বা কিছু বেশি। তাই বিরাট কোহলি, আপনি যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে দেশের হয়ে মাঠে নামছেন, তখন কখনোই বলতে পারেন না যে কোনও বিশেষ সিরিজ, ফরম্যাট, বা ম্যাচের, আপনার কথায়, কোনও "রেলেভেন্স" নেই। আপনার উক্তিতে খুব একটা ভালো বার্তা যাচ্ছে না আপনার টিমের কাছে, বা ভারতীয় সমর্থকদের কাছে।

এতে ৫-০ সিরিজ হেরে, ৩-০ সিরিজ জিতে কিউয়িদের ঘুরে দাঁড়ানোর দুর্দান্ত লড়াইকে অপমানিত, ও কিছুটা হলেও খাটো করা হলো। আপনার গুনমুগ্ধ ভক্ত হয়েও বলছি যে, ক্রিকেটের যে 'লেভেল' বা 'স্ট্যান্ডার্ড' আপনি তৈরি করেছেন নিজের জন্য, সেই জায়গা থেকে আপনার পদস্খলন যেন না হয়। ক্রিকেট সবার উপরে, ক্রিকেটার, সে যেই হোক, নয়।

জয় বাংলা

পরিশেষে, বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ আইসিসি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো ভারতকে হারিয়ে। প্রতিবেশী দেশকে জানাই অসংখ্য অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এই টুর্নামেন্টে তিন তিনটি উপমহাদেশের দল সেমি-ফাইনালে খেলল, যা অবশ্যই মঙ্গলজনক সঙ্কেত। কিন্তু ফাইনালের পর কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, যা সত্যিই অপ্রয়োজনীয় ছিল। ক্রিকেট এক মহান খেলা, এবং খেলাটাকে খেলার জায়গায় রাখাটাই সমীচীন। রাগ অভিমান ভুলে, আসুন আমরা সবাই আনন্দ করি বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ জয় নিয়ে। সবাই একত্রিত হয়ে বলি, 'জয় বাংলা'।

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন https://t.me/iebangla

Cricket Kahon
Advertisment