Advertisment

মহান বা 'গ্রেট' শব্দটার তাৎপর্য বোঝালেন কোহলি

মহান বা 'গ্রেট' শব্দটা কেন বিরাট কোহলির নামের পাশেই বসতে পারে? বুঝিয়ে বললেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্য়ায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Virat Kohli defines greatness says Saradindu Mukherjee in his cricket column for Indian Express Bangla

মহান বা 'গ্রেট' শব্দটার তাৎপর্য বোঝালেন বিরাট কোহলি

মহান বা 'গ্রেট' শব্দটাকে মাঝেমধ্যেই আমরা খুব আলগাভাবে ব্য়বহার করে ফেলি বোধহয়। কিন্তু 'গ্রেটনেস'-এর স্তরে পৌঁছতে প্রয়োজন পরিশ্রম, প্রতিভা এবং দৃঢ়, ঠান্ডা মানসিকতা। সর্বোপরি ভাগ্য এবং বলিদান বিচার্য।

Advertisment

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সদ্যসমাপ্ত টি-২০ সিরিজে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি সেই গ্রেটনেসের ছাপ রেখে গেলেন। কোহলির মহত্বের কথা অবশ্য সর্বজনবিদিত, এবং ভারত যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২০৭ তাড়া করতে গিয়ে অসফল হতো, তাও তা এতটুকু খর্ব হতো না।

দেশে ও বিদেশের সবরকম আবহাওয়ায়, পিচে, ও বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ঝুড়ি ঝুড়ি রান করে তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, এই প্রজন্মের অন্য়তম সেরা ব্যাটসম্য়ানের নাম বিরাট কোহলি। এই কথাগুলো কোনওটাই আপনাদের অজানা নয়, অতএব এখন প্রশ্ন হলো, কেন এসব লিখছি?

হায়দরাবাদে কোহলির কেরিয়ারে সর্বোচ্চ টি-২০ রানের ইনিংস

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে কোহলির ইনিংসের চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ইনিংসের দুটো দিক রয়েছে। প্রথমে ব্যাট করতে এসে (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উইকেট রোহিত শর্মা আউট হওয়ার পর) দশের ওপর রানরেট বজায় রাখতে গিয়ে ব্যাটে-বলে এক না-হওয়া। যদিও অপরদিকে কেএল রাহুল যোগ্য সঙ্গত দিলেন ৪০ বলে ৬২ রান করে।

কোহলি সেদিন তাঁর অর্ধ-শতরান হওয়া পর্যন্ত ব্যাটের মাঝখান খুঁজে পাননি। বহুবার বল লেগেছে ব্যাটের কানায়, চলে গিয়েছে উইকেটের পাশ দিয়ে। নিজের ওপর বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বারংবার। রানরেট তখন সাড়ে তেরোর ওপর। সামনের ভি-তে (বড় ভি-তে) কোহলি-সুলভ খেলা দেখতে পাচ্ছিলাম না। স্বভাববিরুদ্ধ আড়াআড়ি খেলার অসফল, দুঃসাহসিক চেষ্টা করে গেছেন।

দেশকে জেতানোর অদম্য ইচ্ছা ও নিজের ওপর অসীম বিশ্বাস তাঁকে সাহায্য করেছিল উইকেটে টিকে থাকতে। জেসন হোল্ডারের একটি বল লং-অফের ওপর দিয়ে ব্যাটের মাঝখানে লাগিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকালেন। তারপরই যেন খুলে গেল একটা আটকে থাকা বাঁধ। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কবজির ব্যবহারে খেলতে লাগলেন একের পর এক অবিস্মরণীয় শট। ভারতকে আট বল বাকি থাকতেই পৌঁছে দিলেন জয়ের লক্ষ্যে।

যেদিন ব্যাটে-বলে হচ্ছে না, সেদিনও উইকেট না ছুড়ে দিয়ে ভারতকে ম্যাচ জেতানো। এরকম ইনিংসই কোহলিকে পৌঁছে দিয়েছে মহানদের দলে। যখন সময় ঠিক চলছে না, তখনও রান করা কোহলির ইনিংসের দ্বিতীয় পর্ব।

বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর ব্যাটিং লাইন আপের প্রথম তিন

আশা করা গিয়েছিল, সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত ম্যাচে রোহিত নিজের 'ব্যাকইয়ার্ডে' (ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম) জ্বলে উঠতে পারেন। যে মাঠকে তিনি তাঁর হাতের তালুর উল্টোদিকের মতন চেনেন, আর যে পিচে তিনি কেরিয়ারের শুরুর দিন থেকে খেলে যাচ্ছেন সেখানেই এক দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন তিনি। ৩৪ বলে ৭১ রান করে সারা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিলেন, কেন তাঁকে সাদা বলের সুলতান বলা হয়। কেএল রাহুলও যোগ্য সঙ্গত দিয়ে ৯১ রানের ইনিংস খেলে তাঁর অস্ট্রলিয়ার টিকিটটি কেটে ফেললেন।

ঋষভ পন্থকে যেমন দেখলাম

কিং কোহলি কিন্তু ভারতের অসাধারণ ইনিংস শুরুর পর তিনে পাঠিয়েছিলেন তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ঋষভ পন্থকে। ভারতের তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্য়ান আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁর শট ফ্ল্যাট হয়ে চলে যায় লং অফে। মাত্র ২ বল খেলেই কোনও রান না করে ফিরতে হয় পন্থকে। অথচ প্রখম ম্য়াচে পন্থের ব্যাটিং ('অ্যাপ্রোচ') ভাল লেগেছিল। দুঃসাহসিক তিনি নিশ্চয়ই। কিন্তু ইনিংস গড়ার একটা প্রবণতা দেখিয়েছিলেন সেদিন।

পন্থ আউট হওয়ার পরেই নামেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্য়ান কোহলি। কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি নাকি ছয় মারতে পারেন না, কিন্তু নির্ণায়ক ম্য়াচে ২৯ বলে ৭০ রান করতে গিয়ে (কেরিয়ারের দ্রুততম টি-২০ ইনিংস) চারের চেয়ে ছয় বেশি মারলেন। চারটি চার ও সাতটি ছয় আসে তাঁর ব্যাট থেকে। রোহিত, রাহুল ও কোহলি বুঝিয়ে দিলেন, বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর ব্যাটিং লাইন আপের প্রথম তিনেই থাকবেন তাঁরা।

শিবম দুবের ইনিংস বাহবার যোগ্য, কিন্তু!

সবাইকে অবাক করে প্রথম টি-২০ ম্য়াচে শিবম দুবেকে তিনে পাঠিয়েছিল ভারত। টিম ম্যানেজমেন্ট বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, ভারত গবেষণার পর্যায় রয়েছে। দুবে ৫৪ রান করলেন মাত্র ৩০ বলে। বাহবার যোগ্য নিশ্চয়ই। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওই সময়টা অত্যন্ত সাদামাটা বোলিং করেছে। অধিনায়ক পোলার্ডের ১০০-১২০ কিমির শর্ট বলগুলোকে বাউন্ডারিতে পাঠাতে কোনও অসুবিধাই হয়নি দুবের। ভারত বিরাট কোহলির জায়গায় দুবেকে তিনে পাঠিয়ে সফল ঠিকই। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, অস্ট্রেলিয়ার পিচে বাউন্স এবং গতি অনেক বেশি। মাঠগুলোও বড়, তবে যদি আইসিসি রাখতে চায়, তাহলেই। দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য় অনেক মাঠই ছোট করে দেওয়া হয়েছে।

ক্য়ারিবিয়ান দলে বোলার কোথায়?

টিম সিলেকশন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড যে টিম বেছে পাঠাবে, তাদের সঙ্গেই ভারতকে খেলতে হবে। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জোরে বোলিংয়ের ভাণ্ডার প্রায় শূন্য়। ওশেন থমাস কি চোট-আঘাত জনিত সমস্য়ায় ভুগছেন? ৯০ মাইল বেগের বল কিন্তু সবসময় তফাত গড়ে দেয়। হেডেন ওয়ালশ জুনিয়র ক্য়ারিবিয়ান প্রিমিয়র লিগে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়া বোলার।

বলতে ইতস্তত বোধ করছি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জোরে বোলিং দাগ কাটতে পারেনি। দ্বিতীয় টি-২০ জেতা সত্ত্বেও। তরুণ প্রতিভা নিকোলাস পুরান ফিরে এসেই সফল হয়েছিলেন। দুরন্ত ব্য়াট করলেন এই বাঁ-হাতি উইকেটকিপার-ব্য়াটসম্য়ান। এভিন লুইস, লেন্ডি সিমন্স, ব্র্য়ান্ডন কিং. নিকোলাস পুরান, কায়রন পোলার্ড ও হোল্ডারদের মধ্য়ে একটা পুরনো ক্য়ালিপসো ফ্লেভার দেখা গেল, যা আশাব্য়ঞ্জক।

হোল্ডিং-মার্শাল থেকে হোল্ডার-উইলিয়ামস

এতটুকু খাটো না-করে বলি, ভাগ্য়ের পরিহাস এমনই যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের চেয়ে ভারতের বোলাররা অনেক বেশি জোরে বল করেন, এবং তাঁদের চেয়ে অনেক বেশি সফল। কোথায় দেখেছি রবার্টস, হোল্ডিং, মার্শাল, গার্নার, ক্রফ্ট, অ্যামব্রোস, ওয়ালশের আগুন ঝরানো বোলিং। আর কোথায় দেখছি জেসন হোল্ডার, কায়রন পোলার্ড ও কেসরিক উইলিয়ামসের মিলিটারি মিডিয়াম পেস। যেখানে একসময় বিশ্বত্রাস ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং লাইনআপ, তাদের জোরে বোলারদের নিয়ে গর্ব করা হত, সেখানে এখন টি-২০ বা ওয়ানডে-তে ক্য়ারিবিয়ান স্পিনারারা বরং ভাল বল করছেন।

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়ের নিয়মিত কলাম পড়ুন এখানে

Virat Kohli ICC Cricket Kahon
Advertisment