রাজ্যের ৩ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছে। পরাজিত হয়েছে বিজেপি ও বাম কংগ্রেস জোট। উপনির্বাচনে ৩ আসনে জয় পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ইভিএম নিয়ে কোনও অভিযোগ করেনি। আবার এই তিন আসনে পরাজিত হয়ে ফল ঘোষণার দুদিন পর বিজেপি পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। অভিযোগ করেছে ছাপ্পা- রিগিংয়ের।
অন্যদিকে এই দুই দলের থেকে অনেকটাই দূরে দৌড় শেষ করায় কংগ্রেস ও সিপিএম জোট এখনও অবধি নির্বাচন নিয়ে কোনও শব্দ করেনি। এটাই মজার বিষয় যখন কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জয় লাভ করে তখন তাদের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ থাকে না আর যারা পরাজিত হয় তখন নানা ধরনের অভিযোগ আসতে থাকে তাদের কাছ থেকে। এই তিন বিধানসভা উপনির্বাচনে সেই ধারাই বজায় রইল।
আরও পড়ুন এনআরসি ভীতিই ভোটে জিতেছে, মমতার বিশ্লেষণে সিলমোহর বিজেপিরও
২৫ নভেম্বর খড়গপুর, কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুরে উপনির্বাচন হয়। নির্বাচনের দিন করিমপুরে বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা সব রাজ্যবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। মজার বিষয় তখন কংগ্রেস ও সিপিএম নির্বাচন কমিশনের ওপর সরব হয়েছিল। কমিশন দায়ী বলেই তারা মন্তব্য করেছিল। কিন্তু বিজেপির তির ছিল জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের ওপর। একেই বলে কিল খেয়ে কিল হজম করা।
আরও পড়ুন মুকুলের ভূমিকায় সফল মমতা
অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, নির্বাচনের দিন খোদ প্রার্থীকে মারধরের ঘটনা আইন শৃঙ্খলা অবনতির পরিচয় যদি না হয় তাহলে আর কী করলে আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে? প্রার্থী যে দলেরই হোক না কেন এই ঘটনা একেবারে কাম্য নয়। তাহলে অবাধ ভোট নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অত্যন্ত স্বাভাবিক। প্রার্থীর নিরাপত্তা না থাকলে সাধারণ ভোটারদের হাল কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।
লোকসভা নির্বাচনের পর ইভিএম মেশিনের কারচুপি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তৃণমূল কংগ্রেসের একুশে জুলাইয়ের মূল স্লোগান ছিল ইভিএম নয়, ব্যালটে ভোট চাই। এনিয়ে রাজ্যব্যাপী আন্দোলন করেছে। তারপর দেশের অন্যত্র বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। এ রাজ্যে উপনির্বাচন হয়েছে। মহারাষ্ট্রে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর ইভিএম নিয়ে তেমন কোন অভিযোগ করেনি কোনও রাজনৈতিক দল। মহারাষ্ট্রে বিজেপি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি(এনসিপি), শিবসেনা ও কংগ্রেস কোন দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
আরও পড়ুন বিজেপিকে হারিয়ে তৃণমূলকে স্বস্তি দিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী
রাজনৈতিক মহলের মতে, সাধারণত এমন ফল হলে ইভিএম নিয়ে অভিযোগ তুলে কেউ সরব হয় না। এ রাজ্যের ৩ আসনের উপনির্বাচনে জয়ের পর ইভিএম নিয়ে টুঁ শব্দও করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও কোনো সাড়া-শব্দ নেই। ওয়াকিবহাল মহল মনে করে যখন কোন দল জয় পায় তখন এসব বিষয়ে আমল দিলে চলে না! যত অভিযোগ তা পরাজয় ঘটলেই বাহানা হিসেবে সামনে তুলে ধরা হয়।
আরও পড়ুন তৃণমূল রিগিং করেছে, আমাদের এজেন্টরা ভয়ে কথা বলেননি, আসল লড়াই একুশে: দিলীপ ঘোষ
ফল ঘোষণার দিন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেছিলেন লোকসভা ভোটে ভালো ফল হয়েছে ধরে নিয়ে দলের কর্মীরা ভেবে নিয়েছিলেন বিধানসভা সহজ জয় জয় আসবে। যার ফলে উপনির্বাচনে বিজেপির এই হাল হয়েছে। ৩০ নভেম্বর দলের রাজ্য দফতরে উপনির্বাচনে ছাপ্পা ও রিগিংয়ের অভিযোগ আনলেন দিলীপবাবু। একইসঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের তোপ দাগলেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের কথাও বলেছেন তিনি। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ২৫ থেকে ২৭ নভেম্বর প্রকাশ্যে এমন কোনও অভিযোগ পদ্ম শিবির করেনি। তাহলে ফল প্রকাশের ২ দিন পর কেন এমন অভিযোগ হচ্ছে? জয় পেলে এই অভিযোগ করত বিজেপি? ঘটনার বিষয়টি অবশ্য তদন্ত সাপেক্ষ।
নির্বাচন যখন গণতন্ত্রের মাপকাঠি তখন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন আপামর জনসাধারণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৭০ বছর পরও নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ অব্যাহত। সোশাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে ইভিএমের সঙ্গে আধার নম্বরের সংযোগ করার। তাহলে কিছুটা স্বস্তি পাবেন ভোটাররা।