Advertisment

অভিষেকের ত্রিপুরা-যাত্রায় জমকালো রাজনীতি

খেলা শুরু, ১৫ দিন অন্তর ত্রিপুরা যাব, তিনি হুঙ্কারও দিয়েছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
abhishek banerjee wants elections to stop during corona

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

নীলার্ণব চক্রবর্তী: আইপ্যাক পুরো-প্যাক, তার 'আইয়ের' উপর গেরুয়ার লাল চোখ-- প্রায় ভস্ম-পরিস্থিতি। বুঝতেই পারছেন-- প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাক টিমের (একজন একটু মশকরা করে বলেছিলেন--'এক প্যাক কিশোর'!) সাম্প্রতিক ত্রিপুরা সফরের কথা বলছি। বলা যেতেই পারে, প্রশান্তের টিমকে 'কিলিয়ে' সেখানে রাজনীতির 'কাঁঠাল' অনেকটাই 'পাকিয়ে' তুলেছে বিজেপি। প্রশ্ন উঠেছে, ওই পাকা ফলটি তৃণমূলের হাতে, মানে ভোটবাক্সের জোড়া-ফুলে টুপ করে খসে পড়বে কি না? আইপ্যাকের টিমকে ত্রিপুরার হোটেলে আটকে রাখা, জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের হেনস্থার অভিযোগ, তাতেই তৃণমূল নেতারা ত্রিপুরা যাচ্ছেন, দল বেঁধে। মানে লোপ্পা ওই পাকা ফল ফসকানো যাবে না, কিছুতেই যাবে না, মহা-মরিয়া সবুজ নেতারা!

Advertisment

সোমবার গেলেন তৃণমূলের নম্বর টু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু দিন আগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে তিনি অভিষিক্ত হয়েছেন। এ রাজ্যের ভোটে তোলাবাজ ভাইপো হটানোর ডাক হটিয়ে তিনি সমুদ্রপ্রায় শক্তি বাড়িয়ে ফিরে এসেছেন। বঙ্গজয়ে এক ঢিলে দুই পাখির নিহত-কথা লিখেছেন। মানে, এক দিকে বিজেপিকে অভিষেক দেখিয়েছেন-- মমতার বাড়ানো পাসে তিনি 'বলে বলে' গোল করতে পারেন, আর দলে যে সব আঙুল তাঁর বিরুদ্ধে কিলবিলিয়ে উঠেছিল, সে সব ঘোর অমানিশায় এখন দস্তানা খুঁজছে। তা ছাড়া সেই যে বাংলার নির্বাচনে বিজেপির নেতারা যে ভাবে লম্বা-ছোট ঝাঁপ কেটে প্রচারের তুফানি চুমুক জমিয়েছিলেন, তাতেই ঘাসফুল সম্পর্কে অনেকেই বিষাদযোগের অধ্যায় লিখতে শুরু করে দেন।

আরও পড়ুন খেলা হবে, আবার খেলা হবে…

তৃণমূল সম্পর্কে কেউ কেউ বলে ওঠেন, 'আয়না দেখেই চমকে বলে, 'মুখ যে দেখি ফ্যাকাশে , বেশিদিন আর বাঁচব না তো --' ভাবছে বসে একা সে।' কিন্তু না, এমনও তো সত্যি হয়-- আহা! বলে এখন এখানে মসনদ ধরে রেখে, তাদের নজর কেন্দ্রে, ত্রিপুরায়। তা, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপুরা যাবেন, আর কিছু হবে না তা কী করে হয়! আগে থেকেই বিপ্লব দেব তাঁর বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক জাতীয় বাণী পেশ করে তার পিচটা তৈরি করে ফেলেছিলেন। নাহ, কোনও বৈপ্লবিক কিছু শোনাননি। শান্তির ললিত বাণীই বলেছিলেন দেব। বলেন, অতিথি দেব ভব। না, এইটুকুতে থামেননি, বললেন, মমতাকে তিনি সম্মান করেন। কোনও কিছুই বাড়াবাড়ি হলে দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরে।
অতিবিনয়ের ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়। (বিনয় শুনলেই অবশ্য যে সব কবিরা এই লেখা পড়ছেন, তাঁদের ঘাড়ে এসে বিনয় মজুমদারের ভূত এসে বসে পড়তে পারেন, নাহ-- এ বিনয় সে বিনয় নয়, এ হল সেইটা, যাকে নিয়ে শ্লোক লেখা হয়েছিল-- বিদ্যা দদাতি বিনয়ম। বিদ্যা বিনয় দান করে। তবে সে এখন ম্যামথের মতো পুস্তকপত্রেই-- এবং এটা জানার জন্য ত্রিপুরা কিংবা বিপ্লব কোনও কিছুরই প্রয়োজন নেই একেবারেই। যা হোক, বিপ্লব দেব, ত্রিপুরার মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর অতিথি দেব ভব শুনেই অনেকে ভাবতে ও বলতে শুরু করেছিলেন, এবার কিছু একটা হড়পা বানের মতো হবে। হলও।

আরও পড়ুন দিল্লি সফর, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ- কেন এ পথে মমতা?

অভিষেকের চলন্তিকা মানে চলন্ত গাড়িতে পতাকা-দণ্ড দিয়ে ডমাডম করল সব ডানপিটেরা। অভিষেক সেই ছবিটা তুলে টুইটারে পোস্ট করে দেখিয়েও দিলেন, দেখুন, ভাইয়েরা, দেখুন দাদারা-- একেই বলে অতিথি সৎকার, বিপ্লব বলেন 'এক' করেন 'দুই', দেখুন দেখুন!… পথে নেতাদের হেনস্থার নয়া দৌড় শুরু হয়েছে হালফিলে। ২০২০-র ১০ ডিসেম্বর অভিষেকের বিধানসভা ক্ষেত্র ডায়মন্ডহারবারে সভা করতে যাচ্ছিলেন বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা, আমতলায় নাড্ডার কয়ভয়ে হামলা হল, গাড়িতে ইটপাটকেল পড়তে থাকে টপাটপ করে, তৃণমূলের 'দুষ্টুছেলেদের' দিকে আঙুল ওঠে। (অভিষেকের গাড়িতে ডান্ডা কি তারই পাল্টা, সেই জল্পনার কোনও মানে আছে কি?)।
আবার, নন্দীগ্রামে ভোটের প্রচারে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়িতে ভিড়ের ভয়ানক গুঁতো লাগল, পা ভাঙল মুখ্যমন্ত্রীর। আবার দেখুন, এপ্রিলে সভা সেরে ফেরার পথে শীতলকুচিতে হামলার মুখে পড়ে বিজেপির রাজ্যসভাপতি দিলীপ ঘোষের গাড়ি। তার পরই এখানে চড়তে শুরু করেছিল উত্তেজনা। শীতলকুচির জোরপাটকির বুথে বাহিনীর গুলিতে চার জনের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি দেখে রাজ্যবাসী হতভম্ভ ও হতাশ হল বেলাগাম। এখন গাড়িতে বিজেপির পতাকার ডান্ডায় অভিষেক স্বাভাবিক ভাবেই ফুঁসে উঠেছেন। খেলা শুরু, ১৫ দিন অন্তর ত্রিপুরা যাব, তিনি হুঙ্কারও দিয়েছেন। ভোটের সানাইয়ে বিসমিল্লাও বাজিয়ে দিলেন।

দু'দশক ধরে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী থাকা এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো-সদস্য মানিক সরকারের 'বিজেপি বিপদ' বক্তব্যকে বাংলার ভোটে হাতিয়ার করেছিলেন মমতা। অনেকে ফেসবুকে, টকশো-য় তো বলেই থাকেন, মমতাই 'আসল বামপন্থী'। এখন ত্রিপুরাকে বিপ্লব-চ্যুত করতে সেনাপতি অভিষেকের যে মরিয়া-মরণপণ সামনে আসছে, মানুষের কাছে তা আপন হয়ে উঠবে কি না, সেই বিশ্লেষণেই বোধ হয় ব্যস্ত ভোট-কৌশলী যুবা-- প্রশান্ত কিশোর।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tripura abhishek banerjee
Advertisment