Advertisment

তাহলে কি রেহানের মতো ধর্ষণশহিদই হবে মেয়েরা

যে-দেশে ভক্তদের আশঙ্কা, মন্দিরে নারীপ্রবেশ হলে দেবতারও মতিভ্রম হতে পারে, সে-দেশে ধর্ষণের বাস্তবতা কিছুই অস্বাভাবিক নয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অলংকরণ- অরিত্র দে

কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্স এক সমীক্ষায় জানিয়েছে, পৃথিবীতে মেয়েদের পক্ষে বিপজ্জনকতম দেশ ভারত। তার আগে দেশের নোবেলভূষণ কৈলাশ সত্যার্থী তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদনে জানিয়েছিলেন, দেশে শিশুকন্যাদের জন্য জরুরি অবস্থা চলছে। এই ভয়াবহ সত্য জানতে রয়টার্স বা সত্যার্থীর উপর নির্ভর করার দরকার হয় না। প্রতিদিনের সংবাদপত্রে ধর্ষণ ও নারীনিগ্রহ যেন এক ধারাবাহিক কলামে পরিণত হয়েছে। দেশের  মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক, ধর্মগুরু, চিত্রপরিচালক, অভিনেতার মতো উচ্চবর্গীয় প্রতাপী-পুরুষ  থেকে সমাজের প্রান্তিক দুষ্কৃতীরা রোজ জড়িয়ে যাচ্ছে নারীনিগ্রহ বা ধর্ষণের সঙ্গে। এমনকি, দামি বিদ্যালয়ের নাবালক ছাত্ররাও সহপাঠিনীর দলধর্ষণে পিছিয়ে থাকছে না। নির্ভয়া-ধর্ষণ-খুনের পরে দেশে কঠোরতর আইন বলবৎ হলেও, নারকীয়তার ছায়া সামান্যতম ম্লান নয়। কাঠুয়ার নাবালিকা থেকে চাকদহের অশীতিপর সকলেই ধর্ষণযোগ্য এই নরকের দেশে। সম্প্রতি নারীনিগ্রহে অভিযুক্ত হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম জে আকবর মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন, ধর্ষণ-অভিযুক্ত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বা বিশপ ফ্রাঙ্কো মুলুক্কল জামিনে মুক্ত রয়েছেন, বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার ধর্মগুরু আসারাম বাপু গুরমীত রামরহিম সিং ধর্ষণের দায়ে জেলে গেছে। তারপরেও ধর্ষণের প্রতিযোগিতায় হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের সঙ্গে এই রাজ্যও সমানে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে । সম্প্রতি ধূপগুড়ির আদিবাসী জননীর জননাঙ্গে মাছধরার কাঁটা ঢুকিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতী, চাকদহের অশীতিপরকে ধর্ষণ করেছে বছর-কুড়ির বর্বর। রোজ এইসব খবরে অন্ধকার গাঢ় হয়ে ওঠে। তবে, যে-দেশে ভক্তদের আশঙ্কা, মন্দিরে নারীপ্রবেশ হলে দেবতারও মতিভ্রম হতে পারে, সে-দেশে ধর্ষণের বাস্তবতা অস্বাভাবিক নয়।

Advertisment

তাহলে, শেষপর্যন্ত এই নরকের দেশে কী করবে মেয়েরা? তারা কি সকলেই আমেরিকার লরেনা বাবিট বা ইরানের রেহানে জব্বারির মতো হাতের কাছে রাখবে একটি ধারালো ছুরি, আর চালিয়ে দেবে ধর্ষকস্বামী বা অচেনা-ধর্ষকের পুরুষাঙ্গ বা গলার নলিতে? কিংবা, তুরস্কের নেভিন ইলিদ্রিমের মতো গুলি করে মেরে ফেলবে ধর্ষককে, আর তার ছিন্নমুণ্ড নিয়ে পাগলপারা ছুটে বেড়াবে গ্রামের রাস্তায়? না কি হলিউডের সেই ভয়ংকর ছবির মতো পালটা-ধর্ষণ করবে ধর্ষককেই?

আরও পড়ুন, সত্যার্থীর ভাষণে বিপন্ন সঙ্ঘ

১৯৯৩ সালে টেক্সাসের চব্বিশ-বছর-বয়সি লরেনা ববিট রান্নাঘরের ছুরিতে ঘুমন্ত-স্বামী জন ওয়েনে ববিটের পুরুষাঙ্গকর্তন করেছিলেন। সে ছিল অতিকামুক ও ধর্ষণপ্রবণ। তারপর পুরুষাঙ্গটি টুকরো করে প্যাকেটে পুরে চলন্ত-গাড়ি থেকে ফেলেও দিয়েছিলেন অন্ধকার-মাঠে। স্বামীর প্রতি কতটা ঘৃণা ও আক্রোশ জমলে একজন স্ত্রী এমন নৃশংস হতে পারেন, তা ভেবে শিউরে উঠেছিল দুনিয়া। কিন্তু, মন শান্ত হলে হাসপাতালে ফোন করে ঘটনাটি জানান লরেনা। রাতদুপুরে মাঠ থেকে পুরুষাঙ্গখণ্ডগুলি উদ্ধার করে নিপুণভাবে জোড়া লাগানো হয়। রক্ষা পান ওয়েনে। ফের বিয়ে করে বউ পিটিয়ে জেলে যান। লরেনাকে কোনও শাস্তি দেয়নি আদালত।

কিন্তু, ইরানের আইন স্বভাবতই ক্ষমা করেনি ছাব্বিশ-বছরের রেহানে জব্বারি মলয়েরিকে। ২০০৭ সালের আগস্টে মোর্তজা আবদোলালি সারবান্দি নামে এক অন্দরসজ্জাকারীর সঙ্গে কফিশপে আলাপ হয়েছিল রেহানের। কাজ দেওয়ার অছিলায় মোর্তজা নিজের অফিসঘরে ডেকে এনেছিল উনিশ-বছরের রেহানেকে। সেখানেই তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করে সে। তার কবল থেকে নিস্তার পেতে হাতব্যাগের ছুরি বের করে রেহানা চালিয়ে দেন মোর্তজার গলার নলিতে। মরে যায় সে। সাত-বছর মামলা চলার পরে তেহরান-আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয় রেহানাকে। রাষ্ট্রসংঘ, অ্যামনেস্টি ইনটারন্যাশনাল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, গেটস্টোন ইনস্টিটিউটের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বা দারিয়ো ফো-র মতো নোবেলভূষণের আবেদনেও কর্ণপাত করেনি কট্টরবাদী ইরান। রেহানে অবশ্য জানিয়েছিলেন, তিনি আত্মরক্ষার জন্য সারবন্দিকে আঘাত করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু, অন্য-কেউ তাকে খুন করেছিল। দুটি-ঘটনা পারস্পরিক ঘটেছে। এই দাবি অবশ্য প্রমাণ করতে পারেননি রেহানার আইনজীবী। সাত-বছর জেলের কুঠুরিতে থেকে ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর ভোরবেলা ফাঁসি হয় রেহানার। রেহানাকে ফাঁসি না-দিলে, তা হত ইরানের গোঁড়া-পুরুষতন্ত্রের মস্ত-পরাজয়। আদালতের পক্ষে তা ছিল অসম্ভবই।

আমাদের মনে পড়ে তুরস্কের সেই  দুই-কন্যার মা অন্তঃসত্ত্বা ২৬-বছরের তরুণী নেভিন ইলিদ্রিমের ভয়াবহ-ঘটনাও। কাজের সূত্রে তাঁর স্বামী ভিন্‌-শহরে যেতেই তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়েছিল স্বামীর মেসো নুরেত্তিন গিদার। সে নেভিনের দুই ও ছয়-বছরের মেয়েকে অপহরণ ও খুন করার ও তাঁর অসংবৃত-ছবি গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আটমাস ধরে অসংখ্যবার তাঁকে ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন নেভিন। অবশেষে ধারাবাহিক-ধর্ষণ ও নিরন্তর-আতঙ্ক থেকে নিস্তার পেতে ২০১২ সালের ২৮ আগস্ট নেভিন গুলি চালিয়ে খুন করে নুরেত্তিনকে।

জবানবন্দিতে নেভিন জানান, ‘‘সেদিন সন্ধের পর বারান্দা থেকে দেখি, আমাদের বাড়ির পিছনের পাঁচিল বেয়ে উঠছে নুরেত্তিন। সে কখনও সদরদরজা দিয়ে আসত না। বুঝলাম, ঘরে এসে সে আবার আমাকে ধর্ষণ করবে। সহসা আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। একেই এই অবাঞ্ছিত ও আসন্ন-মাতৃত্ব নিয়ে গ্রামের সবাই আমাকে গণিকা বলে। আমি যখন গর্ভপাত করানোর জন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাই, তখন চিকিৎসকরা জানান, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমার তখন চোদ্দো-সপ্তাহ চলছে। দেশে দশ-সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাতের আইন রয়েছে। আমার উপায় ছিল না। আমি থানায় যেতে পারতাম, নুরেত্তিনের কথা জানাতে পারতাম স্বামী ও প্রতিবেশীদের। কিন্তু, নুরেত্তিন আমাকে চোখে-চোখে রাখত। বাড়ি থেকে বের হওয়া কঠিন ছিল। তাছাড়া, আমি জানি, স্বামী ও পরিজনরা তখন আমাকেই দোষারোপ করত। আমাকেই চরিত্রহীন বলত। পাঁচিলের উপর নুরেত্তিনকে দেখে চকিতে আমার মাথায় আগুন জ্বলে গেল। অপ্রকৃতিস্থর মতো ঘরের-দেওয়ালে-ঝোলানো শ্বশুরের রাইফেলটা নিয়ে টিপ করে গুলি চালালাম নুরেত্তিনের দিকে। সে পড়ে গেল। দ্বিতীয়-গুলিটি চালালাম তার পুরুষাঙ্গে। সে আর্তনাদ করল। তৃতীয়-গুলিটি চালালাম তার বুকে। বাগানের মধ্যে স্থির হয়ে গেল সে। তখনও আমার মাথার আগুন নেভেনি। মাংসকাটার ধারালো-চাপাতিটি নিয়ে ছুটে গেলাম বাগানে। নুরেত্তিনের মুণ্ডুটি ধর থেকে আলাদা করে চুলের গোছা ধরে রক্তাপ্লুত-মুণ্ডুটি নিয়ে দৌড়ে বেড়ালাম গ্রামের চারদিকে। আমি তখন পাগলের মতো বলছিলাম, ‘আমি পেরেছি। পেরেছি আমার পবিত্রতার প্রমাণ দিতে। এখন আমার অনাগত-সন্তানকে আর-কেউ বেজন্মা বলতে পারবে না।’’

নেভিন এখনও জেলে। চলছে তাঁর বিচারপর্ব। কেটে গেছে ছ-বছর।

নাকি, এই দেশের মেয়েদেরও হয়ে উঠতে হবে হলিউডের সেই বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক-থ্রিলার ‘দি গার্ল উইথ দি ড্রাগন ট্যাট্টু’-র নায়িকা লিসবেথ সালান্ডারের মতো, যে তার ধর্ষক নিলস জুরমানকে নকল-বন্দুকের নিশানায় বিছানাবন্দি করে পালটা-ধর্ষণ করেছিল নকল-পুরুষাঙ্গে, আর তার বুকে উল্কি কেটে লিখে দিয়েছিল, ‘আই অ্যাম এ স্যাডিস্টিক পিগ অ্যান্ড রেপিস্ট’? প্রশ্ন আছে, উত্তর নেই।

সম্প্রতি রাজস্থানের আলোয়ারে দ্রুতনিষ্পত্তি-আদালত সাতমাসের বালিকার উনিশ-বছরের ধর্ষককে পকসো-আইনে প্রথম মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। রাজস্থানে পকসো-আইনে এই প্রথম মৃত্যুদণ্ড। এর আগে মধ্যপ্রদেশে তিনমাসের দুই-শিশুধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। উল্টোডাঙ্গায় নাবালিকা-ধর্ষণেও মৃত্যুদণ্ড হয়েছে ধর্ষকের। নির্ভয়া-ধর্ষকদেরও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আদালত। সেই নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি। তার সঙ্গে যুক্ত হল আরও-চারটি মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা।

দেশে-বিদেশে ফাঁসির বিরুদ্ধে জনমতও সদাপ্রবহ সর্বোপরি, একজনকে ফাঁসি দিয়ে দশজনের মনে মৃত্যুভয় জাগাতে না-পারলে ফাঁসির উদ্দেশ্যই বিফল হয়ে যায়। অপরাধীরা এতদিনে জেনে গেছে, আইনের ফাঁক, দীর্ঘসূত্রিতা, রাজনৈতিক কারসাজিই তাদের অমোঘ-রক্ষাকবচ। অপরাধীদের মনোভাব পালটাতে মৃত্যুদণ্ড কোনওভাবেই সক্ষম নয়। কেননা, আমরা দেখেছি, রঙ্গা-বিল্লা-ধনঞ্জয়ের ফাঁসি কোনও প্রভাবই ফেলেনি ধর্ষকের মানসিকতায়। অন্যদিকে, ধর্ষণ ক্রমশ হয়ে উঠেছে এক রাজনৈতিক হাতিয়ার। কেবল তো তাপস পালের বিরোধীদের ঘরে ছেলে-ঢোকানোর হুমকিই নয়, মহিলা-সাংসদের নারীবিরোধী মন্তব্যে আমরা এখন বিস্মিত হতেও ভুলে গেছি। লিঙ্গবৈষম্য ও নারীবিদ্বেষ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে। এই নরকাবস্থায় কোথায় পালাবেন মেয়েরা? কতজনকে ফাঁসিতে ঝোলাবে জহ্লাদ?

কেবল মানবাধিকারের প্রশ্নেই নয়, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সাধারণ-লোকমতও বলে, মৃত্যু একরকমের নিস্তার, পরিত্রাণ। মৃত্যুর কোনও ক্লেশভোগ নেই। অপরাধীর মৃত্যুযন্ত্রণা তাৎক্ষণিক। কিন্তু, তাকে বাঁচিয়ে রেখে কঠোর-শাস্তি দেওয়া হলে, তা অনেক প্রভাববিস্তারী হতে পারে। আমেরিকার কয়েকটি প্রদেশে লিঙ্গকর্তনের শাস্তি আছে। ধর্ষককে যদি সমাজের মধ্যেই যৌনতাহীন করে বাঁচিয়ে রাখা যায়, তাহলে তা নিশ্চয়ই অন্যকেও শাস্তিভীত করতে পারে। কারাগারের অন্তরালবর্তী ফাঁসির খবর সাতদিনেই বাসি হয়ে যায়। অপরাধীদের আক্রোশও বেড়ে যায় তাতে। কিন্তু, জীবিত-অপরাধীকে যন্ত্রণাবিদ্ধ ও নিদর্শনযোগ্য করার অভিঘাত নিশ্চয়ই তীব্র হতে পারে। মহাভারতে দেবরাজ ইন্দ্রের অহল্যাধর্ষণে বৃহস্পতিমুনির শাপে ধর্ষক-ইন্দ্রের সারা-অঙ্গে ফুটে উঠেছিল সহস্র-যোনিচিহ্ন। বর্বরদের ফাঁসি বা লিঙ্গকর্তনের অমানবিকতা মেনে নিয়ে মহাভারত বা হলিউডের ছবিটির মতো ধর্ষকের ললাটে উল্কি কেটে তো লিখে দেওয়াই যায় ‘আমি ধর্ষক’।

তবে, এমনতরো শাস্তিও এ-দেশে অচিরেই হয়ে উঠতে পারে রাজনীতির অব্যর্থ-হাতিয়ার। কেননা, যে-দেশ হিন্দুতালিবানত্বে গোরক্ষার বাহানায় দলপিটুনিতে আকছার মানুষ মারতে পারে, সে-দেশে এমন আইনও হবে নিশ্চিত-আত্মঘাতী। কেননা, ও-দেশে হার্ভি ওয়াইনস্টাইনের মতো প্রভাবশালী-পুঙ্গবকে ধর্ষণের মামলায় জেলে যেতে হলেও এ-দেশে বাহুবলী-বিধায়ককে গ্রেফতার করতে বা বুদ্ধিজীবী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পদচ্যুত করতে মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর সবুজসংকেত লাগে, ধর্ষক-ধর্মগুরুদের শাস্তিতে তোলপাড় হয় দেশ, মন্দিরে মহিলাপ্রবেশের আইনি অধিকারের পরেও চলে শাসকদলের দাপাদাপি, ধর্ষণশহিদের পরিজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন রাজ্যের মন্ত্রী। ফলে, একদিন হয়তো আত্মরক্ষায় প্রতিহিংসই হয়ে উঠবেন মেয়েরা। সে-দিনের কথা ভেবে হাড় হিম হয়ে যায়।

rape rape law
Advertisment