২৪ ঘণ্টা পেরলেই নতুন বছরে পা। অতিমারী পর্বে ওয়েব প্ল্যাটফর্মই দর্শকদের বিনোদন দিয়ে গিয়েছে। একগুচ্ছ সিনেমা, সিরিজের ভীড়। তবে প্রেক্ষাগৃহের দরজা খুলতেই সিনেমার উপস্থিতি কমেছে ওটিটিতে। সেই জায়গায় ভীড় বাড়িয়েছে সিরিজ। তাই নতুন বছরে পা রাখার আগে একবার দেখে নেওয়া যাক ২০২২ সালে কোন বাংলা ওয়েব সিরিজগুলো ছক্কা হাঁকাল, আর কোনগুলো কন্টেন্ট ভাল থাকা সত্ত্বেও দর্শকদের মনে সেভাবে দাগ কাটতে পারল না।
কারাগার -- হইচই প্ল্যাটফর্মের এই সিরিজ যেভাবে তোলপাড় ফেলে দিল দুই বাংলায়, তা বাংলা সিরিজের ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত বললেও অত্যুক্তি হয় না! চঞ্চল চৌধুরির অসাধারণ অভিনয়েই বাজিমাত। কন্টেন্টও অসামান্য। গল্পে রহস্য-রোমাঞ্চ জিইয়ে রেখে দর্শকদের যেভাবে কারাগার পার্ট ২-এর জন্য অপেক্ষা করিয়েছেন পরিচালক সৈয়দ আহমেদ শাওকি, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। আর দর্শকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই বছরেই মুক্তি পেয়েছে সিজন ২। অতঃপর বাইশের সেরা বাংলা সিরিজের তালিকার শীর্ষে চঞ্চল চৌধুরির কারাগার-ই ঠাঁই পেল।
গোরা-- টলিপাড়ার অন্যতম সেরা অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী গোরা-তে গোয়েন্দার অবতারে ধরা দিয়েছেন। এই গোয়েন্দা চরিত্র আর পাঁচটা গোয়েন্দাদের মতো নয়। গোরা খানিক ভুলো-মনা, অগোছালো, বদমেজাজি, আপনভোলা। তবে রহস্যের সমাধান করার পদ্ধতিও এক্কেবারে আলাদা। কেসের তথ্য মনে রাখার জন্য সে গান গায়। সুরে সুরেই মনে রাখে। তবে গোরা আদতে প্রচণ্ড বেসুরো। ঋত্বিক বরাবরই চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে ভেঙেছেন। এখানেও তাই। এই সিরিজের আরেকটা প্রাপ্তি গোয়েন্দার অ্যাসিসট্যান্ট সুহোত্র মুখোপাধ্যায়।
ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি-- প্রথম 'ছিন্নমস্তার অভিশাপ' দেখার পরই সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের দ্বিতীয় ফেলুদা সিরিজ নিয়ে কৌতূহল ছিল দর্শকদের। কারণ, ফেলু মিত্তিরের ভূমিকায় টোটা রায়চৌধুরি কিংবা তোপসের শরীরি ভাষা অনেকেরই পছন্দ হয়নি। সেক্ষেত্রে সমালোচনাও হয়েছে প্রচুর। তাই 'ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি'কে বাইশের অন্যতম চর্চিত সিরিজের আখ্যা দিলেও ভুল হবে না!
খোলামকুচি-- সৌরভ পালোধি পরিচালিত প্রথম ওয়েব সিরিজ। ইউটিউবে উরিবাবা প্ল্যাটফর্মে পেয়ে যাবেন। কৌশোর পেরিয়ে তারুণ্যের দুষ্টু-মিষ্টি দিনের গল্প দেখানো হয়েছে। একেবারে বাস্তব সময়ের কথা বলে এই সিরিজ। বিপরীত মেরুর দুই মানুষের এক ছোট্ট শহরে বাসের গল্প। তাদের প্রেমে পড়া, সম্পর্কের ভাঙাগড়া, মান-অভিমান সব উপকরণই রয়েছে এতে। বিশেষ করে নজর কেড়েছে মুখ্য ভূমিকায় দুই তারকা অনিন্দ্য সেনগুপ্ত ও শ্রেয়া ভট্টাচার্য। গল্প বলার ভঙ্গীও বেশ সাবলীল।
বিরহী ২-- এই সিরিজও উরিবাবার কন্টেন্ট। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের পয়লা ওয়েব সিরিজ। গতবছর প্রথম মুক্তি পেয়েছিল। গ্ল্যামারাস গল্পের ভীড়ে মফঃস্বলের একটা নিখাদ গল্প। কৃষ্ণ-রাধার জটিল জীবনে সরলতার গল্প। যে ভূমিকায় নজর কেড়েছেন সায়ন ঘোষ ও শতাক্ষী নন্দী। পুরনো সিজনের মতোই স্বল্প বাজেটের নতুন সিরিজও তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অনুরাধা মুখোপাধ্যায়, অমিতা সাহারাও রয়েছেন। পরিচালক প্রদীপ্তর পাশাপাশি এই সিরিজের যৌথ প্রযোজক ঋত্বিক চক্রবর্তী। সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো শোরগোল ফেলে দিয়েছিল বিরহী।
একেনবাবু এবার কলকাতায়-- ভোজনবিলাসী, গোলগাল মিষ্টি চেহারার এই গোয়েন্দার রহস্য সমাধান করার পদ্ধতি বেশ মজার। যে ভূমিকায় অভিনয় করে বাংলা সিরিজপ্রেমীদের মন কেড়েছেন একেনবাবু. বড়পর্দায় তাঁর সমাগম হলেও সিরিজেও তার জনপ্রিয়তা কম নয়। একেনবাবুর দুই সঙ্গী সুহোত্র মুখোপাধ্যায় এবং সোমক ঘোষকে নিয়ে এবার তাঁর অভিযান শহর তিলোত্তমায়। চর্চিত দশে এই সিরিজের নাম না রাখলে অবিচার করা হয়।
বোধন-- সন্দীপ্তা সেন ও দীতিপ্রিয়া রায় অভিনীত এই সিরিজের গল্প নারীশক্তি নিয়ে। 'অর্ডিনারী উইম্যান বিশাল ডেঞ্জারাস…', সিরিজের এই সংলাপ গোটা থিমটাকেই ধরে। গণধর্ষিতা এক তরুণীর সমাজের কাছে উত্তরণের গল্প। সন্দীপ্তা, দীতিপ্রিয়ার অভিনয় সাবলীল হলেও দুর্বল চিত্রনাট্যের জেরে হইচই-এর এই সিরিজ ছক্কা হাঁকাতে পারল না।
ব্যাধ-- যাঁরা থ্রিলার ভালবাসেন তাঁরা দেখতে পারেন এই সিরিজ। তবে ব্যাধ-এর মূল সম্বল রজতাভ দত্ত, অনির্বাণ চক্রবর্তী ও সৌমেন বসুর অভিনয়। গল্পের নতুনত্ব-ই এই সিরিজকে আলাদা করে।
সম্পূর্ণা-- ম্যারিটিয়াল রেপ- এই সিরিজের মূল বিষয়। বিবাহিতা নারী কি কখনও স্বামীর কাছে ধর্ষণের শিকার হতে পারেন? আজও সমাজে প্রশ্ন ওঠে। তবে এমন ঘটনার শিকার হলে ঘরের লোকই কেমন শত্রু হয়ে যায়, সেই গল্পও দেখানো হয়েছে হইচই-এর এই সিরিজে। অভিনয়ে নজরে কেড়েছেন সোহিনী সরকার ও রাজনন্দিনী দত্ত।
সুন্দরবনের বিদ্যাসাগর-- হইচই-এর এই সিরিজ নিয়ে খুব একটা কথা হয়নি। তবে সুন্দরবনে বিধবাদের জমি কুমীরখালি নিয়ে যে গল্প দেখানো হয়, তাতে কিঙ্করের ভূমিকায় ঋদ্ধি সেন ও বিধবা বান্ধবীর ভূমিকায় উষসীর অভিনয় বেশ সাবলীল। উল্লেখ্য়, কন্টেন্ট ভাল হলেও পরিচালক চিত্রনাট্য়ের দিকে আরেকটু নজর দিলে মন্দ হত না। তাই ভিন্ন স্বাদের হলেও দৌঁড়ে পিছিয়ে গেল।