একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে একাধিক তারকা রাজনীতির ময়দানে নাম লিখিয়েছিলেন। ভোটবাক্সে সবুজ শিবিরকে টেক্কা দিতে বিজেপিতেও তারকামুখের সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। অনেকেই আবার মা-মাটি-মানুষ ছেড়ে মোদীমন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের মার্কশিটে পদ্ম শিবিরের ধরাশায়ী হওয়ার মাসখানেক ঘুরতে না ঘুরতেই সেইসব তারকাদের মোহভঙ্গ হয়েছে! যাঁরা একুশের নির্বাচনের আগে গেরুয়া পতাকা তুলে ধরেছিলেন, তাঁরাই কিনা ফের ব্যাকফুটে পিছিয়ে এলেন! বিজেপির সঙ্গে সমস্তরকম সম্পর্ক ছিন্ন করলেন যেসব তারকারা, একনজরে দেখে নিন তাঁদের 'পদ্ম-পঞ্জিকা'।
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়- বিধানসভা ভোটের মুখে স্বপন দাশগুপ্ত, দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীর উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দেন শ্রাবন্তী। বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রে পদ্ম শিবিরের হয়ে ভোটে লড়লেও তৃণমূলের হেভিওয়েট পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হন অভিনেত্রী। এর মাসখানেক বাদেই বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন শ্রাবন্তী।তনুশ্রী চক্রবর্তী - বিধানসভা ভোটের আগে যোগদান। শ্যামপুরের মতো শক্তঘাঁটিতে পদ্ম ফোটানোর ভার বর্তেছিল তনুশ্রীর ওপর। কিন্তু নির্বাচনী মার্কসিটে প্রভাব ফেলতে পারেননি। পরাজিত হওয়ার মাস দুয়েকের মধ্যেই রাজনীতির ময়দান থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন টলিউড অভিনেত্রী।বাবুল সুপ্রিয়- একদা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ। বাংলায় পদ্ম শিবিরের শক্ত খুঁটি বললেও অত্যুক্তি হত না তখন। তবে বিধানসভা ভোটের পর উলট-পুরাণ। মোদীর মন্ত্রীসভার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ পড়ায়, বেজায় ক্ষুব্ধ হন। শেষমেশ বিজেপি ছেড়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তৃণমূলে যোগ দেন এই তারকা রাজনীতিবিদ। তার ১ মাস পার হতেই বিজেপির সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন বাবুল সুপ্রিয়।বনি সেনগুপ্ত - জল্পনা ছিল অনেক আগে থেকেই। তবে সোমবার, ২৪ জানুয়ারি সমস্ত জল্পনায় সিলমোহর বসিয়ে বিজেপি ছাড়লেন অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত। তাঁর ক্ষোভ, "বিজেপি কথা রাখেনি। বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য যে উন্নয়নের কথা বলা হয়েছিল তা আর হবে বলে মনে হয় না আমার।"অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়- উনিশের লোকসভা নির্বাচনের পর দিল্লীতে গিয়ে একঝাঁক তারকা বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন। তার মধ্যে অনিন্দ্যও ছিলেন। লক্ষ্য ছিল, বাংলায় একুশের বিধানসভা ভোট। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে পদ্মশিবিরে যোগ দিলেও পরে ক্ষুব্ধ হয়েই দল ছাড়েন তিনি।রূপা ভট্টাচার্য- অনিন্দ্যর মতো রূপা ভট্টাচার্যও নিঃশব্দেই বিজেপি ত্যাগ করেন। আচমকাই ইন্ডাস্ট্রির ২ তারকাকে গতবছর যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিনের বর্ষপূতির মিছিলে দেখে হতবাক হয় রাজনৈতির মহল। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি বিজেপি ছেড়ে ফের পুরনো ঘাঁটিতে ফিরেছেন দুই বামপন্থী মনোভাবাপন্ন অভিনেতা? পরে অবশ্য নিজেরাই তাতে সিলমোহর বসান।দলীয় কাজে সেভাবে সক্রিয় না থাকলেও রয়ে গেলেন যাঁরা --রুদ্রনীল ঘোষ- একদা সক্রিয় বামপন্থী অভিনেতা তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর দলের গুরুদায়িত্বেও ছিলেন। তবে একুশের নির্বাচনে বিজেপিতে যোগ দেন। গিরগিটি, দলবদলুর মতো নানা কটাক্ষ শুনতে হয়েছে। মমতা-গড় ভবানীপুরে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে বিপুল ভোটে হেরেও বিজেপি ছেড়ে যাননি।যশ দাশগুপ্ত- লোকসভা ভোটের মুখে বিজেপিতে যোগ দিয়ে টিকিট পেলেও লাভ হয়নি। পরাজিত হয়েছেন। বর্তমানে তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহানের সঙ্গে সুখের ঘরকন্না করছেন যশ। তবে বিজেপি ছাড়েননি।হিরণ চট্টোপাধ্যায়- ক্ষোভ উগরে বিজেপির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়েছিলেন বটে! তবে পদ্মে এখনও মোহভঙ্গ হয়নি অভিনেতা হিরহণ চট্টোপাধ্যায়ের। বর্তমানে তিনি খড়গপুর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক।পায়েল সরকার- বেহালা পশ্চিম কেন্দ্রে তৃণমূল হেভিওয়েট শোভন-পত্নী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে বিপুল ভোটে হেরেছিলেন বিজেপির তুরুপের তাস পায়েল। তবে শ্রাবন্তী, তনুশ্রীর মতো সতীর্থরা দল ছাড়লেও পায়েল এখনও বিজেপিতেই রয়ে গিয়েছেন। যদিও দলীয় কাজে সেভাবে দেখা যায় না অভিনেত্রীকে।পার্ণো মিত্র- উনিশের লোকসভা ভোটে বিজেপির জয়ের পরই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বরানগর কেন্দ্র থেকে লড়লেও পরাজিত হয়েছেন। তবে ময়দানে হোক কিংবা সোশ্যাল দুনিয়ায়, কোনওখানেই রাজনৈতিক মন্তব্য করতে দেখা যায় না পার্ণো মিত্রকে।কৌশিক রায় - 'খড়কুটো' খ্যাত অভিনেতা কৌশিক দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। টিকিট পাননি! তবে তিনিও নিঃশব্দেই বিজেপিতে রয়ে গিয়েছেন।