জনপ্রিয় অভিনেতা রজতাভ দত্ত খুব কম বয়সে (নবম শ্রেণি) একটি দুর্ঘটনায় তাঁর বাবাকে হারান। সেই থেকেই 'মা' বেলাদেবীই তাঁর অবলম্বন। আজও তিনি সল্টলেকে যে বাড়িতে থাকেন সেটি তাঁর মায়ের তত্ত্বাবধানেই তৈরি। নাম- 'বেলাভূমি'।
রজতাভরা দুই ভাই। এর মধ্যে রজতাভ ছোট। একটি সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানিয়েছেন, তাঁর বাবার মৃত্যুর পর মা সেভাবে কাঁদেননি। ডিপ্রেশন গ্রাস করছিল তাঁকে। তবু সন্তানদের মানুষ করতে এবং সংসারের কথা মাথায় রেখে ধীরে ধীরে তিনি নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসেন।
রজতাভর কথায়, মা তাঁদের উপর কখনো কিছু চাপিয়ে দিতেন না। এমনকি, রজতাভ হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিলেও সেভাবে ক্ষোভ বা দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেননি বেলা দেবী।
রজতাভর চাকরি ছাড়ার বৃত্তান্তটি বেশ নাটকীয়। বরাবরই অভিনয়ের প্রতি বিশেষ ঝোঁক ছিল তাঁর। সে সময়ে নাটকে অভিনয় করতেন। আর নাটকের শো থাকলে অফিসে হাফ ছুটি নিতেন অভিনেতা।
এরকমই একদিন তিনি সে সময় যে সংস্থায় কাজ করতেন সেখানকার ম্যানেজার রজতাভকে ডেকে বলেন, এভাবে চলতে পারে না। রজতাভও তা মেনে নেন এবং বলেন, "আমার সিগারেট শেষ হয়ে গিয়েছে, একটা সিগারেট দিন এবং একটা সাদা কাগজ দিন। আমি রেজিগনেশন দেব"।
সেদিন চাকরি ছেড়ে বেরিয়ে বিশেষ স্বস্তি বোধ করেন অভিনেতা। অফিস থেকে বেরিয়েই পরপর তিনটি সিনেমা দেখেন রজতাভ।
রাতে বাড়ি ফিরে মা-কে চাকরি ছাড়ার কথা বলায় মা শুধু তাঁকে বলেছিলেন, 'কিছু বলে যাসনি তো'! ব্যাস, এটুকুই।
রজতাভ যখন চাকরি ছাড়েন তখন তিনি নাটকে অভিনয় থেকে রোজগার করতেন না। আর সিনেমা-টিভির কাজ তো অনেক দূরের কথা। তাঁর মা-ও উপার্জন করতেন না। অর্থাৎ সংসারে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ছিল।
রজতাভ জানিয়েছেন, তাঁর মা আস্তিক হলেও তিনি নিজে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে আস্থাশীল নন। মা জীবিত থাকাকালীন তিনি মায়ের সব রকম সাধ পূর্ণ করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে, মা-কে জানিয়েই দিয়েছিলেন যে তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে হিসাবে তিনি মুখাগ্নি বা শ্রাদ্ধ করবেন না। কারণ, এসবে তাঁর বিশ্বাস নেই। যা বলেছিলেন, বাস্তবে তাই করেছেন রজতাভ। রজতাভর দাদাই পারলৌকিক কাজ করেছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর নিরামিষ ভোজন বা অশৌচ পালনও করেননি অভিনেতা।
রজতাভর শুধু একটাই আক্ষেপ, মাকে তাঁর প্লেনে চড়ানোর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু, মায়ের শরীর নানা কারণে দুর্বল থাকায় তা আর হয়ে ওঠেনি।