প্রতিহিংসা আমাদের মানুষের মধ্যে সাধারণ, কিন্তু আপনি কি কখনও পাখির প্রতিশোধ নেওয়ার গল্প শুনেছেন? পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতাও কাকের রয়েছে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, কাক যদি মানুষের সঙ্গে শত্রুতা করে তবে তারা এটি ৭ বছর মনে রাখতে পারে এবং সময় হলে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টাও করে।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর জন মার্জলাফের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০০৬ সালে, কাক সত্যিই প্রতিশোধ নেয় কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য তিনি একটি পরীক্ষা চালান। একটি ভীতিকর 'দানব মুখোশ' পরা, অধ্যাপক জন সাতটি কাককে ফাঁদে ফেলে এবং তাদের শনাক্ত করার জন্য তাদের পালকের উপর চিহ্নিত করে। অতঃপর তাদের কোনও ক্ষতি না করেই ছেড়ে দেন।
কিন্তু এর পরেও কাক তাঁকে তাড়া করতে থাকে। প্রফেসর যখনই মুখোশ পরে ক্যাম্পাসে বের হতেন তখনই কাক তাঁকে আক্রমণ করত। এমনকি অন্যান্য কাকরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেয় এবং অধ্যাপককে আক্রমণ করতে শুরু করে এবং এটি সাত বছর ধরে চলতে থাকে।
২০১৩ সালের পর ধীরে ধীরে কাকের রাগ কমতে থাকে। তারপরে গত সেপ্টেম্বরে, ১৭ বছর পর, যখন মার্জলাফ মুখোশ পরে বাইরে পা রাখেন, তখন কাকরা তাঁকে আক্রমণ করেনি বা তাঁর প্রতি মনোযোগও দেয়নি। প্রফেসর মার্জলাফ এখন এই আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা নিয়ে তাঁর গবেষণা প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন।
প্রফেসর মার্জলাফ তাঁর গবেষণায় দেখেছেন যে কাকের মস্তিষ্কের একটি অংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের 'অ্যামিগডালা'র মতো, যা আবেগ বোঝা এবং মনে রাখার জন্য দায়ী। তিনি দেখতে পেলেন যে কাক কেবল মানুষের আচরণই মনোযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করে না, তাদের শনাক্ত করার ক্ষমতাও রাখে।
কাকরা যদি একজন মানুষকে ভয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে, তবে তারা সেই মানুষকে দীর্ঘকাল মনে রাখে এবং তাদের সম্প্রদায়ের অন্যান্য কাকের প্রতি তাদের শত্রুতা প্রসারিত করে। মনে হয় যেন তারা ভয়ের সিনেমার দৃশ্যের মতো মানুষকে তাড়া করে।
জিন কার্টার, সিয়াটলের একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ, এটিও অনুভব করেছিলেন যখন কাকগুলি তাঁকে তাঁর বাড়ির বাইরে থেকে সারা বছর ধরে তাড়া করেছিল। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে কাক শুধু বুদ্ধিমান নয়, তাদেরও মানুষের মতো আবেগ আছে। তাদের স্মৃতি এবং প্রতিশোধ বোধ তাদের পাখির জগতে অনন্য স্থান দেয়।