-
কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখেছিলেন, ‘রেতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে কলকেতায় আছি’। এ বঙ্গে মশার দাপট আজও অমলিন, ম্যালেরিয়াও স্বমহিমায়। বর্ষা আসতে না আসতেই মশারা কেমন মাথা ঝাঁকিয়ে খোল করতাল নিয়ে বেরিয়ে পরে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
ম্যালেরিয়া ইতিমধ্যে কিছু জায়গায় দাপট দেখানোও শুরু করেছে। দিন কয়েক আগে মশার হাত থেকে রক্ষে পায়নি স্বয়ং রাজ্যের রাজ্যপালও। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
অনেকে হয়ত জানেন না এই ম্যালেরিয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্যে মশার বিরুদ্ধে প্রথম কামান দেগেছিল বাংলারই এক দেশীয় ওষুধ কোম্পানি। নাম বি.কে পাল অর্থাৎ বটকৃষ্ণ পাল। ওষুধটি ‘এডওয়ার্ডস টনিক।’ এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
কালের গর্ভে অনেক ওষুধ তলিয়ে গেলেও সরকারি লাইসেন্স সমেত দেড়শো বছর ধরে আজও বেঁচে রয়েছে বাঙালির তৈরি ‘এডওয়ার্ডস টনিক।’ এক সময়ে বাক্সের গায়ে ইংরেজিতে লেখা থাকত— ‘ফর ম্যালেরিয়া অ্যান্ড ক্রনিক ফিভার।’ পুরনো বিজ্ঞাপন দাবি করত—‘ম্যালেরিয়া ও সর্ব্বজ্বরের মহৌষধ’। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
অনুপকুমার পাল বি.কে পালের চতুর্থ প্রজন্ম। অনুপবাবুই এখন ব্যবসা সামলান। তিনি বলেন, বটকৃষ্ণের শুরুটা কিন্তু এত ঝাঁ-চকচকে ছিল না। বলা ভালো, নিজের অসম্ভব পরিশ্রম ও তীক্ষ্ণ ব্যবসায়িক বুদ্ধি বটকৃষ্ণ পালকে মসনদে দাঁড় করিয়েছিল। হাওড়ার শিবপুরের এক দরিদ্র পরিবারে বেঁড়ে ওঠা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
কলকাতার শোভাবাজারে মামার বাড়ি চলে আসেন মাত্র ১২ বছর বয়সে। টাকা রোজগার করতে হবে, মামাদের সঙ্গেই কাজ শুরু করলেন। বড়বাজারে বিভিন্ন মশলার কাজও চলছিল দিব্যি। সেসব ছেড়ে আফিমের দোকান খোলেন তরুণ বটকৃষ্ণ। মাত্র ১৬ বছর বয়স, তখনও তাঁর কৈশোরকাল যায়নি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
আর সেই সময় ব্রিটিশ সাহেবদের কল্যাণে আফিম রীতিমতো বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল। প্রচুর লাভ, কিন্তু একসময় ছেড়ে দিলেন এই ব্যবসা। পাটের ব্যবসা ধরে সেটাও ছেড়ে দিলেন। মন টিকছে না কোথাও। অন্য কিছু করার তাগিদ লেগেই ছিল। অ্যালোপ্যাথির ব্যবহার তখন বাড়বাড়ন্ত। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
একটানা কথা বলতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছিলেন ষাটোর্ধ্ব অনুপকুমার। একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন, বটকৃষ্ণ দোকান তো দিলেন কিন্তু খরিদ্দার কই? একদিন দোকানে এলেন এডওয়ার্ড সাহেব। ওষুধ কিনে ফেরার সময় নিজের টাকা থলিটি ফেলে যান দোকানেই। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
পরের দিন টাকার থলিটি বটকৃষ্ণ ফেরত দিলে সাহেব খুশি হয়ে এডওয়ার্ড টনিকের ফর্মুলা বলে দিয়ে যান বটকৃষ্ণকে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
১৮৫৫ সাল থেকে এই ওষুধ নিজের হাতে বানিয়ে বিক্রি শুরু হল। তিনিই প্রতিষ্ঠা করলেন বটকৃষ্ণ পাল ফার্মাসিউটিক্যালস। এরপর ফিরে তাকাতে হয়নি। গোটা ব্যবসার জগত কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন বটকৃষ্ণ পাল। যেন নিজেই ঘোষণা করলেন বিপ্লবের। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
বাংলা, ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও চলে গেল তাঁর ওষুধ। বিক্রি বাট্টায় বিশ্বের তাবড় ফার্মেসি কোম্পানিকে একসময় ছাপিয়ে গিয়েছিল বি কে পাল অ্যান্ড কোং। ১৯০৯ সালের এনসাইক্লোপিডিয়াতে এশিয়ার ওষুধ প্রস্তুকারকদের মধ্যে নাম ছিল কলকাতার এই বটকৃষ্ণ পালেরও। একপ্রকার বিশ্বজয়ই বটে! নেতাজি থেকে গান্ধীজি সকলেই এই দোকানে এসে ঘুরে গিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায় এই বি কে পালের দোকানে বসে রোগী দেখে গিয়েছেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
রোগী দেখার ঘরের পাশাপাশি রয়েছে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অপারেশন কক্ষ। এমনকি সার্জিকাল ছুরিকাঁচিও তৈরি করত এই প্রতিষ্ঠান। ওষুধের দোকানটি এখনও চালু রয়েছে, মধ্যরাতে দড়ি ধরে ঘণ্টা বাজালে পেয়ে যাবেন অক্সিজেনও। কিন্তু অতীতের সেই জমকালো আভিজাত্যে এখন একটু ধুলো জমেছে। তবুও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে বি কে পালের স্থাপত্য। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
