-
‘বাবুমশায় আমি বাঘ-ভালুক নই। আমি ছিনাথ বহুরূপী’। শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত উপন্যাসের সেই বহুরূপীর কথা অনেকেরই জানা। বাংলা সাহিত্যের বাইরেও চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায় বা ঋত্বিক ঘটকের ফ্রেমে অন্য মাত্রা পেয়েছে বহুরূপী। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
সত্যজিৎ পরিচালিত ‘কাপুরুষ মহাপুরুষ’ ছবিতে রবি ঘোষের কালী সাজ সমাজের কুসংস্কারের ভণ্ডতাকে প্রকট করে তোলে। আবার ঋত্বিক ঘটক তাঁর সুবর্ণরেখা ছবিতে বহুরূপী চরিত্রের মাধ্যমে দেশভাগ ও উদ্বাস্তু সমস্যার ছবি তুলে ধরেছেন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
কখনও শিব, কখনও কালী বা নানান পৌরাণিক চরিত্রকে মুখে রং মেখে ফুটিয়ে তোলেন বহুরূপীরা। তবে, গ্রামের মেঠো পথ অথবা গৃহস্থের বাড়িই তাঁদের অভিনয়ের মঞ্চ। এক অঙ্গে যার অনেক রূপ। কয়েক বছর আগেও ওঁরা শহরে আসতেন। সকালবেলায় পাড়ায় ভগবানের নানা রূপে, কখনও বা চড়কের মেলায়, চৈত্র শেষে জেলেপাড়ার কিংবা কালীঘাটের সং সেজে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
নানা রূপ ধারণ করে দর্শকদের নজর কাড়তেন। বাংলার এই প্রাচীন লোকশিল্পের বয়স কত তা অনেকের অজানা। এই বহুরূপীরা প্রাচীন লোকসংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখলেও এই শিল্পীরা মর্যাদা পাননি। অনটন নিত্য সঙ্গী। আজ এই শিল্প প্রায় হারাতে বসেছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
শহরের বহুরূপীদের আনাগোনা এখন চোখে পরে না। তবে এই শিল্পকে শহরের মানুষজন নিজের মতন করে তৈরি করে নিয়েছেন। যেমন শিল্পী কৃষ্ণ বৈরাগী। একালের বহুরূপী। আবার বলা যেতে পারে জীবন্ত মূর্তি শিল্পী বা ‘লিভিং স্ট্যাচু আর্টিস্ট’। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকতে পারেন। চোখ পাতা পর্যন্ত না নড়িয়ে। অনেক এদের ‘বাস্কিং’ বলে ইংরাজিতে যার অর্থ ‘রাস্তা বা অন্য কোনও জনপরিসরে ডোনেশন পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের পারফর্মেন্স করেন। এই ‘বাস্কিং’ কিন্তু ভিক্ষে করা নয়। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
বিদেশে এই শিল্পীদের কদর থাকলেও এই দেশে তেমন একটা নেই। কৃষ্ণ বৈরাগীর অবস্থাও ঠিক তেমন। চার্লি চ্যাপলিন থেকে মিলখা সিং। রাজা রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সবই সাঁজতে পারেন। তার এই শিল্পসত্ত্বা মুগ্ধ করার মতন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
এই শহরের পথে পথে কৃষ্ণ বিচিত্র সব সাজে ঘোরেন। কখনও মার্ক্স, কখনও রামমোহন!। তিনি একটি জীবন্ত ম্যানেকুইন। কৃষ্ণ বৈরাগী বলেন, আগে ঠাকুর দেবতার বাজার ছিল ভালোই। বাংলার প্রাচীন বহুরূপী শিল্পীরা শিব কালী সেজেই তো রোজগার করতেন। এখন এসবের বাজার নেই। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
অনুষ্ঠান বাড়িতে চার্লি সেজেই দু পয়সা ইনকাম হয়। ছোটবেলায় এক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যেমন খুশি তেমন সাজো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল। এরপর থেকে বহুরূপে সাঁজতে শুরু করেন। এই বহুরূপী সেজে নিজের অঞ্চলে পরিচিত হয়েছেন বহুরূপী নামেই। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
২০১৯ পর্যন্ত কাজের চাপে ঘরে এসে খাওয়ার সময়টুকুও পেতেন না। করোনার পর থেকে এসবই শেষ হয়ে গিয়েছে। সারাদিন ঘরে বসা। যা সঞ্চয় ছিল সবটাই শেষ। ‘আমি শিল্পী। সাজাই আমার শিল্প। অন্য কাজ করতে পারব না এই কাজ করেই সংসার চালাই। কিন্তু করোনার চক্করে হাতে গত বছর একেবারেই কাজ ছিল না। মাস দুয়েক হল হাতে কাজ আসতে শুরু করেছে।’ এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
ঠাকুর দেবতার সাজই কাজ পেতে সাহায্যে করছে। জানান, স্ট্যাচু শিল্পী কৃষ্ণ বৈরাগী। বাগুইআটির জগত্পুরের ছোট্ট ঘরেই নিজের স্বপ্নের দুনিয়া। এই ঘরেই রাখা রয়েছে তার যাবতীয় সব কস্টিউম। অনুষ্ঠানে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন দশ থেকে বারো ঘণ্টা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
তার মতে স্ট্যাচু অবস্থায় যদি তাঁকে কেউ চিমটি কাটে, ইঁট মারে বা শরীরে পিঁপড়ে ছেড়ে দেয় তাও স্ট্যাচুর কোন নড়চড় হবে না। সারাদিনের রোজগার দু থেকে তিন হাজার টাকা। কাজের প্রতি গভীর ভালবাসায় তার মূল সম্পদ। এছাড়াও তাঁর মধ্যে রয়েছে অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা এবং সুরেলা গলা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
নিজের হাতের বানানো এক তারাতেই গেয়ে ওঠেন নানান ফোক গান। তাঁর অসাধারণ গানে মুগ্ধ হয়ে খুশি হয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তীও। কৃষ্ণের এরকম প্রতিভা দেখে বাংলা ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
টলিপাড়ার অন্যতম নায়ক দেব দিতে চেয়েছিলেন চাকরি। কিন্তু তিনি চাকরি করতে নাকচ করে দিয়েছিলেন। তাঁর মতে শিল্পী মানুষ কখনই বদ্ধ হয়ে থাকতে পারে না। তাহলে শিল্পীসত্তাটাই হারিয়ে যায়। দিন কয়েক পরেই কালীপূজো। শুরু হয়ে গিয়েছে তারই প্রস্তুতি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
কালীঠাকুর অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির সূচনা করে। ঠিক তেমনি কয়েকটা জায়গা থেকে জ্যান্ত কালী আর রামকৃষ্ণ সাজার ডাক পেয়েছেন কৃষ্ণ। কালী ঠাকুর যেন তাকে আশীর্বাদ করেছেন। এখন থেকেই চলছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অনুশীলন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
কালী’র মেকআপ আর কস্টিউমে নিয়ে নিজের এলাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। উৎসাহে সবাই তাকে দেখতে ভিড় করছেন। দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি মানুষ না মূর্তি। মহামারী শুরুর আগে পর্যন্ত পাড়ার সকলে কৃষ্ণকে এভাবেই দেখতে অভ্যস্ত ছিল। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
গত দেড় বছর কাজ ছিল না। এই শিল্পীকে নানা সাজে দেখাও যেত না। কালীর পুজোর হাত ধরে এই বহুরূপীর কাজ পাওয়া গেছে। তাতে নিজের সেরাটাই তুলে ধরতে ব্যস্ত। তার জন্যে কোন খামতি রাখা যাবে না। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
কৃষ্ণ বৈরাগীর আক্ষেপ বিদেশে আমাদের মতন শিল্পীদের অনেক সাহায্যে করেন দুর্ভাগ্যের বিষয় এই দেশে এসব কিছুই হয়না। বাংলার সব থেকে পুরনো লোকশিল্পের মধ্যে অন্যতম এই বহুরূপীরা। শিল্পীরা অর্থ কষ্টের জন্যে বর্তমানে এই পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
আগে ভগবানের চরিত্রে সাজলে লোকে ভক্তিভরে দেখতো প্রণামী দিত এখন এসবের কিছুই হয় না। তবে সুদিন ফিরবে একজন শিল্পী তার যথার্থ মর্যাদা থেকে কোনদিন বঞ্চিত হয় না। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
