সিগারেট-সুরা-সঙ্গীত-প্রেম-মিছিল আর মৃত্যুর কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই শহর কলকাতায়। ঠিক তেমনি চায়েরও। যখন মন চাই ইচ্ছে হলেই এক কাপ মাটির ভাঁড়ে ধোঁয়া ওঠা চা। ক্রিকেট থেকে কূটনীতি, রকেট সায়েন্স থেকে বাজেট কলকাতার বাঙালি কত কিছুই জেনে ফেলে এই চা এর ঠেকে। বাঙালি এবং চা দুজনেই একেওপরের পরিপূরক। তাই বাংলার নানা জায়গায় ২৪x৭ সব সময়েই সব জায়গাতেই পাওয়া যায় হরেক কিসিমের চা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ -
কেউ পছন্দ করেন আদা-চা, আবার কারও দুধ চা। একেক রুচির মানুষ একেক রকম। কলকাতার এঁদো গলির ভিতর এরকম চায়ের দোকানেই লুকিয়ে থাকে কত ইতিহাস। এসপ্লানেড থেকে, টিপু সুলতান মসজিদকে ডান হাতে রেখে, বেন্টিক স্ট্রিটে সামান্য এগোলেই পড়বে চিনেদের জুতোর দোকান। এই দোকানগুলোর ঠিক উলটো ফুটেই রয়েছে এরকমই এক চায়ের দোকান। তামার ২০ লিটারের মস্ত জলের 'ট্যাঙ্ক' থেকে গলগল করে বেরোচ্ছে ধোঁয়া। ট্যাঙ্কের মতন দেখতে এই পাত্র। অনেকে এই দোকানকে ট্যাঙ্কি চায়ের দোকান নামে চেনে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
সকাল থেকে সন্ধ্যে দোকানের সামনে মানুষের ভিড়। বসার কোনো ব্যবস্থা নেই, ফুটপাথে দাঁড়িয়েই খাচ্ছেন চা! যদিও এর আশে পাশে চায়ের দোকান কম নেই, তাও এই চায়ের দোকানের জনপ্রিয়তা রয়েছে তুঙ্গে। তার কারণ এই দোকানের চা খেলে গ্যাস অম্বলের কোনও সমস্যা তো হবেই না বরং পেটের জন্যে হবে উপকার। এমনটাই গ্যারান্টি এ চা দোকানের মালিকের। গত ৯৮ বছর ধরে পেট রোগা বাঙালিকে এমনই চা খাইয়ে অবাক করে দিয়েছে এই দোকান। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ -
এখানে চা তৈরি হয় তামার এক বিশাল পাত্রে। ব্রিটিশদের থেকে ধার করে চা খেতে শেখার পর থেকে সকালে, বিকালে, কাজের ফাঁকে একবার এক কাপ চা চক্রে যোগ না দিলে ঠিক জমে না। আবার ভেজাল খেয়ে খেয়ে বাঙালির এমনই অবস্থা যে, একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই গ্যাস, অম্বল, বুক জ্বালা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
তাই অনেকেই আজকাল দুধ চা থেকে সরে গিয়েছেন লিকার চায়ের দিকে। ওতে হয় না অম্বল, ভালো থাকে শরীর। এতেই স্বস্তি। কিন্তু বেন্টিক স্ট্রিটের এই চায়ের দোকানে বুড়ো মালিকের দৈত্যাকার তামার পাত্রে হয়তো কোনও যাদু আছে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, মানবশরীরের জন্য অতি সামান্য পরিমাণে তামা, খুব উপকারী। আর তামার পাত্রে চা করলে, সেই চা থেকে অম্বল হয় না। খেতেও হয় খুব সুস্বাদু। এই চায়ের অপর নাম ইরানি চা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
ইরান এবং দক্ষিণ ভারতের অনেক এরকম কায়দায় চা তৈরি হয়। এই নীতিকেই কাজে লাগিয়ে, প্রায় ৯৮ বছর ধরে এই তামার ড্রামে জল গরম করে, চা পরিবেশন করা হচ্ছে। মালিকের নাম মহেন্দ্র সিং ধোনি। আর দু বছর পরেই দোকানের একশ বছর পূর্তি হবে। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ আমলের এই ড্রাম, কিনেছিলেন মালি, মহেন্দ্র সিংয়ের বাবা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা জুহুরি সিং। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
সেই থেকে আজ অবধি এতেই চায়ের জল ফোটানো চলছে। তখন যদিও কলকাতায় এমন চায়ের দোকান বেশী কিছু ছিল। তবে কালের নিয়মে তামার পাত্রে বানানো চা এর দোকান সব এখন হারিয়ে গিয়েছে। রয়ে গিয়েছে শুধু এটি। বর্তমানে ৫, ১০ ও ২০টাকার ভাঁড়ে পাওয়া যায় চা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
দোকানটি খুব একটা সাজানো গোছানো না। তেমন কোনও হোর্ডিংও লাগানো নেই। এরপরেও সারাদিনে অন্তত হাজার খানেকের বেশি মানুষ এই তামার পাত্রের স্পেশ্যাল চা খেয়ে যান। হ্যাঁ। সংখ্যাটা হাজার খানেকের বেশিই। এমনই যে তার যাদু। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
