New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/09/Dress-suppliers-Cover.jpg)
মহামারি এবং লকডাউননের জন্যে চরম বিপাকে ছোট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলো। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ। গত বছরের লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে কিছুটা সামলে ওঠার মুখেই ফের বিপাকে পড়েছেন অনেক ছোট ব্যবসায়ীরা। কাজ নেই, আয় নেই। সঞ্চয়ের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। অনিশ্চিত হয়ে পড়া ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
অতিমারি এবং লকডাউনের জন্যে চরম বিপাকে ছোট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষগুলো। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ। গত বছরের লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে কিছুটা সামলে ওঠার মুখেই ফের বিপাকে পড়েছেন অনেক ছোট ব্যবসায়ীরা। কাজ নেই, আয় নেই। সঞ্চয়ের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য। অনিশ্চিত হয়ে পড়া ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ করোনা সংক্রমণের জেরে গত বছরের মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকেই শুটিং বন্ধ টলিউডে। অনির্দিষ্ট কালের জন্যে বন্ধ রয়েছে স্কুল, কলেজ। এসবকে কেন্দ্র করে যাদের জীবন জীবিকা তাঁদের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে তাঁদের অনেকের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ এরকমই করুণ দশা টলিপাড়ার কস্টিউম ব্যবসায়ী দিলীপ কুমারদের। বছর ষাটের এই ব্যবসায়ী কস্টিউম ব্যবসা শুরু করেছিলেন ৩৪ বছর আগে। নিজে প্রথমে গ্রুপ থিয়েটার করতেন। পাশাপাশি থিয়েটারে ড্রেস সাপ্লায়ারের কাজ শুরু করেন। ব্যবসা বাড়তে থাকলে স্কুলে, সিনেমা, সিরিয়ালে কস্টিউম সাপ্লাই দিতে শুরু করেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ ব্যবসার তখন রমরমা অবস্থা। বেশ ভালই চলছিল। কস্টিউম ব্যবসায় কোন লোকসানের জায়গা নেই। নাচের ড্রেস, নাটকের ড্রেস, বাচ্চদের জোকার, মুখোশ ভাড়ায় নেওয়ার মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নেই। এক একটা সিজনে চাহিদা এতটাই ছিল ভাড়া দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যেত। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ সে সব দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখন মন খারাপ করে দিলীপদের। অন্য ব্যবসার তুলনায় গত কয়েক বছরে কস্টিউমের ব্যবসায় কোনও ক্ষতি হয়নি। ২০ থেকে ২২ লাখ টাকার মতন টার্ন ওভার ছিল। স্কুলগুলোতে কস্টিউমের চাহিদা এতটাই বেশি ছিল জোগান দিতেই হিমশিম খেতে হত। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ একা ব্যবসা সামলাতে না পেরে দিলীপবাবু তাঁর ছেলে অভিষেকদের হাতে কিছুটা ব্যবসা তুলে দিয়েছিলেন। তবে করোনা সব কেড়ে নিয়েছে। ছন্দ পতন হয়েছে গত বছর থেকে। ব্যবসা তলানিতে ঠেকেছে। এখন কাপড়গুলো সব বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে আছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ স্কুল বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের ফ্যন্সি ড্রেসও সব পড়ে রয়েছে। থিয়েটার বন্ধ তাই নাটকের কোনও কস্টিউম ভাড়া চাইতে আসে না। সিরিয়াল সিনেমা যা হচ্ছে তাতে কোভিডের জন্যে বাইরের থেকে ড্রেস ভাড়ায় নেওয়াও বন্ধ, বলে জানান দিলীপ দে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ গুদাম ঘরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে, পুলিশের ড্রেস, হাতি, ঘোড়া ,মহাদেবের জটার পরচুলা, রাবণের মুখোশ বিয়ের টোপর, ঠাকুরঘর সাজানোর মালা ও কাগজের ফুল। এসবই এখন ইঁদুরের কাটছে। অভিষেক দে জানিয়েছেন, তাঁদের ঘরে প্রায় ২কোটির কাছাকাছি কস্টিউম রয়েছে। গত বছর থেকে একটা কস্টিউমও ভাড়ায় যায়নি। ভাড়ার টাকা দিয়েই এসব জামা কাপড়ের পরিচর্যা করা হত। পরিচর্যার অভাবে বস্তা খুললেই দেখা যায় ইঁদুর জামাগুলো কেটে ফেলেছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ একটা সময় ব্যবসায় এতটা লাভ ছিল যে জামা কাপড় রাখার জন্যে দুটো ফ্ল্যাট পর্যন্ত লোনে নিতে হয়েছে। এখন পয়সার জন্যে একটি হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। আরেকটি ফ্ল্যাটের লোন শোধ করা নিয়ে ব্যাঙ্কের মামলার চিঠিও চলে এসেছে। রোজগার হলেই তো লোন শোধ করতে পারব! এরকম লোকসান হবে বলে কোনওদিন ভাবতে পারিনি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ পুরো পরিবারের অর্থকষ্টে দিন কাটছে। লকডাউনের পর থেকে একদমই রোজগার বন্ধ। দিলীপ দে নিজের ঘরের সামনেই মুদির দোকান দিতে বাধ্য হয়েছেন। গত বছর থিয়েটার চালু হওয়ার পর রোজগার হয়েছিল মাত্র ১২ হাজার ৭০০ টাকা। ড্রেস ব্যবসার প্রধান রোজগারের জায়গা স্কুলগুলো। সারা বছরই স্কুলগুলোতে প্রোগ্রাম লেগেই থাকে। সেই মতো ড্রেসের চাহিদাও থাকে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ স্কুলগুলো এখন খুললেও এরকম পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা বাইরের থেকে ড্রেস ভাড়ায় নেবে কিনা সন্দেহ আছে বলে জানান দিলীপবাবু। ড্রেস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা একদম শেষ। কোটি টাকার জিনিস গুদাম ঘরে সাদা বস্তার বন্ধে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। জরি-চুমকি-পুঁতি বসানো রাজকীয় পোশাক, মুকুট, ওড়নাগুলো এখনেও ভাঁজে ভাঁজে সাজানো। তবে দীর্ঘদিনের অব্যবহারে কিছুটা ধুলোমলিন। কিছু আবার ইঁদুরে কেটে নষ্ট করেছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ দিলীপবাবু এবং তাঁর ছেলে প্রতিদিন নিয়ম করে সেগুলো বের করে ঝেড়ে-পুঁছে পরিষ্কার করে আবার তুলে রাখেন। বাবা ছেলে দুজনে এক সঙ্গে বলে ওঠেন, 'এগুলা যত্ন করে আগলে রাখছি। আবার সব ঠিক হয়ে গেল তো আমাদের কাছেই আসতে হবে। ততদিন এভাবেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাই'। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ