
পেন বা কলম নামক বস্তুটি অনেকের কাছে বড় শৌখিনতার জিনিস। কলমের সঙ্গে জরিয়ে থাকে আবেগ। আর সেই আবেগ কলমের কালি দিয়ে ফুটে ওঠে লেখার মধ্যে। শখের কলমটি যদি খারাপ হয়ে যায়? তা ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু এমন একটা সময় ছিল যখন কলকাতায় কলমের জন্যেও থাকতো হাসপাতাল। সেই হাসপাতালে কলমের রিতিমতন চিকিৎসা করে নতুনের মতো হয়ে যেত। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

কলমের হাসপাতাল! বিশ্বাস হবে না ঠিকই। তবে এটাই সত্যি। কালের নিয়মে পেন হাসপাতালগুলো হারিয়ে গেলেও এখনও একটি রয়ে গিয়েছে কলকাতার প্রাণ কেন্দ্রে। ধর্মতলা মেট্রো ষ্টেশনের চার নম্বর গেট দিয়ে বেড়িয়ে ফুটপাথের বাঁ-দিকেই ঝোলানো ‘পেন হসপিটাল’ বোর্ড। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

সরু গলির একপাশের ছোট্ট দোকানঘরে বসে রয়েছে ডাক্তার মহম্মদ ইমতিয়াজ। এই শহর আজব সব কর্মকাণ্ডের শহর। কোনও জীব নয়, কলমের এমন চিকিৎসা হয় শুনে চোখ কপালে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

শহরের পেন সংগ্রাহকদের স্মৃতি বলছে, এমন হাসপাতাল প্রত্যেক এলাকাতেই ছিল। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে যার বেশির ভাগ বন্ধ হয়েছে গিয়েছে। কিংবা বেছে নিতে হয়েছে অন্য ব্যবসা। মধ্যবয়স্ক ইমতিয়াজের অগোছালো দোকান ঘরেই লুকিয়ে অমুল্য সব রতন অর্থাৎ কলম। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

১৯৪৫ সালে ইমতিয়াজের দাদু সামসুদ্দিন এই পেন হাসপাতাল শুরু করেন। সেই সময় বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হত ওয়াটারম্যান, শেফার্ড, পিয়ার কারদা, উইলসনের মতো রয়্যাল পেন। এসব খারাপ হলে সারাই করার লোক ছিল না। ফলে কলমপ্রেমীদের দুঃখ লাঘব করার ভাবনা থেকেই পেন হসপিটালের যাত্রা শুরু হয়েছিল, বলেন ইমতিয়াজ। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

তিন প্রজন্মের ব্যবসায়ী মহম্মদ ইমতিয়াজের পরিবার এখনও কলমের হাসপাতাল উপর নির্ভর করেই সংসার চালান। বাবা মহম্মদ সুলতানের হাত ধরে ইমতিয়াজ ও তাঁর ভাই মহম্মদ রিয়াজ কলমের হাসাপাতালে কাজে হাত লাগান। ছোট ভাই রিয়াজের মৃত্যুর পর বর্তমানে ইমতিয়াজই পেন হসপিটাল চালাচ্ছেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

ফিকে হয়ে যাওয়া হাসপাতালে খদ্দেরের প্রতীক্ষায় বসে থাকা ইমতিয়াজ বলেন, “আমাদের কাজ কালি-কলম বা নিব নিয়ে। এখন কালি-কলম দিয়ে লেখার চল উঠে গিয়েছে, বেশির ভাগই কলম এখন এক বার ব্যবহার করেই ফেলে দেয়। এখন কম্পিউটারের যুগ। কিছু মানুষ এখনও আছেন, যাঁরা কালি-কলমে লেখেন। তাঁরাই আসেন বিকল কলম সারাতে। কেউ আবার শৌখিনতার জন্যে পুরনো কলম কিনে নিয়ে যান।” এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

পেন হাসপাতালের সংগ্রহে ২০টাকার পেন থেকে ২০ হাজার টাকার পেনও রয়েছে। কলম সারানোর জন্য ছোট বাক্সের মধ্যে রাখা আছে হরেক মাপের যন্ত্রপাতি। এসব দিয়েই ডাক্তারবাবু বিকল হওয়া কোনও কলমকে দিব্যি সুস্থ করে তুলছেন। আরেকপাশে রাখা লাইন দিয়ে সাজানো কলম তারা রোগমুক্তির প্রতীক্ষায় বসে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

আশি বছরের পুরনো দোকানের ইতিহাসে জড়িয়ে আছে অনেক কিছু। শখের পেনের অসুখ সারাতে এই দোকানে ছুটে এসেছে নামজাদা অধ্যাপক, লেখক, সাংবাদিকরা। পেনের অপারেশন চালাতে চালাতে পেনের ডাক্তার বলেন, “বিদেশি পেন মানেই অনেক দামের। দশ বারো হাজার টাকা দামের পেন এখনও লোকেরা সারাই করতে নিয়ে আসে। পেনের নিব থেকে কালি ভরার ব্যবস্থা প্রতিটি পেনের আলাদা। সবসময় সব পেনের পার্টস সহজেই যে পাওয়া যায় তা নয়। সেই ক্ষেত্রে পুরনো পেনের টেকনোলজি বদলে দিলেই, পেনগুলো নতুন জীবন পায়, লেখকের মুখে হাসি ফোটে তাতেই আমার ভালো লাগে”। কলকাতায় এরকম কতশত আজব কিসসা রয়েছে তা হয়তো এই শহরই জানে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ