New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/08/CBROS-COVER.jpg)
একটি ছবির সমান হল ১০০০ টি শব্দ। কোনও কিছু বলে বা লিখে যত সহজে বোঝানো যায়, একটি ছবির মাধ্যমে তা আরও সহজে সম্পূর্ণ হয়। ছবি এমন একটি জিনিস যা অনেক বেশি মনের উপর প্রভাব ফেলে। মোবাইল থেকে শুরু করে দামী ডিএসএলআর ক্যামেরা যে কোন মাধ্যেম দিয়েই মুহূর্তগুলো ধরে রাখে সকলে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
একটি ছবির সমান হল ১০০০টি শব্দ। কোনও কিছু বলে বা লিখে যত সহজে বোঝানো যায়, একটি ছবির মাধ্যমে তা আরও সহজে সম্পূর্ণ হয়। ছবি এমন একটি জিনিস যা অনেক বেশি মনের উপর প্রভাব ফেলে। মোবাইল থেকে শুরু করে দামি ডিএসএলআর ক্যামেরা যে কোনও মাধ্যম দিয়েই মুহূর্তগুলো ধরে রাখে সকলে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ আজ ছবির দিন। বিশ্ব আলোকচিত্র দিবস। ১৮৩৯ সালের অগস্ট মাসের উনিশ তারিখকে আলোকচিত্রের দিন হিসেবে উদযাপন করে আসছে পুরো পৃথিবী। এখন ছবি তোলাটা যতটা সহজ হয়ে গিয়েছে। শুরুর দিকে ঠিক ততটাই কঠিন ছিল ছবি তোলা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ পুরনো কলকাতার ছবি তুলতে এখনও বিদেশ থেকেও মানুষ হাজির হয়। পুরনো অলি গলি। জমিদার বাড়ি সবগুলোই যেন রয়েছে ছবির জন্যে আদর্শ। উত্তর কলকাতার গলিগুলোর ভেতর ঢুকে পড়লেই যেন ফটোগ্রাফারদের স্বর্গরাজ্য। অদ্ভুত অব ফ্রেমের ছবি ভেসে ওঠে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ পুরনো কলকাতা তার বুকের ভিতরে কিভাবে লুকিয়ে রেখেছে ছোট ছোট সব ইতিহাস। এরকমই এক ধুলো পড়া ইতিহাসের পাতা ঝাড়লেই বেরিয়ে পড়ে গল্প। এরকমই এক গল্প শোভাবাজারের অরবিন্দ সরণির সি.ব্রস দোকানের। সম্ভবত কলকাতার প্রথম স্বদেশি ফটোগ্রাফি স্টুডিও। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ এই স্টুডিওতে ঢুকে পড়লেই যেন মনে হবে এ যেন পুরনো কলকাতার ছবি ভেসে উঠেছে চোখের সামনে। কাচের ভেতর সাজিয়ে রাখা পুরনো আমলের তোলা ছবি। ছোট্ট দোকানে আলো আধারির খেলা চারদিকে। এই দোকানটির বয়স সেঞ্চুরি পেরিয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ এই দেশে তখন ব্রিটিশরাজ চলছে। ফটোগ্রাফির রেওয়াজ শুরু হল সাহেবদের হাত ধরে। এই দেশের মানুষ ছবি তোলাকে খুব একটা ভাল চোখে দেখত না। ছবি তুললেই নাকি মরে যাবে এমনটাই ধারণা ছিল। এই ভয়ে ছবি তুলতে সাহস পেত না সে সময়ের মানুষ। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ রকম সময়ে দাঁড়িয়ে ১৯১২ সালে কুঞ্জবিহারী চ্যাটার্জি কলকাতায় শুরু করেন সি.ব্রস ফটোগ্রাফি স্টুডিও। যদিও স্টুডিও শুরু আগে এক আকর্ষক গল্পের ঘটনার কথা জানান বর্তমান মালিক সমর চ্যাটার্জি। "আমার দাদুদের বাবা নারায়ণ চ্যাটার্জি বেশ অল্প বয়সেই মারা যান। তখনও ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এমন সময়ে বাগবাজারে তার এক কাকার বাড়ি চলে আসেন বড়দাদু। বড়দাদু ছিলেন ছোট থেকেই অসম্ভব প্রতিভাবান। একদিন এক বন্ধুকে নিয়ে ঠিক করলেন, কাছেই একজন মারা গেছেন, তাঁর ছবি তুলতে হবে। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ ওই সময় ছবি তোলার ভাবনার কথা কেউ ভাবতে পারেনি। ছবি তুলে ডেভেলপ করাতে গিয়ে দেখেন ছবিটা কেমন ঝাপসা হয়ে গেছে। তখন তার বন্ধু জবাব এল, ‘মরার ছবি এরকমই হয়’। এবার বড়দাদু নিজের থেকেই শুরু করলেন পরীক্ষা নিরীক্ষা। এক বন্ধুর বাবা মারা যাওয়ার পর সেখানে গেলেন ছবি তুলতে। আর তখনকার দিনে সেটাই চল ছিল। নিজেই ডেভেলপ করে দেখালেন যে মরার ছবি কীরকম হয়। বলতে গেলে এখান থেকেই আমাদের এই দোকানটার যাত্রা শুরু। তখন সপ্তাহে একদিন করে ছবি তোলা হত" বলছিলেন সমরবাবু। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ কুঞ্জবিহারী চ্যাটার্জি যদিও ১৯১৬ সালের পর থেকে এই কাজ ছেড়ে নিজের দেশের বাড়ি আমতা চলে যান। তার পরিবর্তে এই কাজের হাল ধরেন কুঞ্জবিহারী ছোট ভাই অনাদিভূষণ চট্টোপাধ্যায়। এর পিছনেও রয়েছে এক অদ্ভুত গল্প। তখন ফটোগ্রাফারদের বলা হত 'ফটো বাবু'। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ একদিন দোকানে বসে আছেন অনাদিভূষণ, এক খদ্দের এসে বলল, ‘ফটো বাবু ছবি হবে?’ অনাদিভূষণ ক্যামেরার কিছুই জানতেন না; অথচ কিছু না ভেবেই হ্যাঁ বলে দিলেন। ব্যস, তাঁকে নিয়ে সোজা রওনা হওয়া ইডেন গার্ডেনসে। ছবি তোলার জন্যে ছিল তেপায়া বক্স ক্যামেরা। তিনি ছবি তোলার কিছুই জানেন না। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ এই ক্যামেরার তিনটি পায়া সমান না হলে ছবি উঠবে না। ক্যামেরায় যা দেখাচ্ছ সবই সাদা। ক্যামেরার মুখ উঠে রয়েছে আকাশের দিকে, কিছুই বুঝতে পারছেন না ফটো বাবু, হঠাৎ এমন সময় ভাগ্যক্রমে তিনটি পায়ার একটি হঠাৎ গেল নেমে, ছবিও ফোকাসে এসে গেল। আর অনাদিবাবুও সেদিন থেকেই হয়ে গেলেন ফটোগ্রাফার। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ সেই তিনপায়া ক্যামেরা এখন বয়সের ভারে মৃত। জং পড়ে গিয়েছে কলকব্জায়। ডিজিটালের যুগে স্টুডিও ঘরের মাঝখানে অকেজো হয়ে দাঁড়িয়ে ক্যামেরাটি। উত্তর কলকাতায় স্থানীয় স্টুডিওগুলোর সূত্রপাত বিংশ শতকের প্রথম দিকেই। সেই যুগেরই এক উজ্জ্বল বাহক 'সি ব্রস'। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ শুরুর দিকে এখানে ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে ছবিও তোলা হত। নানা জায়গায় কাজের জন্যে বেরিয়ে পরতেন ফটোগ্রাফাররা। চলে যেতেন ছবি তুলতে। এটা সেই সময়ের কথা যখন ফিল্মের নেগেটিভ নয়, কাচের নেগেটিভ ব্যবহার করা হত। এবং সঙ্গে সঙ্গে ডেভেলপ করতে হত। নাহলেই নষ্ট হয়ে যেত নেগেটিভ। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ সাবধানে ব্যবহার না করলে ভেঙেও যেত অনেক সময়। বহু ঐতিহাসিক ছবিও তোলা হয়েছে এখান থেকে। রামকৃষ্ণ ঠাকুর স্বামী বিবেকানন্দ অনেকের ছবির কাজ হয়েছে এই দোকানেই। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ তার আর্কাইভাল কি আজও আছে? এখানে একটু নিরাশই হতে হবে। "আসলে এই আর্কাইভের ব্যাপারে আমার দাদু বা আমার বাবা, কাকারাও সেরকমভাবে তখন ভাবেননি। আমরাও পরে গুরুত্ব দিইনি। কাজে এটা একটা বড়ো ফাঁক রয়ে গেছে।" অকপট স্বীকারোক্তি সমরবাবুর। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ যদিও ১৯৮২ সালের পর থেক এখানে এখন ছবি তোলা হয় না। পুরনো ছবিকে নতুন করার রিটাচিং এর কাজ চলে। সমরবাবুর সঙ্গে এখন এই দোকানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তাঁর ছেলে সৌনক চ্যাটার্জি। কলকাতার এই ফটোগ্রাফির দোকান যেন এখনও ধুলো পড়া ইতিহাসকে আগলে রেখেছে। বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবসে জানান দিচ্ছে ছবিতে বিপ্লব ঘটা সময়ের। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ