-
এক সময় লোক সংস্কৃতিতে গ্রামবাংলা ভরপুর ছিল। এখন কালের নিয়মে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা সংস্কৃতির মধ্যে অন্যতম যাত্রাপালা। ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠ, এই সময়ে যাত্রাপাড়ার পিক সিজন। গ্রামের মানুষ মুখিয়ে থাকে যাত্রা দেখার জন্যে। কিন্তু গত বছর থেকেই যেন যাত্রার ছন্দপতন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
লকডাউনের জেরে চিৎপুরের যাত্রাপাড়া যেন এক্কেবারে শুনশান। পর পর শো বাতিল হয়ে গিয়েছে সব দলের। করোনা পরিস্থিতিতে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং-এর শর্তে আগামী দিনে যাত্রার ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে চিন্তায় বাংলার এই সনাতন লোকশিল্প গোষ্ঠী। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
কিছুদিন আগেই গেল রথযাত্রা। এই সময়ে ছিল না কোনও বায়না। এরকম ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি বলে জানান চিৎপুরের এক যাত্রাদলের ম্যানেজার। করোনা মহামারির আগে পর্যন্ত খবরের কাগজে পাতায় পাতায় থাকত নতুন পালার বিজ্ঞাপন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
এখন সে-সব কষ্টকল্পনা। রথের দিনগুলোতে গমগম করত চিৎপুরের যাত্রাপাড়া। রথের আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত নতুন পালার পোস্টার লাগানো। বিভিন্ন রঙের পোস্টারে ছেয়ে যেত গোটা যাত্রাপাড়া। নতুন শিল্পীদেরর নিয়ে আসা হতো এই সময় থেকে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে নায়েকরা আসতেন বায়না করতে। মিষ্টিমুখ খাওয়া-দাওয়া সহ এলাহি আয়োজন হতো। যাত্রা অ্যাকাডেমিতে ধুমধাম করে পুজোর আয়োজন হতো। প্রত্যেক দল ক্যাম্প করত। রথের দিন থেকেই শুরু হয়ে যেত পুজোর বুকিং। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
এই সবকিছু বদলে দিয়েছে করোনা। অর্থ কষ্টে ভুগছে শিল্পীরা সকলে। যাত্রাপাড়ায় আলো দেখতে পাচ্ছেন বেলা সরকারের মতো কিংবদন্তিরা। বেলেঘাটার বাসিন্দা যাত্রার জনপ্রিয় অভিনেত্রী বেলা সরকার। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
বেলার দেবীর বয়স এখন ৭২। বয়সের ভারে তিনি এখন অনেকটাই ক্লান্ত। তাঁর কথায়, যাত্রায় আসাটাও তার হঠাৎই। ৭৭ সালে নট্ট কোম্পানির প্রধান অভিনেত্রী বীণা দাশগুপ্তের অসুস্থ হওয়ার ফলে তার জায়গায় যাত্রায় অভিনয়ের শুরু। অভিনয়ের দক্ষতা দেখে এরপর সিনেমা সিরিয়াল। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
যদুবংশ সিনেমাতে উত্তম কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেছেন। এই সময়টা ছিল যাত্রার সোনার সময়। ২৫০ দিন ধরে চলেছিল ‘গঙ্গা পুত্র বিশ্ব’। সে সময়ের থেকে বড় হিট। এরপর গলসিতে ‘লক্ষ্মীর পদচিহ্ন’ পালা চলার সময় কাতারে কাতারে মানুষ। এই যাত্রা দেখতে এসে পদপিষ্ট মারা গিয়েছিল কয়েকজন দর্শক। এখন কোন যাত্রা টেনেটুনে ৫০ দিন চলা মানে বিরাট ব্যাপার। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
গত কয়েক বছর যাত্রা যা একটু চলছিল করোনা তা সব শেষ করে দিয়েছে। বেলা সরকারের ছোট মেয়ে ছোট মেয়ে শ্রাবণী সরকার। তিনিও গত ১৫ বছর ধরে যাত্রার সঙ্গে যুক্ত। গত দু’বছর ধরে ঘরে বসেই দিন কাটছে। করোনা কাটলেও যাত্রার ভবিষ্যৎ যাত্রা কি হবে তাই দুশ্চিন্তায় রয়েছে তিনিও। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
শ্রাবণী দেবীর বক্তব্য, লোকে করোনার ভয়ে ভিড় করে যাত্রা দেখতেও আসবে না। যাত্রার সঙ্গে জড়িত শিল্পীরা কী করে খাবেন বলুন তো?’ পশ্চিমবঙ্গের প্রায় দুশোটি যাত্রাপালার দল রয়েছে। এর মধ্যে শুধু কলকাতায় দলের সংখ্যা ৫০টির মতো। গত বছর পুজোর পরে কিছু দল মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুরের কিছু গ্রামে পালা করার সুযোগ পেয়েছিল। এটাই শেষ এই বছর এখনো কোন নতুন যাত্রার বায়না হয়নি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
মরসুমে প্রায় ১২০-১৩০ দিনের মতো যাত্রা চলে। প্রতিটি যাত্রা দলের সঙ্গে বহু মানুষ যুক্ত। অভিনেতা থেকে শুরু করে টেকনিশিয়ান, মঞ্চসজ্জার শিল্পী থেকে মেকআপ আর্টিস্ট। প্রত্যেকে এখন বেকার। যাত্রার অনেক শিল্পীরা বাধ্য হয়ে সব্জি বিক্রি থেকে দিন মজুরের কাজ করতে বাধ্য হয়েছে। সিজনে প্রথম সারির যাত্রা দলগুলো প্রতি শোয়ের জন্যে নিত ৮০-৮৫ হাজারে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
দ্বিতীয় সারির দলগুলো নেয় ৫০-৫৫ হাজার। বাকিরা ৩০-৮০ হাজারে করে। গত বছর থেকে পর পর অনেকগুলো শো বাতিল মানে একটি দলের ক্ষতি লাখ টাকার ওপরে। করোনার আঘাতে চিৎপুরের ছবিটা একেবারেই বদলে গিয়েছে। করোনার পরিস্থিতি কাটলেও কোনও প্রযোজক আর বাংলার যাত্রাপালা আর ঠিকে থাকতে পারবে কিনা এই নিয়ে সন্দেহ বেড়েছে সবার মধ্যে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
