-
পরশুরামের কাহিনি অবলম্বনে সত্যজিতে রায়ের 'পরশপাথর' সিনেমার কথা হয়তো অনেকেরই জানা। যেখানে গল্পের প্রধান চরিত্র পরেশবাবু 'পরশপাথর' খুঁজে পেয়েছিলেন আকস্মিকভাবে। ধর্মতলা ট্রাম ডিপো থেকে একটু এগিয়ে কার্জন পার্ক ভাষা উদ্যান। তারই উত্তর-পশ্চিম কোণে শুটিং হয়েছিল সত্যজিতের পরেশপাথর সিনেমার। আগে নাম ছিল পানিঅটি ফাউন্টেন, নাম বদলে করা হয় 'পরশপাথর অঙ্গন'। সে সময় এই 'পরশপাথর অঙ্গন' এর উদ্বোধন করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
একটা সময় প্রতি বছর ভাষা দিবসে সত্যজিতের নায়ক সৌমিত্রবাবু প্রায়ই যেতেন। একদিকে ভাষা উদ্যান অন্যদিকে সত্যজিৎ রায়ের শ্যুটিং এর জায়গা 'পরশপাথর অঙ্গন'। এই সব কিছুই ঢেকেছে আগাছা-আবর্জনায়। ভেঙে পড়া সেই জায়গাটায় আজ খুঁজে পাওয়া দায়! ১৯৫৮ থেকে ২০২০, অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে। ৬২ বছর আগের ছবিতে দেখানো কার্জন পার্কের সঙ্গে বর্তমান এই জায়গার আকাশ পাতাল পার্থক্য। সত্যজিৎ মারা গিয়েছেন অনেকদিন আগে, সৌমিত্রবাবুরও মৃত্যু হয়েছে গত রবিবার। এদের সাথেই যেন হারিয়ে যাচ্ছে তাদের সম্পর্কিত জায়গাগুলোও। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
জয়পুর মার্বেল দিয়ে ১৮৯৮ সালে এই সৌধটি তৈরি করা হয় তৎকালীন বড়লাটের সচিব দেমেত্রিউস পানিওতির স্মরণে। পানিওতি ছিলেন গ্রিক, কিন্তু চার পুরুষ ধরে তাঁদের পরিবারের অনেকেই ছিলেন কলকাতাবাসী। কলকাতা পুরসভার 'হেরিটেজ সাইট'-এর তালিকায় উল্লেখ রয়েছে সৌধটির। বাইশ বছর আগে তৎকালীন সরকার সৌধের নাম বদলে করেন 'পরশ পাথর অঙ্গন'। পরশুরাম (রাজশেখর বসু) এবং সত্যজিতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি ফলকও বসানো হয়। যার উদ্বোধন করেছিলেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
কার্জন পার্কেরও নাম বদলে করা হয়েছে সুরেন্দ্রনাথ পার্ক। ১৯৯৮ সালে পরশ পাথর অঙ্গনের পাশেই তৈরি হয়েছিল ভাষা উদ্যান। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, মৃণাল সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়রা অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই ভাষা উদ্যানের সূচনা করেছিলেন। সেই স্বপ্নের গায়ে পড়েছে ধুলোর আস্তরণ। ১৯ মে স্মরণে শিলচর স্মারকেরও ভগ্নপ্রায় দশা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
ভাষা শহীদ স্মারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রা লাহিড়ীর বক্তব্য, “মেট্রো রেলের কাজের জন্যে কার্জন পার্কের বেশীরভাগ অংশই ভাঙ্গা পড়ে আছে। প্রত্যেক বছর ২১ ফেব্রুয়ারির আগে এই ভাষা উদ্যান পরিষ্কার পরিছন্ন করে সাজিয়ে তোলা হয়। প্রশাসনের তরফ থেকেও সাহায্য পাওয়া যায়। মেট্রো রেলের কাজ যতদিন না শেষ হচ্ছে, ততদিন ভাষা উদ্যানের রক্ষণাবেক্ষন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। কাজ শেষ হওয়ায় পরে এর সৌন্দর্যায়নের দিকে নজর দেওয়া যাবে।” এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
বেঁচে থাকাকালীন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অনেকবার বলেছিলেন, ‘‘সত্যজিৎ রায়, রাজশেখর বসুর মতো বিরাট মানুষদের নামাঙ্কিত জায়গা অবশ্যই দর্শনীয় স্থান হয়ে থাকা উচিত। এর রক্ষণাবেক্ষণ যাঁদের দায়িত্বে, তাঁদের এদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকার।’’ সত্যজিতের এই জায়গা নিয়ে সৌমিত্রবাবুর আক্ষেপই থেকে গেলো। যত দিন যাচ্ছে এই জায়গার দশা আরও করুণ অবস্থায় পরিণত হচ্ছে। এই জায়গাকে সৌন্দর্যায়নের জন্যে এক সময় ভাষা উদ্যান তৈরি হওয়ায় পর ভারতীয় যাদুঘরের ডিরেক্টর শ্যামলকান্তি চট্টোপাধ্যায় খুশি হয়ে একটি অক্ষরবৃক্ষ উপহার দিয়েছিলেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
এছাড়াও ছিল লালন মঞ্চ। এসবের এখন কোনও অস্তিত্ব এখন নেই। মেট্রো রেলের কাজের জন্যে সব উৎখাত হয়ে গিয়েছে। ভাষা উদ্যান চত্বর কিংবা সত্যজিৎ এবং সৌমিত্রের পরশ পাথর অঙ্গন পথচলতি মানুষের কাছে এখন নোংরা আবর্জনা ফেলার এক সুবিধেজনক জায়গা হয়ে গিয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
এক অবাঙালি গুটখার পিক ফেলতে ফেলতে বলেন, “কৌন সত্যজিৎ? সবলোগ ইহা পিসাব করনে আতে হ্যায় ইসলিয়ে ইতনা খরাব জগহ্…” এক মধ্যবয়স্ক বাঙালিকে জিজ্ঞেস করলে অবাক হয়ে বলেন, “ভাষা উদ্যান! ওটা তো বাংলাদেশে। পরশ পাথর! এটা আবার কোন জিনিস? এমন কোন বাংলা সিনেমার নাম জানা নেই।” এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
