New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/11/BAND-COVER.jpg)
মাথায় রং বেরঙ্গের টুপি। গায়ে ঝলমলে রাজকীয় পোশাক। বাদ্যযন্ত্র সার দিয়ে সাজানো রাস্তার পাশে। সারি বেঁধে রাস্তার একপাশ হয়েই বসে একটি দল। মাঝে মাঝে বেজে উঠছে হিন্দি গানের সুর। সঙ্গে ড্রামের দ্রিমদ্রিম, করতালের ঝমঝমানি আর ট্রাম্পেটের পোঁ পোঁ আওয়াজ। গমগম করছে পুরো রাস্তা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
মাথায় রং বেরঙের টুপি। গায়ে ঝলমলে রাজকীয় পোশাক। বাদ্যযন্ত্র সার দিয়ে সাজানো রাস্তার পাশে। সারি বেঁধে রাস্তার একপাশ হয়েই বসে একটি দল। মাঝে মাঝে বেজে উঠছে হিন্দি গানের সুর। সঙ্গে ড্রামের দ্রিমদ্রিম, করতালের ঝমঝমানি আর ট্রাম্পেটের পোঁ পোঁ আওয়াজ। গমগম করছে পুরো রাস্তা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ পথচারীরা সবাই ওদের পাশ কাটিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। মহাত্মা গান্ধী রোডের ধারের এই দৃশ্যে হামেশাই চোখে পড়ে সকলের। রাস্তার ধারে যাঁরা ঝলমলে পোশাক পড়ে বসে আছে তারা সকলেই বাজনাদার। যাঁদের পোশাকি নাম ব্যান্ড পার্টি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ কলেজ স্ট্রিটের মোড় থেকে সোজা সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ ক্রসিংয়ের দিকে এগোলে রাস্তার ডানদিকে রয়েছে পরপর অনেক ব্যান্ড পার্টির দোকান। একটা সময় ছিল যখন এই ব্যান্ড পার্টি ছাড়া কোনও অনুষ্ঠানের কথা ভাবাই যেত না। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ শহরের পুজো হোক বা বিয়েবাড়ি— সুর মেলাতে সবার আগে ডাক পড়ত তাঁদেরই। ডিজে-র যুগে আকর্ষণ ফিকে হয়েছে বেশ খানিকটা। তবুও তিন-চার পুরুষের পেশা ছাড়েননি অনেক বাজনাদারই। করোনার আগে পর্যন্ত বেশ মোটামুটি চলে যাচ্ছিল। গত বছর লকডাউনের পর থেকে বাজনাদারদের বাজার প্রায় শেষ বলা যায়। বলছিলেন ইন্ডিয়ান ব্যান্ডের শওকত আলি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ দেশ তখনও স্বাধীন হয়নি বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে কলকাতায় ভাগ্যান্বেষণে এসেছিলেন কিছু যুবক। উদ্দেশ্যে ছিল এই শহরে বাজনা বাজিয়ে রোজগার করবে। বাঙালির কাছে তাঁদের ব্যান্ড জনপ্রিয় হতে সময় লাগেনি। দেখাদেখি একের পর এক দোকান তৈরি হতে থাকে মহাত্মা গাঁধী রোডের ধারে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ এরপর দেশ স্বাধীন হল এই পেশার কদরও বাড়ল। বিহার বা উত্তরপ্রদেশ থেকে ব্যান্ডের বাজনাদাররা এখানে এসে পাকাপাকিভাবে থাকতে শুরু করল। ওদের দেখাদেখিতে বাঙালিরাও এই পেশায় আসতে শুরু করলো। বাবা-কাকাকে দেখে এক সময়ে হাতে তুলে নিয়েছিলেন ট্রাম্পেট, ক্ল্যারিনেট, স্যাক্সোফোন, সানাই, ড্রাম বা ঝুনঝুনি। তাঁদের কাছেই চলত তালিম। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ ওই সময়টা ছিল ব্যান্ড পার্টির স্বর্ণযুগ বলা চলে। চার পুরুষ ধরে ব্যান্ড পার্টির সঙ্গেই জড়িয়ে সেলিমের পরিবার। ছোট থেকেই হাতে তুলে নিয়েছেন ড্রামের স্টিক। সেলিম বলছিলেন "অবস্থা আগের থেকে অনেক খারাপ হয়েছে। কিন্তু কখনও ভাবিনি অন্য কাজ করতে হবে। করোনা সব শেষ করে দিল। এখন বিকল্প পেশা হিসেবে রান্নার কাজ করতে হয়। বাজনা বাজিয়ে পেট চালানো খুব মুশকিল হয়ে গিয়েছে"। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ কিছুদিন আগেও সেলিমের অধীনের কাজ করতেন জনা ২০ কর্মচারী। তাঁরাও একইরকমভাবে অন্য পেশার দিকে চলে গিয়েছেন। কেউ কেউ গ্রামে চলে গিয়েছেন। কেউ আবার শহরেই মজুরের কাজ করছেন। গত বছরের তুলনায় এই বছর পুজোর সময় থেকে বাজার অনেকটা ভালো হয়েছে। ব্যান্ড পার্টির লোকজনকে ডাকা হচ্ছে। কিন্তু রোজগার খুবই সামান্য। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ দিনে দেড়শ থেকে দুশো টাকা। বলছিলেন ব্যান্ড পার্টির সদস্য গোপাল বাড়ুই। নভেম্বর থেকে মার্চ এই বাজিয়েদের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। ওই সময়টা বিয়ের মরশুম। পরিযায়ী পাখিদের মতো তার আগে শহরে হাজির হন তাঁরা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ বড়বাজারের এক চিলতে ঘরে ঠাসাঠাসি করে থাকেন ক’টা মাস। একসঙ্গে বসে ব্যান্ড মাস্টারের নির্দেশ অনুযায়ী চলতে থাকে রিহার্সাল, গান বাছাই। অনুষ্ঠানের বরাত অনুযায়ী দোকান থেকে ফোনে ডাক পৌঁছয় তাঁদের কাছে। ফিকে হতে থাকা ইউনিফর্মে নিজেদের সাজিয়ে ঘষে-মেজে নেন প্রিয় বাদ্যযন্ত্রটিকে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ তার পর পায়ে পায়ে সুর মেলানোর পালা। মরশুম ফুরোলে বাজিয়েরা ফিরে যান নিজের নিজের গাঁয়ে। বাজনা ছেড়ে মন দেন চাষবাস বা ব্যবসায়। রোজগার কম বেশি যতটুকুই হত এতদিন পর্যন্ত এমনটাই হয়ে আসছিল। গত বছর থেকে বাইরের রাজ্যে অনেক বাজনাদাররা আসেনি এই রাজ্যে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ ফের লকডাউন হয়ে যাওয়ার ভয়। পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। অথচ এই পরিযায়ী সুরের ফেরিওয়ালারা স্বাধীনতার আগে থেকে এই শহরকে গানের সুর শোনাতে আসতেন বাইরে থেকে। অনেকটা পরিযায়ী পাখিদের মতো। এখন এই সব আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে এই শহর থেকে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ