কলকাতা শহরের বয়স কত! হিসেব কষতে বসলে খাতা কলম নিয়ে বসতে হবে। পুরনো কলকাতার বাড়িগুলো দেখলে খানিকটা আন্দাজ করা যায় এই শহরের আভিজাত্যের। বয়স হয়েছে, বৃদ্ধ হচ্ছে কলকাতা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে হাড় পাঁজর বেড় করে জরাজীর্ণ অবস্থায় দাড়িয়ে আছে বড় ইমারতের বাড়িগুলো। এর মধ্যে কিছু ভেঙ্গে পড়ছে। আবার কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মুছে যাচ্ছে সেসব বাড়ির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, বাড়ির ইতিকথা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
মুছে যাচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের ইট-কাঠ-পাথরে বন্দি থাকা কর্মকাণ্ডের স্মৃতি, তাদের পারিবারিক আনন্দ, ব্যথা, বেদনা। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাদের আম-কাঁঠালের বাগানও। কিছু মানুষ এই ধ্বংসাবশেষ এর কিছু টুকরো কুড়িয়ে বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহ করে যাচ্ছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
হাবড়ার গুমা বাজার। স্টেশন থেকে বেড়িয়ে খানিকটা এগোলেই চোখে পড়বে একের পর এক দোকান। আর তার সামনে পর পর সাজানো পুরনো বাড়ির দরজা জানলা। কোনও দরজার পাল্লা ভাঙ্গা আবার কোনও জানলার কাঠে ঘুণ ধরেছে, গ্রিলে মড়চে ধরেছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
এই দরজা জানলা দেখে বোঝা যায় সেই সময়কার সমসাময়িক পরিস্থিতি। সেই দরজা জানলার ফ্রেমের ঠাঁয় হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার পুরনো দরজা জানলার বাজারে। অভিনব এই বাজারে শুধুই বিক্রি হয় পুরনো দরজা জানলা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
২০০০ সাল থেকে চালু হওয়া দোকানের সংখ্যা প্রায় ১০০'র কাছাকাছি। কলকাতা বা তার আশপাশের ভেঙ্গে ফেলা বাড়ির দরজা জানলার ফ্রেম অল্প দামে কিনে এনে রদ্দিওয়ালারা এই বাজারে বিক্রি করেন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
এরপর এখানের কাঠের মিস্ত্রীরা সামান্য ঘষে মেঝে নতুন করে চলনসই করে তোলেন। এই বাজারের ব্যবসায়ী গোপাল দাস, তিনি বলছিলেন, এখন পুরনো বাড়ি ভেঙ্গে সব ফ্ল্যাট তৈরি হচ্ছে। পুরনো বাড়ি কিংবা অফিস ভেঙে ফেলার পর দরজা-জানালাগুলো স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনে আমরা নতুন করে বিক্রি করি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
এত বড় পুরনো দরজা জানলার বাজার পশ্চিমবঙ্গে তেমন একটা নেই। দু'পার্টের দরজাগুলোর একেকটি ৪থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। জানলার কপাট সমেত ফ্রেম বিক্রি করি ৫ হাজার টাকায়। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
সেগুন, আকাশী, গামারী, লোহা ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরনের কাঠের রেডিমেড দরজা-জানালা পাওয়া যায় এই বাজারে। আর্থিক দিক থেকে যারা দুর্বল তারাই মূলত এই বাজারের খদ্দের। এছাড়াও পুরনো দিনের হারিয়ে যাওয়া দরজা জানলার ফ্রেম ঘরের ডিজাইনের জন্যে কিনে নিয়ে যান। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
৯ বছর ধরে পুরনো দরজা-জানালার ব্যবসায় যুক্ত থাকা নাসির, "প্রতি বছর আমাদের এই বাজার থেকে অন্তত কয়েক লক্ষ টাকার পুরনো দরজা-জানালা বেচাকেনা হয়। এলাকার অনেক যুবক এই কাজে আসছে। অনেকের কর্ম সংস্থান হয়েছে বাজার ঘিরে"। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
কলকাতার সঙ্গে জানলার এক অদ্ভুত সম্পর্ক। উত্তর ও মধ্যে কলকাতার আধ্যিকালের সব বাড়িগুলোর বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে এই জানলা। বড় গরাদের খড়খড়ি জানলাগুলো দেখলেই যেন মনে করিয়ে দেয় পুরনো কলকাতার স্মৃতি। খড়খড়িতে চোখ রেখে উদাস সত্যজিতের চারুলতার রাস্তার দিকে সেই কয়েক পলক তাকিয়ে থাকার ওই দৃশ্য অনেকে অবাক হয়ে দেখে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
গুমার পুরনো দরজা জানলার বাজারেই এখন এদের ঠাঁই। একসময় যে ফ্রেমগুলো শোভা পেত বড় বড় দালান কোঠা বাড়িতে, এখন তা জড়া জীর্ণ হয়ে পড়ে আছে এই বাজারের কোণায়। কোনও ক্রেতা কিনতে এক ধুলো ঝেড়ে নড়বড়ে শরীরে ফ্রেমগুলোর ঠাঁই হবে কোনও এক সাধারণ বাড়িতে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
এটিকে বাংলা চলচ্চিত্রের এক অবিস্মরণীয় ফ্রেম বলে ধরা হয়। সত্যজিৎ তাঁর এই ছবিতে বাড়ির জানলার বিভিন্ন অংশ দেখিয়েছিলেন। বাঙ্গালির জীবনে কীভাবে ওতপ্রোতভাবে দরজা জানালা জড়িয়ে আছে চারুলতা ছবিটি তাঁর সুনিদিসষ্ঠ উদাহরণ। সার্সি, খড়খড়ি, ময়ূরপঙ্খীর মতন বিভিন্ন ডিজাইনের জানলা তখন বাড়িতে বসত। এখন এসব আর খুঁজে পাওয়া যায়না। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ