-
কলকাতার অন্যতম প্রাচীন নিষিদ্ধ পল্লি সোনাগাছি। এই যৌনপল্লি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় দেহ ব্যবসার কেন্দ্র। শহরটির চারশ বছরের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে সোনাগাছির নাম। এখানে সারা দিন, সারা রাত খদ্দেরদের আনাগোনা চলতেই থাকে। রাত বাড়লেই জমতে থাকে ভিড়। বিক্রি হয় সময়। ঘণ্টায় ৫০০ থেকে ৫০ হাজার রোজগার কোন ব্যাপার নয়। চিত্তরঞ্জন অ্যাভেনিউয়ের ব্যস্ততা এমনিতেই কলকাতার যে কোনো রাস্তার চেয়ে বেশি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
খরিদ্দারদের আগ্রহী দৃষ্টি, যৌনকর্মীদের খরিদ্দার ধরার চেষ্টা, আলো-আঁধারি ঘরের যৌনতা। গত দুবছর আগে পর্যন্ত সোনাগাছির ছবিটা এরকমই ছিল। করোনা পরিস্থিতির পর বদলে গিয়েছে সব কিছু। দীর্ঘদিন যৌনকর্মীদের ব্যবসা বন্ধ ছিল। অনেকের দু বেলা খাওয়া জোটেনি। কেউ বা আবার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ যোগাতে এখনও হিমশিম খাচ্ছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ -
যৌনকর্মী হিসেবে তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন এক মহিলা। তিনি বলছিলেন, “আমরা যে কী অবস্থায় পড়েছিলাম, বিশ্বাস করতে পারবেন না। একটাও খদ্দের ছিল না লকডাউনের পর থেকে। বাড়ি ফেরার উপায় ছিল না। রোজগার নেই, ছেলে, বাচ্চাকে নিয়ে কী করে বাঁচব বুঝতে পারছিলাম না। আমার মতন হাজার হাজার মেয়েদের একই অবস্থা ছিল এখানে। এখন পরিস্থিতি ভালো হয়েছে। তবে আগের মতন খদ্দের নেই”। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
ছোট্ট ঘরে একটা বিছানা, একটা টুল, জলের বোতল আর গুটি কয়েক বাসন ছাড়া যৌনকর্মীদের ঘরে আর কিছুই তেমন থাকে না। বেশীর ভাগ ঘরেই জানলা নেই। যেকটা ঘরে আছে সেই সব ঘরের জানলা বলতে গেলেই বন্ধ রাখতে হয়। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উপদেশ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে সব বিশেষজ্ঞই। যৌন পেশাটা এমনই, যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভবই নয়। সব থেকে বেশী সংক্রমণ ছড়ানোর কথা ছিল এই যৌনপল্লিগুলোতেই। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
প্রত্যহ ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ মানুষের ভিড় লেগে থাকতো সোনাগাছিতে। বিশেষজ্ঞরা ভয় পেয়েছিলেন এই রেড লাইট এরিয়াগুলো সুপারস্প্রেডারের কাজ করবে। কিন্তু তথ্য বলছে এসবের কিছুই হয়নি এই যৌনপল্লীগুলোতে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই তারা চেষ্টা করেছেন কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে। করোনার প্রথম ঢেউইয়ের সময় কলকাতার এই যৌনপল্লিতে সেভাবে থাবা বসাতে পারেনি। ব্যবসা অবশ্য লাটে উঠতে বসেছিল। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
যৌনকর্মীরা জানিয়েছেন, সঙ্গমের সময়ও মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছিলেন তাঁরা। আর এতেই অনেকে রাগ করেছিল। কিন্তু, নিজেদের অবস্থান থেকে সরে যাননি যৌনকর্মীরা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনাগাছির আরেক যৌনকর্মী জানাচ্ছেন, কন্ডোমের ব্যবহার যেমন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, একই রকমভাবে সোনাগাছিতে সঙ্গমের আগে ‘বাবু’-দের সাবান দিয়ে হাত ধোয়াও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি হাত ধুতে অস্বীকার করলে তাঁদের পালটা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন যৌনকর্মীরা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
অধিকাংশ যৌনকর্মীই এই সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছেন। খাতায় কলমে এশিয়ার সবচেয়ে বড় যৌনপল্লি কলকাতার সোনাগাছি। এখানে বাস করেন প্রায় সাত হাজার যৌনকর্মী এবং তাদের পরিবার। এছাড়াও রয়েছে ভাসমান যৌনকর্মীরা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
যারা সোনাগাছিতে থাকেন না কিন্তু কাজের সূত্রে আসেন। সেই সংখ্যা হিসেব করলে মোট যৌন কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজারের কাছাকাছি। আশ্চর্য বিষয় হলো, প্রথম ঢেউয়ের মতন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সোনাগাছি সামলে নিয়েছিল। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এখনও পর্যন্ত একজন যৌনকর্মীরও মৃত্যু হয়নি বা সিরিয়াস অবস্থায় হয়েছে। দুর্বার ভারতের যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
দুর্বার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী সব মিলিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন পাঁচ শতাংশেরও কম যৌনকর্মী। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই করে দেখিয়েছে। কীভাবে? এক যৌনকর্মী জানিয়েছেন, বারবার হাত ধোয়ার অভ্যেস করানো হয়েছে বাইরে থেকে আসা লোকজনকে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
কারও যদি জ্বর, সর্দি-কাশি, শরীর খারাপ থাকে, তাহলে তাকে ঘরে আসতে দিচ্ছিলামই না। এতে রোজগার হয় না তবুও আমিএবং আমার আশেপাশের লোকজন সুস্থ আছে।” এবার আক্রান্তের সংখ্যা একটু বাড়লেও তেমন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে কিছু ঘটেনি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
টিকা আসার পরেই দ্রুত যৌনকর্মীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পাশাপাশি শুরু হয় সচেতনতা শিক্ষা। শুধু সোনাগাছি নয়, গোটা পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত যৌনপল্লিতেই একই নিয়ম পালন করেছেন যৌনকর্মীরা। ফলও পেয়েছেন। তবে বাকি ভারতের চেহারা অবশ্য এক নয়। দিল্লিতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে ফের কাজ বন্ধ হয়ে যায় যৌনকর্মীদের। দূর্বার সংগঠনের রতন দলুইয়ের কথায়, যদি সঠিক নিয়ম মেনে সকলে চলেন এইচআইভির মতন করোনাকেও রুখে দেওয়া যাবে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
