New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/01/Circus-Cover-photo.jpg)
কলকাতায় বরাবর শীতের ট্রেডমার্ক ছিল - ইডেনের টেস্ট ক্রিকেট, কমলালেবু আর সার্কাস। এখন এসব অতীত। গত দুবছর ধরে এই শহরের অনেক কিছু বদলে গিয়েছ। বছর তিনেক আগে পর্যন্ত শীতের ছুটি মানেই দেদার মজা! এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
কলকাতায় বরাবর শীতের ট্রেডমার্ক ছিল - ইডেনের টেস্ট ক্রিকেট, কমলালেবু আর সার্কাস। এখন এসব অতীত। গত দুবছর ধরে এই শহরের অনেক কিছু বদলে গিয়েছ। বছর তিনেক আগে পর্যন্ত শীতের ছুটি মানেই দেদার মজা! এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ মিঠে রোদ গায়ে মেখে ঘুরে বেড়ানো এবং খাওয়া-দাওয়া। আর কাছেপিঠে বেড়ানো মানেই চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, নিকো পার্ক, ইকো পার্ক, বিড়লা তারামণ্ডল এবং অবশ্যই উপরি পাওনা সার্কাস। বেশীর ভাগ জায়গা করোনা আবহের কারণে বছরের অর্ধেক দিন বন্ধ থাকে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ সার্কাস? এখন তা হারিয়ে যেতে বসেছে। করোনা, লকডাউনের জেরে সার্কাসের করুণ অবস্থা। যদিও দু বছর পরে কলকাতায় ফিরে এসেছে সার্কাসের তাঁবু। অতিমারির বছরগুলো হিসেবে না রাখলেও বহুদিন যাবত সার্কাস জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ এখনকার প্রজন্মে চটজলদি কেউই সার্কাস দেখার কথা মনেই আনতে পারবেন না। জনপ্রিয় সার্কাস শো দেখার জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে থাকা যুবক-যুবতীর দল আজ বৃদ্ধ হয়েছেন। উনিশ শতকের শেষ দিক থেকেই বাঙালির বিনোদন জগতের অংশ হয়ে উঠেছিল সার্কাস। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য কলকাতার বুকেই একের পর এক ইউরোপীয় সার্কাস শো অনুষ্ঠিত হত। তাতে থাকত জোকারের কারসাজী, ট্রাপিজের দুঃসাহসী খেলা, দড়ির ওপর হাঁটা এবং পশুপাখি নিয়ে নানান রোমহর্ষক বাহাদুরির খেলা যা অনায়াসে তিন থেকে চারঘন্টা সময় ধরে টানটান উত্তেজনায় দর্শক ধরে রাখতে পারতো। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য কলকাতার বুকেই একের পর এক ইউরোপীয় সার্কাস শো অনুষ্ঠিত হত। তাতে থাকত জোকারের কারসাজী, ট্রাপিজের দুঃসাহসী খেলা, দড়ির ওপর হাঁটা এবং পশুপাখি নিয়ে নানান রোমহর্ষক বাহাদুরির খেলা যা অনায়াসে তিন থেকে চারঘন্টা সময় ধরে টানটান উত্তেজনায় দর্শক ধরে রাখতে পারতো। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ শীত আসতে না আসতে পার্ক সার্কাস ময়দান, সিঁথির মোড় কিংবা হাওড়া ময়দানে পড়ে যেত সার্কাসের তাঁবু। অতিমারির জন্যে সবার জীবনেই ঘটেছে ছন্দপতন। এর থেকে বাদ যায়নি সার্কাসের খেলোয়াড়রাও। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ দীর্ঘ দুই বছর পর পুরনো পেশায় ফেরা যাবে। এই আশায় ২০২১ এর শেষে বুক বাঁধছিলেন সার্কাসের সঙ্গে জড়িত সকলে। ২০২২ নতুন বছরে শুরু হবে সব নতুন করে। সেই মতন সিঁথির মোড়ে অজন্তা সার্কাসের তাঁবু পড়ে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ সব কিছু চলছিলও ঠিকঠাক। কিন্তু ধাক্কাটা এল ২০২২-এর শুরুতেই। ওমিক্রনের জেরে রাজ্যে ফের চালু হল কঠোর বিধি নিষেধ। "বন্য প্রাণী সংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধ, শ্রম আইনের কড়াকড়ির জন্যে এমনিতেই সার্কাসে আগের মতন দর্শক আসে না।" বলে জানান অজন্তা সার্কাসের ম্যানেজার কিশোর দাস। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ কিশোর বাবু সার্কাসের সঙ্গে জড়িত গত ৪২ বছর। তার কথায়, সার্কাস প্রথমে ধাক্কা খেয়েছিল বন্য প্রাণী সংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধের জন্যে। এ বার অতিমারির জন্যে। একদা বাঙালির শীতের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত সার্কাসের এভাবেই মৃত্যুঘণ্টা বেজেছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ এখন সার্কাসে পশুপাখি বলতে কিছু ম্যাকাও পাখি ও কুকুর। বিদেশি জিমন্যাস্টরা নেই। মূল আকর্ষণ মণিপুরের জিমন্যাস্ট, অ্যাক্রোব্যাটদের উড়ানে নিয়ে আসা হয়েছে। সঙ্গে রকমারি ব্যালেন্সের খেলা। খেলোয়াড়, কর্মকর্তাদের মধ্যে অসমের উত্তর লখিমপুরের ট্র্যাপিজ় খেলুড়ে সুমন্ত বেরা, মালয়ালি ম্যানেজার টি জয়রাজেরা রয়েছেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ সার্কাসের খেলোয়াড়েরা অনেকেই পেশা ছেড়ে রাজমিস্ত্রি, টোটো বা রিকশা চালানো বা চাষবাসের জীবন বেছে নিয়েছিলেন। এই অজন্তা সার্কাস গত ৫০ বছর ধরে দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিশোর বাবু জানান, ২০০০জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে তাদের তাঁবুতে। ৫০শতাংশ লোক নিয়ে শো করার কথা বলা হলেও। সারাদিনে দর্শক সংখ্যা হয় মাত্র দশ থেকে বারো জন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ অনেক সময় সারা দিনে টিকিটও বিক্রি হয় না। দর্শক না হলেও করোনা আবহেও একের পর এক শো করে চেলেছে অজন্তা সার্কাস!। "একটা সময় আমাদের দেখেই দর্শকরা হাসিতে লুটোপুটি খেত। শোয়ের রিং থেকে তা দেখলে আলাদাই মজা পেতাম। দর্শক বিহিন শো করতে বড্ড কষ্ট হয়। বুকের মধ্যে হাহাকার করে ওঠে।" বেজার মুখ করে বলছিল, সার্কাসের জোকার করিম শেখ। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ ১২০-২৫ জন সার্কাসকর্মী। সবাই এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রীতি মতন লড়াই করছেন। প্রতিটি শোতে দর্শকের ভিড় না হলেও ওরা প্রতিটি পারফরমেন্সের সময় সিরিয়াস। অতিমারির কয়েক বছর আগে থেকে ধুঁকছে বহু সার্কাস। অতিমারির কারণে একেবারে বন্ধ অলিম্পিক, ফেমাস, নটরাজ, এম্পায়ার, সম্রাট বা কোহিনুরের মতন বিখ্যাত সব সার্কাস দলের। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ সার্কাস কর্মীদের অনেককে বেঁচে থাকার জন্যে বেঁছে নিতে হয়েছে অন্য পেশা। শীতের শহর আস্তে আস্তে ভুলতে বসেছে সার্কাসকে। বাঙালীর সার্কাস বাঙালীর উদ্যমশীলতার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই অধ্যায়ের শেষ পৃষ্ঠা ওলটানোর বাকি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ ‘সার্কাস’ কথাটা এখন এখন একটা শ্লেষাত্মক রূপ পেয়েছে। তবুও যারা এখনও লড়াই করে যাচ্ছেন তারা মনে করেন শো কখনও শেষ হয় না। যতদিন বাঁচবেন এই সার্কাস নিয়ে থাকবেন। রিল লাইফের সঙ্গে মিলে গিয়েছে রিয়েল লাইফের। তাই ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’...! মায়ের মৃত্যুর পরেও শোকের কষ্ট বুকে চেপে দর্শকদের হাসি উপহার দিয়েছে 'মেরা নাম জোকার'-এর রাজু। কারণ, জীবনে যাই ঘটুক.... শো কখনও বন্ধ হয় না। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ