-
তিলোত্তমার অলিতে গলিতে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। সময়ের সঙ্গে সেই ইতিহাসের পাতায় ধুলো জমেছে। ধুলো ঝাড়লেই বেরিয়ে পড়ে কতশত গল্প। খসে পড়া ইট কাঠ পাথর জানান দেয় কলকাতার শহরের সেইসব আভিজাত্যের গল্পের। এরকমই এক গল্প ফানুসের। আভিজাত্যের সঙ্গে বনেদিয়ানার মিশেল। কখন যে চিনের তৈরি ল্যান্টার্ন ঢুকে পড়ল বাঙালির অন্দরমহলে তা সকলের এখন অজানা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
ইতিহাস বলছে, ফানুস প্রথম তৈরি হয়েছিল চিনে। পরবর্তীকালে বাণিজ্যের জন্য পর্তুগিজ বণিকরা যখন চিনে যান, আর তাঁদের হাত ধরেই এই ফানুস পৌঁছয় ইউরোপে। এরপর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ফানুস এবং তৈরির প্রযুক্তি। চিনাদের ফানুস তৈরির প্রথম উদ্দেশ্যে ছিল বিপদের সংকেত দেওয়ার জন্যে। শত্রু দ্বারা পরিবৃত্ত হলে তার থেকে মুক্তির জন্য ফানুস ওড়ানো হত সাহায্যের তাগিদে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
পুরোনো কলকাতার ইতিহাস ঘাঁটলেই পাওয়া যায়, একসময় কলকাতার সুতানুটি অঞ্চলে কালীপুজোর দিন বিকেলে প্রায় সব বাড়িতেই ফানুস ওড়ানোর রীতি ছিল। পরবর্তীকালে সময়ের সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছে। কলকাতায় ফানুস আসে ইংরেজদের হাত ধরে। এরকম মনে করাটা সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিকও নয়, কেন না ইংরেজরা কলকাতাকে আলোকিত করতে উদ্যোগী হয়েছিল। আলোর রোশনাইতে মুড়ে ফেলতে চেয়েছিল শহর। তাদের হাত ধরে যে ফানুস আসবে সেটাই স্বাভাবিক। হাতেগোনা যে কয়েকটি বাড়িতে আজও তা বিদ্যমান তাদের মধ্যে অন্যতম হল ভোলানাথ দত্ত বাড়ি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
গত ৯৭ বছর ধরে কালীপুজোর দিন বিকেলে সপরিবারে ফানুস ওড়ানোর জন্যে প্রস্তুত থাকেন। ভোলানাথ দত্ত বাড়ি কিংবা ভোলানাথ ধামের দুর্গাপূজা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। পুজোর পাশাপাশি এই বাড়ির ফানুস ওড়ানোর প্রথাও বেশ বিখ্যাত। কবে থেকে কলকাতার আকাশে ফানুস উড়ছে তার কোনও লিখিত প্রমাণ নেই। তবে শোনা যায়, ১৯১২ সালে দর্জিপাড়ার দে-পরিবার কলকাতায় প্রথম ফানুস ওড়ায়। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
দে-পরিবারের পর উৎসাহিত হয়ে পরবর্তীতে পাশাপাশি কলকাতার অনেক বনেদি বাড়িগুলি থেকেও ফানুস উড়তে শুরু করে। এর কয়েক দশকে মধ্যে সারা উত্তর কলকাতা জুড়ে ফানুস ওড়ানো শুরু হয়ে যায়। যদিও এখন সেভাবে আর ফানুস ওড়ে না। ছিড়ে যাওয়া ফানুসে আঠা দিতে দিতে এই কথাগুলো বলেন অজয়বাবু। অজয় দত্ত ভোলানাথ দত্ত পরিবারের অন্যতম প্রবীণ সদস্য। বলা যেতে পারে অজয়বাবুই এই ফানুস ওড়ানোর প্রধান উদ্যোক্তা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
দত্ত পরিবারে ১৯২৫ সালে প্রথম ফানুস ওড়ানো হয়। সেইথেকে আজও চলে আসছে এই প্রথা। ফানুস ওড়ানোর রীতি কলকাতার বুক থেকে হারিয়ে গেলেও এই পরিবারই তা বাঁচিয়ে রেখেছেন। আগামী প্রজন্মও যাতে এই রীতি বজায় রাখতে পারেন অজয়বাবু নিজেই ফানুস তৈরিতে উৎসাহ দেন। একটা সময় ছিল যখন ফানুসের কাগজ বিদেশ থেকে আনাতে হত। এখন ফানুসের কাগজের ধরন অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
এক একটি ফানুস তৈরির সময়, খরচ, সঠিক পদ্ধতি জানা লোকের অভাবে এই কাজ এখন কেউ আর করতে চান না। কালীপুজোর দিন এখন বাজি ফাটাতেই ব্যস্ত থাকে। বিডন স্ট্রিটের ভোলানাথ ধামের বাড়িতে দুর্গাপূজা শেষ হতেই শুরু হয়ে যায় ফানুস তৈরির প্রস্ততি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
তুলোর বল অথবা নুটি তৈরি করে তা ডুবিয়ে রাখা হয় স্পিরিটে। এরপর কালীপূজোর দিন বিকেলে হাওয়া দিয়ে ফুলিয়ে নুটি বেঁধে তাতে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়। অজয় দত্ত বলছিলেন, কালের নিয়মে এখন সব হারিয়ে যাচ্ছে। দত্ত বাড়িতে এখন ফানুস বানানোর লোকের বড় অভাব। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
বাড়ির তরুণ প্রজন্মের সকলে নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সব কাজ শেষে ফানুস নিয়ে বসার সময় হয় না। পুরনো সংস্কৃতি ধরে রাখার ধৈর্যের বড় অভাব। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
ছোটবেলায় বাবার কাছেই ফানুস তৈরির হাতে খড়ি অজয়বাবুর। এরপর থেকে সেই নিয়মেই তিনি প্রতি বছর চালিয়ে যাচ্ছেন। অজয়বাবু মনে করেন বাজি নিয়ে যখন কড়াকড়ি আর ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে। তখন সকলে বাজি ভুলে ফানুসেই মেতে উঠুক সবার জন্যে মঙ্গল হবে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
