Holika Dahan: হোলিকা দহনে কেন গোবরের ঘুঁটে পোড়ানো হয়? ঐতিহ্যের সঙ্গে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণও

হোলি শুধু রঙের উৎসব নয়, এটি মন্দের ওপর ভালর বিজয়েরও প্রতীক। এই দিনে, হোলিকা দহনের ঐতিহ্য বহুযুগ ধরে চলে আসছে, যাতে কাঠের সঙ্গে গোবরের ঘুঁটেও পোড়ানো হয়।

বিশেষ করে মহিলারা হোলিকার কাছে এই ঘুঁটেগুলি নিবেদন করে, তাদের থেকে পরিবারকে দূরে রাখে। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন এই অভ্যাসের পেছনের কারণ কী? আসুন জেনে নেই এই ঐতিহ্যের ধর্মীয়, জ্যোতিষ ও বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব।

হোলিকা দহন ও গোবরের ঘুঁটের ধর্মীয় গুরুত্ব

চোখের ত্রুটি থেকে মুক্তি হিন্দু ধর্মে একটি বিশ্বাস আছে যে গোবর ব্যবহার করা হয় অশুভ দৃষ্টি এবং নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা পেতে। পরিবার থেকে অশুভ দৃষ্টি দূর করার পর মহিলারা যখন গোবরের ঘুঁটে পোড়ায়, তখন তা অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করে এবং ঘরে ইতিবাচকতা নিয়ে আসে।

গোবরকে পবিত্র বলে মনে করা হয়

হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে গরুতে ৩৩ কোটি দেব-দেবীর বাস। তাই গোবর অত্যন্ত শুভ ও শুদ্ধ বলে বিবেচিত হয়। হোলিকা দহনে যখন গোবরের ঘুঁটে পোড়ানো হয়, তখন তা পুরো পরিবারের জন্য শুভ বলে মনে করা হয়।

পাপের বিনাশ এবং সুখ-সমৃদ্ধির আগমন

এটি বিশ্বাস করা হয় যে হোলিকা দহনের সময় ঘুঁটে পোড়ানো একজন ব্যক্তির জীবনে উপস্থিত সমস্ত বাধা দূর করে। এতে পরিবারে সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি বজায় থাকে।

জ্যোতিষশাস্ত্রের গুরুত্ব: কেন ঘুঁটে পোড়ানো হয়?

শনি ও রাহু দোষের প্রতিকার জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, ঘুঁটে পোড়ালে শনি ও রাহু-কেতুর অশুভ প্রভাব কম হয়। এই প্রতিকারটি সেই সমস্ত লোকদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী যাঁদের কুণ্ডলীতে সাড়েসাতি বা ঢাইয়া আছে।

অশুভ শক্তির বিনাশ

এটা বিশ্বাস করা হয় যে ঘুঁটে পোড়ালে তা থেকে নির্গত শক্তি অশুভ শক্তিকে দূর করে। এই কারণেই তন্ত্র-মন্ত্রেও গোবরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

বাস্তু ত্রুটি সমাধান

যেসব বাড়িতে বাস্তু দোষ আছে সেখানে হোলির দিনে ঘুঁটে পোড়ানো বাস্তুর দোষের প্রভাব কমাতে পারে।

বিজ্ঞানও ঘুঁটের গুরুত্ব স্বীকার করে

পরিবেশকে বিশুদ্ধ করে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা গেলে, গোবরে এমন প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, যা পরিবেশ থেকে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত কণা ধ্বংস করতে সক্ষম। যখন গোবর পোড়ানো হয়, তখন তা বাতাসকে বিশুদ্ধ করে এবং পরিবেশের জন্য উপকারী।

স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

গবেষণা অনুসারে, গোবরের পিঠা থেকে নির্গত ধোঁয়া মশা এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণুকে তাড়িয়ে দেয়। এতে বাতাসে উপস্থিত ক্ষতিকারক উপাদান কমে যায় এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগের ঝুঁকি কমে।

কার্বন নিঃসরণ কমায়

কাঠ পোড়ানোর তুলনায়, গোবর কম কার্বন নির্গমন করে, যা দূষণও কমায়। তাই এটি পরিবেশের জন্যও বন্ধুত্বপূর্ণ।

কীভাবে তৈরি হয় গোবরের ঘুঁটে?

হোলির কয়েক দিন আগে, মহিলারা ছোট ছোট ঘুঁটে তৈরি করে এবং রোদে শুকায়। এই ঘুঁটে গুলিকে সুতোয় বেঁধে একটি মালা তৈরি করা হয়। হোলিকা দহনের আগে, এই মালা বাড়ির সদস্যদের উপর দিয়ে যায় এবং খারাপ নজর দেয়। এরপর এই মালা হোলিকার আগুনে উৎসর্গ করা হয়।