সাতকাহন Photos

স্মৃতির সাহায্যে বেঁচে থাকা, কিন্তু পুজো মানে আজও আনন্দ

ফেলে আসা জীবনের স্মৃতি নিয়ে পুজো আসে, আবার সেই পুজো চলেও যায়। নতুন কিছু পাওয়ার বদলে একটা করে দিন গুনে নেন সময় ফুরিয়ে আসার। ওঁরা সকলেই বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা। সব থেকেও যেন না থাকার দুনিয়ায় বাস করছেন।

Written by IE Bangla Web Desk

ফেলে আসা জীবনের স্মৃতি নিয়ে পুজো আসে, আবার সেই পুজো চলেও যায়। নতুন কিছু পাওয়ার বদলে একটা করে দিন গুনে নেন সময় ফুরিয়ে আসার। ওঁরা সকলেই বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা। সব থেকেও যেন না থাকার দুনিয়ায় বাস করছেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
স্মৃতির সাহায্যে বেঁচে থাকা, কিন্তু পুজো মানে আজও আনন্দ

বৃদ্ধাশ্রম। ছবি-শশী ঘোষ

  • ফেলে আসা জীবনের স্মৃতি নিয়ে পুজো আসে, আবার সেই পুজো চলেও যায়। নতুন কিছু পাওয়ার বদলে একটা করে দিন গুনে নেন সময় ফুরিয়ে আসার। ওঁরা সকলেই বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা। সব থেকেও যেন না থাকার দুনিয়ায় বাস করছেন। ছবি: শশী ঘোষ
  • অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বৃদ্ধাশ্রমকেই নতুন সংসার মেনে নিয়েছেন। তাই এখানকার মতো করেই পুজো উপভোগ করতেই তাঁরা অভ্যস্ত। আর বাড়ি ফেরার 'স্বপ্ন' দেখেন না তাঁরা। বারো মাসের তেরো পার্বণেই একসাথে মিলে মিশে উৎসবের দিন কেটে যায়। ছবি: শশী ঘোষ
  • দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মিনিট দশেকের দূরত্বে সঞ্জয় শূরের বৃদ্ধাশ্রম। কলকাতা, হাওড়া তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলা থেকেও অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এই ঠিকানাতেই চলে আসেন। আপাতত ৬০ থেকে ৯৭ বছর বয়সের আবাসিক রয়েছেন। তাঁদের সকলের দায়িত্ব তিনি একা নিজের হাতে সামলান। ছবি: শশী ঘোষ
  • সঞ্জয়বাবুর কথায়, "মানুষের বয়স বাড়তে থাকলে তাঁরা একাকীত্বে ভোগেন। এই সময় পাশে কাউকে দরকার হয়।" উনি বৃদ্ধাশ্রমে সেই কাজটাই করে থাকেন। মূলত চার রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়ে মানুষ একটা বয়সের পর বৃদ্ধাশ্রমে আসেন। ছবি: শশী ঘোষ
  • সমস্যাগুলো হল, ছেলে মেয়ে বিদেশ থাকে, কেউ বিয়ে করেননি, কারও মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, কেউ আবার পারিবারিক সমস্যার সম্মুখীন। কেউই স্বেচ্ছায় নিজের হাতে তৈরি সংসার ফেলে আসতে চান না। ছবি: শশী ঘোষ
  • বয়স হয়ে যাওয়াতে সংসারে তাঁদের ঠাঁই নেই। অনেকেরই ছেলেমেয়ে নিয়ে ভরা সংসার ছিল। কিন্তু তাতে আর কী এসে যায় এখন? ব্যর্ধক্য আসার পরই সংসারে ব্রাত্য তাঁরা। আপনজন বলতে আশ্রমেরই অন্যান্য সদস্যরা। যে সব বৃদ্ধবৃদ্ধা হাঁটতে চলতে সক্ষম, তাঁরা দুর্গাপুজো হোক বা সরস্বতী, নিজেরাই দল বেঁধে বেরিয়ে পড়েন। যাঁরা শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাঁরা বিছানাতেই শুয়ে বসে বই পড়ে সময় কাটান। ছবি: শশী ঘোষ
  • সঞ্জয়বাবুর বৃদ্ধাশ্রমের সবচেয়ে বয়স্ক আবাসিক ডাঃ বামাপদ পাল। বয়স ৯৭ বছর। তিন বছর আগে বহরমপুরের বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। বহুদিন কেন্দ্রীয় সরকারী চাকরি করছেন। পেশায় চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে জীবনের বেশীরভাগ সময় কেটেছে পাহাড়েই। ছবি: শশী ঘোষ
  • বামাপদবাবু অবসরের পরে ছেলে-বৌদের সঙ্গেই ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েক বছর স্বামী-স্ত্রী কেউই হাঁটতে চলতে পারেন না। যার ফলে ছেলে এবং পুত্রবধূদের কাছে বিরাট সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ান। পারিবারিক অশান্তি এড়াতে দুজনেই বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসেন। বামাপদবাবু হাসিমুখে বলেন, "এখানে বাড়ির চেয়ে ভালো আছি।" গত বছর স্ত্রী মারা গিয়েছেন। তাতে একটু মন খারাপ হলেও এখানেই ভালো আছেন। ছবি: শশী ঘোষ
  • বেহুলা হালদারের বয়স ৮৩ বছর। মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর এক ছেলে, চার মেয়েকে নিয়ে সংসার। মেয়েদের বিয়ে হওয়ার পর ছেলের নামে বাড়ি লিখে দেন। এরপর শুরু হয় অত্যাচার। বেহুলা দেবীর জীবনের বড় ভুল, ছেলেকে ভালোবেসে তার নামে বাড়ি লিখে দেওয়া। ছবি: শশী ঘোষ
  • বেহুলা দেবী এক সময় স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন। বই পড়তে আর কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসেন। ছেলে এবং পুত্রবধূর সেসব পছন্দ ছিল না। নিজের হাতেগড়া সোনার সংসার ফেলে এখানে চলে আসতে হল। ছেলের প্রতি কোনও টান নেই। তবুও পুজোর সময় বাড়ির জন্যে মন কেমন করে। ছবি: শশী ঘোষ
  • বেহুলা দেবীর পাশের বেডে থাকেন ৮৩ বছরের বৃদ্ধা কমলা দাস। হাওড়ার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর জীবন অনেকটা বেহুলা দেবীর মতই। মনে অনেক কষ্ট নিয়েও বাড়ির চেয়ে এখানে ভালো আছেন। অষ্টমীর সকালে বৃদ্ধাশ্রমের সকলে ঠাকুর দেখতেও বেরিয়েছেন। ছবি: শশী ঘোষ
  • সাবিত্রী সাহার বয়স ৬৬ বছর। দত্তপুকুরে বাড়ি ছিল। খেতে ভালোবাসেন বিরিয়ানি। একসময় সরকারী সংস্থার কর্মচারী ছিলেন। পারিবারিক অশান্তির কল্যাণে বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসেন। নিজের মত সংসার গুছিয়ে নিয়েছেন এখানে। পুজোর সময় বৃদ্ধাশ্রমের পাশের পুজোতেই অঞ্জলি সেরে নেন। বাড়ির জন্যে এখন আর মন খারপ নেই তাঁর। ছবি: শশী ঘোষ
  • বৃদ্ধাশ্রমের সব থেকে পুরনো আবাসিকদের মধ্যে একজন ৭৯ বছরের দিলীপ কুমার বোস। ১৩ বছর এখানে আছেন। মৎস্য দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তাঁর গল্প অবশ্য অন্যদের মত নয়। তিনি ব্যাচেলর হয়ে জীবন কাটিয়েছেন। শেষ বয়সে এখানে চলে এসেছেন। ছবি: শশী ঘোষ
  • পুজো সব মানুষের কাছে অন্য এক অনুভূতির জায়গায় থাকে। বয়স হলেও পুজোর ক'দিন একটু অন্যরকমভাবে কাটাতে চান সকলেই। কিন্তু স্মৃতিগুলো আটকে পড়ে থাকে বিগত দিনে। এখন যে ক'দিন বেঁচে থাকা সে ক'টা দিন একরাশ যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বিসর্জনের অপেক্ষায়। ছবি: শশী ঘোষ
kolkata Durga Puja 2019