সাতকাহন সাতকাহন

শোভাবাজার রাজবাড়ি: ক্যামেরাবন্দি চলমান ইতিহাস, দেখুন ফোটোগ্যালারি

শুধু ঐতিহ্য আর ইতিহাস নয় এই শোভাবাজারের রাজবাড়ির মাতৃমূর্তিরও বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য এবং পুজোর উপাচারও বেশ চমকপ্রদ। সন্ধিপুজোতে কামানের গোলার শব্দে শুরু হত পুজো এবং শেষও হত এভাবে। এখন সেসব স্মৃতি প্রথা মেনে অষ্টমী আর নবমীতে ফাঁকা বন্দুকের শব্দ করা হয়।

Written by IE Bangla Web Desk

শুধু ঐতিহ্য আর ইতিহাস নয় এই শোভাবাজারের রাজবাড়ির মাতৃমূর্তিরও বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য এবং পুজোর উপাচারও বেশ চমকপ্রদ। সন্ধিপুজোতে কামানের গোলার শব্দে শুরু হত পুজো এবং শেষও হত এভাবে। এখন সেসব স্মৃতি প্রথা মেনে অষ্টমী আর নবমীতে ফাঁকা বন্দুকের শব্দ করা হয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
shobhabazar rajbari, শোভাবাজার রাজবাড়ি, Durga, দুর্গা, Durga puja, দুর্গাপূজা, North Kolkata, উত্তর কলকাতা, Thakurbari, ঠাকুরবাড়ি, History, ইতিহাস

শোভাবাজার রাজবাড়ি- ছবি শশী ঘোষ

  • উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির পুজো বলতেই প্রথম যে নামটা মনে আসে, সেটি শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। ১৭৫৭ সালে রাজা নবকৃষ্ণ দেবের হাতে শুরু হওয়া এই পুজো এ বছর ২২৯ বছরে পা দিল।
  • শোনা যায়, পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের জয়ের পর লর্ড ক্লাইভকে খুশি করতে রাজা নবকৃষ্ণ দেব এই পুজো শুরু করেন। সেই থেকে এখনও চলে আসছে ঐতিহ্যের এই পূজো। সূচনার কয়েক বছর পর এই পুজো দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
  • এই বাড়ির সপ্তম প্রজন্মের অলোক কৃষ্ণ দেবের ঝুলিতে রয়েছে অনেক জমানো গল্প। শোনা যায় শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস একবার এখানে ৯০ দিন পুজো করেছিলেন। পুজোর জন্য শ্রীরামকৃষ্ণ এই বাড়িতে এসেছেন শুনে আশপাশ থেকে এত লোক আসতে শুরু করে যে ঘরে টেকা মুশকিল হয়ে যায়।
  • শুধুমাত্র শ্রীরামকৃষ্ণই নয়, এই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ থেকে স্বামী বিবেকানন্দ, এমনকী বিদ্যাসাগর, গান্ধীজির মতো মানুষদেরও যাতায়াত ছিল।
  • শুধুমাত্র ঐতিহ্য আর ইতিহাসের জন্যই যে এই পুজো অনন্য তা নয়। শোভাবাজার রাজবাড়ির মাতৃমূর্তির বিশেষ এক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এছাড়া, এখানকার পুজোর উপাচারও বেশ চমকপ্রদ। সন্ধিপুজোতে কামানের গোলার শব্দে শুরু হত পুজো এবং শেষও হত সশব্দেই। তবে, এখন সে সব শুধুই স্মৃতি, বর্তমানে কেবল অষ্টমী আর নবমীতে ফাঁকা বন্দুকের শব্দ করা হয়।
  • মা দুর্গা এই বাড়িতে বৈষ্ণবী হিসেবে পূজিতা হন। তাই শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজোয় অন্নভোগ থাকে না। গোটা ফল, গোটা আনাজ, শুকনো চাল, কচুরি, খাজা, গজা, মতিচুর-সহ নানা ধরনের মিষ্টি দেবীকে উত্সর্গ করা হয়।
  • সে কালে দেবীকে বসানোর জন্যে বিরাট এক সোনার সিংহাসন তৈরি করা হয়েছিল। এই সিংহাসনকে ঘিরে ছিল সোনা রুপার কারুকাজ। ঠাকুর দালানের সামনে আবার অথিতি আপ্যায়নের জন্য বাইজি নাচের আসর বসত। আর এরপর চলতো ইংরেজদের প্রিয় বল ড্যান্স।
  • উল্টো রথের দিন কাঠামো পুজো দিয়ে শুরু হয় দেবীমূর্তি তৈরির কাজ। এখনও রাজবাড়িতেই চলে প্রতিমা নির্মাণ। সেদিন থেকে পুজো শুরু হওয়ার দিন পর্যন্ত ব্রাহ্মণরা বাড়ির ঠাকুর দালানে নিয়ম করে চণ্ডীপাঠ করতেন। এছাড়া রামায়ণ ও মহাভারত পঠেরও চল ছিল।
  • এক সময় সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এই তিন তিথিতেই বলি দেওয়ার প্রচলন ছিল। এখন পশুবলি দেওয়া প্রথা উঠে গেলেও চালকুমড়ো, আখ, মাগুর মাছ ইত্যাদি বলি দেওয়ার রীতি আছে।
  • এই বাড়ির রীতি অনুযায়ী, দশমীর দিনই প্রতিমা বিসর্জন হয়।
  • প্রতিমার সামনে একটা বড় হাড়িতে জল রাখা হয়। সেই জলে দেবীর পায়ের প্রতিবম্বের ছবি দেখে সবাই প্রণাম করে। একে দর্পণ বিসর্জন বলা হয়।
  • দশমীর দিন প্রতিমা নিয়ে বেরোনোর সময় অতীতে একটি নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হত। ইদানিংসরকারি আদেশে সেই পাখি ওড়ানো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবুও রীতি অনুযায়ী মাটির তৈরি নীলকণ্ঠ পাখি নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। তবে এবার ফানুসের গায়ে নীলকণ্ঠ পাখি এঁকে ওড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন দেব পরিবারের সদস্যরা।
  • শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো না দেখলে আজও অনেকের কাছেই পুজো অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
Durga Puja 2019 kolkata