বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এই তেরো পার্বণের মধ্যে শীতকাল অন্যতম। মিঠে রোদ্দুর গায়ে লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো। ক্রিসমাসের কেক, পিকনিক, আর সার্কাস। যদিও এমনটাই জেনে এসেছে ৯০এর দশক পর্যন্ত ছেলে মেয়েরা। কিন্তু এখন নিয়ম করে শীতকাল এলেও বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। যেমনটা বদলেছে গড়ের মাঠে বইমেলা। নলেন গুড়ের মিষ্টি। ঠিক তেমনি সার্কাস। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
পরিযায়ী পাখির মতন হঠাৎ সার্কাস দু'একটা দেখা গেলেও সংখ্যায় কমে আসছে। নানা অসুবিধার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে কোনও রকম টিঁকে আছে সার্কাসের দলগুলো। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
শীতের তিন মাস ধরে এই সার্কাসের দলগুলো শহরের এদিক ওদিক তাঁবু খাটিয়ে মানুষকে মাতানোর চেষ্টা করে বটে কিন্তু দর্শক জোটে কই! সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এখনকার প্রজন্মে চটজলদি কেউই সার্কাস দেখার কথা মনেই আনতে পারেনা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
জনপ্রিয় সার্কাস শো দেখার জন্য সারাবছর অপেক্ষা করে থাকা যুবক-যুবতীর দল আজ বৃদ্ধ হয়েছেন। উনিশ শতকের শেষ দিক থেকেই বাঙালির বিনোদন জগতের অংশ হয়ে উঠেছিল সার্কাস। সার্কাসের শুরুটা হয়েছিল প্রফেসর প্রিয়নাথ বসুর হাত ধরে, ১৮৮৭ সালে। নাম ছিল দ্য বেঙ্গল সার্কাস। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
ছোট জাগুলিয়ায় প্রিয়নাথ বাবুর জন্ম। ছোট থেকেই কুস্তি ও ঘোড়সওয়ারির প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। প্রথম দিকে কলকাতা এবং তার আশেপাশে কিছু কুস্তির আখড়ার পত্তনও করেন তিনি। সেই আখড়াগুলিতে প্রিয়নাথ স্বয়ং শরীরের কসরত শেখাতে শুরু করেন। গ্রাম থেকে গ্রামে শিখিয়ে বেড়াতেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
এই কুস্তির শেখানোর মাঝে আগ্রহবোধ করেন ঘোড়সওয়ারির। এই ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দিতে গিয়েই জম্ম হয় সার্কাসের। ক্রমে ক্রমে প্রবেশ ঘটে আরও জীবজন্তুর। বাঘের মুখে মাথা ঢুকিয়ে খেলা দেখানো শুরু হয়। নাম হতে থাকে সেই সার্কাসের। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
ক্রমে নানা দেশীয় জমিদার থেকে বিদেশি রাজাদের দফতরেও ছড়িয়ে পড়ে সেই নাম। আসতে থাকে আমন্ত্রণ। রমরমিয়ে চলতে থাকে দ্য বেঙ্গল সার্কাস। এই ছিল শুরুর দিকে ইতিহাস। এরপর ধীরে ধীরে ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য কলকাতার বুকেই একের পর এক ইউরোপীয় সার্কাস শো অনুষ্ঠিত হত। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
তাতে থাকত জোকারের কারসাজী, ট্রাপিজের দুঃসাহসী খেলা, দড়ির ওপর হাঁটা এবং পশুপাখি নিয়ে নানান রোমহর্ষক বাহাদুরির খেলা যা অনায়াসে তিন থেকে চারঘন্টা সময় ধরে টানটান উত্তেজনায় দর্শক ধরে রাখতে পারতো। এখন সার্কাস এলেও দর্শক আসনে ধুলো পরে থাকে। আগের মতন দর্শক আসে না। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
বন্য প্রাণী সংক্রান্ত নানা বিধিনিষেধ, শ্রম আইনের কড়াকড়ির জন্যে এমনিতেই সার্কাসে জীবজন্তু নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ৫০শতাংশ লোক নিয়ে শো করার কথা বলা হলেও। সারাদিনে দর্শক সংখ্যা হয় মাত্র দশ থেকে বারো জন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
তবু, প্রতিদিন রংচটা জামাকাপড়ে, তাপ্পিমারা তাঁবুতে সেজে ওঠে সার্কাস। বাহারি আলো জ্বলে, অংবং মিউজিক চলে। মুখে সাদা হাসি মেখে ভাঙাচোয়ালে হেসে ওঠে সং। একে অপরকে গাট্টা মারে। হেসে হেসে গড়িয়ে পড়ে সাত রঙ্গা কার্পেটে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
বাইক চালিয়ে ঢুকে পড়ে আগুনগোলকে। মরতে মরতেও আনন্দ দিয়ে চলে। ওরা ঝুলতে ঝুলতে খপ করে ধরে ফেলছে দড়ি। পড়তে পড়তেও সামলে নেয়। একটা খেলা শেষ ফাঁকা দর্শক আসনের দিকে নতজানু হয়ে শুকরিয়া কুড়োয়। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
রিল লাইফের সঙ্গে মিলে গিয়েছে রিয়েল লাইফের। তাই ‘দ্য শো মাস্ট গো অন’...! মায়ের মৃত্যুর পরেও শোকের কষ্ট বুকে চেপে দর্শকদের হাসি উপহার দিয়েছে 'মেরা নাম জোকার'-এর রাজু। কারণ, জীবনে যাই ঘটুক.... শো কখনও বন্ধ হয় না। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ