-
বিজেপি রাজ্য সভাপতি হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলেন দিলীপ ঘোষ। অথচ বিজেপি রাজ্য সভাপতির ভূমিকা কী, একসময় তা জানতেনই না মেদিনীপুরের সাংসদ! অমিত শাহ শুধু ফোনের ওপার থেকে তাঁকে চারটি শব্দ বলেছিলেন।
-
এরপরই বাংলা বিজেপির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতির অন্যতম চর্চিত মুখ দিলীপ ঘোষ। দ্বিতীয়বার বিজেপি রাজ্য সভাপতি হিসেবে যাত্রার শুরুর দিন এভাবেই প্রথমবার রাজ্য সভাপতি হওয়ার স্মৃতি রোমন্থন করলেন মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ। আর ফাঁস করলেন অমিত শাহের বলা সেদিনের ৪টি শব্দ।
-
দ্বিতীয়বারের জন্য বঙ্গ বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার মঞ্চে উঠে দিলীপ করজোড়ে প্রথমে বললেন, ‘‘দলের এক কোটি সদস্যকে প্রণাম জানাচ্ছি। সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন বলে প্রণাম জানাচ্ছি না’’।
-
দ্বিতীয় বার বিজেপি সভাপতি হওয়ার পর মুকুল রায় ও রাহুল সিনহার প্রশংসায় পঞ্চমুখ দিলীপ ঘোষ। বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘মুকুলদা-রাহুলদার আশীর্বাদে দল এগিয়েছে’’। এদিন বিজেপি সভাপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর মুকুল রায়কে করজোড়ে হেসে নমস্কার জানান দিলীপ। পাল্টা হেসে নমস্কার জানান মুকুলও। অন্যদিকে, দিলীপের পিঠ চাপড়ে দেন প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা।
-
এরপরই স্মৃতির সরণি বেয়ে দিলীপ বলতে শুরু করেন, ‘‘তখন একবছরও হয়নি রাজনীতিতে এসেছি। রাহুলদার (রাহুল সিনহা, প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি) নেতৃত্বে কাজ করছিলাম। একদিন অমিত শাহজি ফোন করে মাত্র চারটি শব্দ বলেছিলেন, ‘দিলীপবাবু আপকো প্রদেশকা অধ্যক্ষ বনায়া যা রহা হ্যায়’। এটুকুই বলেছিলেন, তাছাড়া কোনও ঘোষণা নেই। কিছু বোঝার আগেই ফোন রেখে দিয়েছিলেন। রাজ্য সভাপতির ভূমিকা কী তখন তাই জনতাম না’’
-
‘‘সভাপতি কী তা বোঝার আগেই নির্বাচনে লড়তে হল। এরপর সকলে আমায় বিধায়ক, সাংসদ বানিয়ে দিলেন। ৪ বছর হল সভাপতি হলাম। এরমধ্যে সভাপতি হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি। কতটা হতে পেরেছি, তা আপনারা (দলের কর্মী-সমর্থক) বলবেন। তবে কিছুটা নিশ্চয়ই হতে পেরেছি, তাই আবার আমায় সভাপতি করা হল’’। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিজেপির দলীয় নির্বাচনে পুনরায় রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন দিলীপ। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন তিনি।
-
এদিন দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগঘন হয়ে পড়েন দিলীপ। বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘আমার সে সব কর্মীদের কথা মনে পড়ছে। যাঁদের বলিদানে, আত্মত্যাগে আমাদের দল এগিয়েছে। আমাদের কর্মীকে মেরে গাছে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ৯২ জনকে বলিদান দিতে হয়েছে। এতবড় বোঝা নিয়ে এগোচ্ছি আমরা। কর্মীরা যেভাবে লড়াই করেছেন, তাতেই আমাদের ১৮ সাংসদ দিল্লি গিয়েছেন। আমাদের কর্মীরা রক্ত জল করে লড়াই করেছেন। মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। সেই কর্মীদের কথা বলতে ভুলে গেলে চলবে না। জয় শ্রী রাম বলে যখন ঝান্ডা নিয়ে নাচতে দেখি, আবার সেই তাঁদেরকে যখন দেখি শান্ত হয়ে শুয়ে রয়েছেন, মালা দিতে হয়’’। এই মন্তব্যের সময় দিলীপ ঘোষের কণ্ঠ আবেগরুদ্ধ হয়ে যায়।
-
অন্যদিকে, দিলীপ ঘোষের বিতর্কিত মন্তব্য বরাবরই খবরের শিরোনামে জায়গা করে নেয়। ক’দিন আগেও ‘কুকুরের মতো গুলি করে মারা’ মন্তব্যে দলের অন্দরেই সমালোচিত হয়েছেন দিলীপ। এমন প্রেক্ষিতে নিজের অবস্থানে অনড় থেকে এদিন বিজেপি রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘আমার কথা নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। আমরা পরোয়া করি না। হতাশা থেকে সমালোচনা করছে এখন। আমরা বলার মতো জায়গায় এসেছি, শোনাব, শুনতে হবে’’।
-
দিলীপকে এবার আর সভাপতির পদে নাও রাখা হতে পারে, এমন জল্পনা মাথা তুলেছিল। এরপরই তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিন অন্যদল থেকে বিজেপি-তে আসা নেতাদের প্রসঙ্গে মুখ খোলেন সদ্য সভাপতি পদে পুনর্বহাল দিলীপ। অর্জুন-খগেন মুর্মুদের নাম করে বঙ্গ বিজেপির সভাপতি এদিন বলেন, ‘‘অন্য দল থেকে কেউ যখন যোগ দিতে আসেন, আমায় বলা হয়, দাদা কী পদ দেবেন? আমি বলি, পদ নয় ঝান্ডা দেব। আমার বন্ধু অর্জুন সিং। বিধানসভায় যখন যেতাম, তখন যে আমার সবথেকে ভাল বন্ধু ছিলেন, তিনি খগেন মুর্মু। তিনিও এখন আমার দলে। যাঁর সঙ্গে সবথেকে বেশি ঝগড়া করেছি, সেই অর্জুন সিংও আমার দলে। আমি ওখানে ডায়লগ দিতাম, বন্ধুতা করলেও বিজেপি করতে হবে, শত্রুতা করলেও বিজেপি করতে হবে। যাঁরা অন্য দল থেকে এসেছেন, তাঁরা রাজনীতি খুঁজবেন না, বিজেপি একটা পরিবার, পরিবারকে বুঝুন’’।
-
সব মিলিয়ে পদে পুনর্বহাল থেকে আবেগ-কৃতজ্ঞতা-প্রত্যয়-বার্তা দিয়েই নয়া ইনিংস শুরু করলেন দিলীপ ঘোষ।
