প্রার্থী ঘোষণা করেই একজোট হয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু টিকিট না মেলায় মোহভঙ্গ হয়েছে একাধিক হেভিওয়েটের। কোথাউ আবার প্রার্থী বহিরাগত হওয়ায় অসন্তোষ চরমে। উত্তরের শিলিগুড়ি থেকে দক্ষিণের ভাঙড়- প্রার্থী তালিকা ঘিরে তৃণমূলে এখন বিদ্রোহের সুর।
টিকিট না পেয়ে প্রকাশ্যেই দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম। ফেসবুক পোস্টে জানান, 'দলের আজকে আমার প্রয়োজন ফুরালো।' এরপরই উত্তেজনা ছড়ায় ভাঙড়ে। পরে সংবাদ মাধ্যমে কান্নাভেজা গলায় আরাবুল বলেন, 'কঠিন সময়ে দলের হযে কাজ করেছি। যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করেছি। কিন্তু আজ টিকিট দিল না। হয়তো আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। এই দলটাকে বুকে আঁকড়ে নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে লড়াই করেছি। আজকে ভাঙড়ের মানুষ যেটা বলবে সেটাই করব।'
২০০৬ সালে যখন রাজ্যজুড়ে বামেদের আধিপত্য তুঙ্গে, তখন ভাঙড়ে তৃণমূলের পতাকা উড়িয়েছিলেন আরাবুল। তারপরে অবশ্য একাধিক বিতর্কে জড়িয়ে বারবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। এবার সেই আরাবুলকেই প্রার্থী না করায় উত্তপ্ত আরাবুল অনুগামীরা ভাঙড়ের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। ভেঙে দেওয়া হয় তৃণমূলের কার্যালয়। পরে ঘটনাস্থলে যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী।
দক্ষিণ ২৪ পরগার সাতগাছিয়া থেকে চারবার জিতেছে সোনালি গুহ। দুর্দিনে মমতার ছায়াসঙ্গী হিসাবেই পরিচিত তিনি। কিন্তু এবার টিকিট না মেলায় কাঁদতে কাঁদতে নেত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়লেন সোনালি। নারী দিবসের আগে তাঁকে দল যোগ্য সম্মান দিল বলে জানান অভিমানী সোনালি। তাঁর কথায়, 'বহু লড়াই-আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থেকেছি। এবার আর আমায় টিকিট দিল না। নারী দিবসের আগে আমায় দল যোগ্য সম্মান দিল।'
এবার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী করেনি নলহাদিটির বিদায়ী বিধায়ক মইনুদ্দিন শামসকে। তাই 'বেসুরো' তিনিই। কেন বহিরাগত রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংকে প্রার্থী করা হল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। টিকিট না পেয়ে অন্য দলের হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে থাকবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
সিঙ্গুরের বিদায়ী বিধায়কও এবার ভোট তৃণমূলের টিকিট পাননি। বদলে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ বিরোধী বেচারাম মান্নাকে। তারপরই সুর চড়িয়ে বর্যীয়ান মাস্টারমশাই বলেন, 'নেত্রী বললেও বেচারামের হয় ভোটের প্রচার করবেন না।'
নেতৃত্বের কাছের বলেই পরিচিত ছিলেন বসিরহাট দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক প্রাক্তন ফুটবলার দিপেন্দু বিশ্বস। কিন্তু আচমকাই প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ তাঁর নাম। সুপ্রিমোর কেন এই পদক্ষেপ তা ভেবে পাচ্ছেন না দিপেন্দু বিশ্বাস। তাঁর কথায়, 'আমি হার্ড ওয়ার্ক করেছি। উন্নয়নের প্রচুর কাজ হয়েছে। কিন্তু গোল করেও খেলার সুযোগ পেলাম না। দল কাকে প্রার্থী করবে সেটা নেতৃত্বের বিষয়। কিন্তু, ভাল খেললে তো সুযোগ আসে। আমিও আশা করেছিলাম। কিন্তু হল না। তবে, সিদ্ধান্ত দলের তরফে আগে জানালে ভাল লাগতো।'
শিলিগুড়ি থেকে তৃণমূলের প্রার্থী এবার অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র। কিন্তু তাঁকে ঘিরে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। শিলিগুড়ির প্রাক্তন এক তৃণমূল কাউন্সিলরের দাবি বহিরাগত প্রার্থীকে নিয়ে ভোটে জেতা অসম্ভব।