-
ভলিবল! ফুটবল ও ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার ভিড়ে এই খেলাটি প্রচারের আলো থেকে অনেকটাই দূরে। প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে কবাডির মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাও। বাংলার অন্যতম প্রাচীন দুই খেলা কবাডি এবং ভলিবল। বাংলার মাটির সঙ্গে এই খেলার নিবিড় যোগ রয়েছে। বর্তমানে প্রচারের আলো থেকে অনেক দূরে ভলিবল খেলোয়াড়রা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
ময়দানে ঠিক কোথায় ভলিবল শেখানো হয়? এই প্রশ্নের উত্তরে, সাধারণ ক্রীড়াপ্রেমী তো বটেই নিয়মিত ময়দানে আসা লোকজনই সঠিকভাবে বলতে পারবেন না। ভলিবলে বাংলা দলের কোনও খেলোয়াড়ের নাম জানেন? সকলেই হতবাক হবে এই প্রশ্নেও। সঠিক উত্তরের জন্যে আপনার সাহায্যে নিতে হতে পারে গুগলেরও। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
হায়দরাবাদের মেয়ে অলিম্পিক্সে পদক না জিতলে তাঁর বাবার কথা হয়তো এখনও অজ্ঞাতই থেকে যেত। অথচ এই ভলিবলকে কেন্দ্র করে বাংলার বিভিন্ন জেলার গ্রামগুলোর ছেলে-মেয়েরা অনেক পদক নিয়ে এসেছে অতীতে। এর জ্বলজ্বলে উদাহরণ উত্তর ২৪ পরগণার বারসাতের মেঘা দাস। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
বারাসাতের মেয়ে হলেও মেঘার শুরুটা হয়েছিল মগরা ভলিবল অ্যাকাডেমিতে। এই অ্যাকাডেমির প্রাণপুরুষ প্রভাত ঘোষ মগরাতেই একটা বাড়ি ভাড়া করে মেঘার পরিবারকে বছরের বেশি সময় রেখে দেন। পরিবারকে বিভিন্নভাবে সাহায্যও করেন মেঘার কোচ প্রভাত বাবু। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
৬ ফুটের বেশি উচ্চতার উনিশ বছরের মেঘার ঝুলিতে রয়েছে জাতীয় পর্যায়ের গোটা সাতেক সোনার মেডেল। এছাড়া মিনি, সাবজুনিয়র, জুনিয়র সহ খেলো ইন্ডিয়া গেমসে বাংলা টিমকে একাধিকবার চ্যাম্পিয়ন করে জাতীয় শিবিরেও ডাক পেয়েছিলেন এই ‘অ্যাটাকার’। এরকম একের পর এক সাফল্যের পরেও লোক চক্ষুর অন্তরালে রয়ে গিয়েছেন মেঘা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
তারপরেও কোনও আক্ষেপ ছিল না এই খেলোয়াড়ের। সমস্যার শুরু গত বছর থেকে। গত দু’বছরে অতিমারির জন্যে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁর জীবন। গত বছরই ভারতীয় দলের হয়ে উড়ে যাওয়ার কথা ছিল থাইল্যান্ডে। হঠাৎ করোনা আর লকডাউন। বন্ধ হয়ে গেল কেরালার তিরুবনন্তপুরমের জাতীয় শিবির। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
মেঘা ফিরে আসতে বাধ্য হন বারাসতে নিজের বাড়িতে। ফিরেই চরম সঙ্কটে পড়ে যান বাংলার এই প্রতিশ্রুতিবান ভলিবলার। রোজগার বন্ধ হয়ে যায় মেঘার বাবা গোপাল দাসেরও। অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের সঙ্গে লড়াই শুরু হয় এই ভলিবলারের। ঠিক মতন খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছিল গোটা পরিবারকে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
“হাত পা ভেঙে কোনও মানুষকে পঙ্গু করে দিলে যেমন হয়। ভলিবলকে ছাড়া ঠিক তেমনটাই আমার অবস্থা হয়েছিল। খেলতে পারছি না। বাইরে বেরোতে পারছিনা অদ্ভুত এক কষ্ট চেপে বসে আছি”, এমনটাই জানাচ্ছিলেন মেঘা। এই বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করে ইংরেজি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ভবানীপুরের এক কলেজে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
আবার ভলিবল কোর্টে ফেরার চেষ্টা পুরোদমে শুরু হয়েছে। বারাসতের চিলতে বেড়া দেওয়া ঘরে বাবা, মা ও দিদাকে নিয়ে থাকেন মেঘা। মেঘার বাবা গোপাল দাসের আগে আগে পাখির ব্যবসা ছিল। সেই ব্যবসা নিষিদ্ধ হওয়ায়। এখন তিনি বারাসত ফ্লাইওভারের নিচে একটি ছোট্ট ইমিটেশনের দোকান চালান। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
এমনিতে পুজোর সময় ছাড়া দোকান প্রায় চলেই না। তার ওপর গত বছর থেকে লকডাউনের জন্য তিনি তো দোকানই খুলতে না পারায় ক্ষতি হয়েছে অনেক। শেষ হয়ে গিয়েছে জমানো শেষ সম্বলটুকুও। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
নিজেও এক সময় ক্যারাটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন গোপাল বাবু। তিনি বলছিলেন, “মেয়েটা জাতীয় দলের হয়ে খেলবে এই স্বপ্ন দেখেছিলাম। কোভিডের জন্যে সব শেষ হয়ে গেল। নিজে খেলোয়াড় ছিলাম, তাই জানি একজন খেলোয়াড়কে যে পরিমাণ পুষ্টিগত খাবার, ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন তা কিছুই করতে পারিনা মেয়ের জন্যে। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।” এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
ভেঙে পড়তে দেখেও বাবাকে মনোবল জুগিয়ে যান মেঘা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে জাতীয় দলে খেলার জন্য। প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
মেঘা বলছিলেন, “কেরালায় আমাদের ১৭ জন মেয়েকে তৈরি করা হয়েছিল, থাইল্যান্ডে এক আন্তর্জাতিক যুব টুর্নামেন্টে খেলার জন্য। যদি আমরা ভালো ফল করতাম, তাহলে এই দলটাই খেলতো দেশের জার্সিতে। অতিমারির কারণে তা না হওয়ায় বাড়ি ফিরেছি। অনেক সমস্যা হচ্ছে। তবে আমি সব মানিয়ে নিয়েই নিজেকে তৈরি রাখছি জাতীয় শিবিরে যাওয়ার জন্য।” এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
এই জাতীয় শিবিরে বাংলা থেকে একমাত্র মেঘাই সুযোগ পেয়েছিলেন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের সেরাটাই উজার করে দিতে চেয়েছিলেন। তবে তাল কেটেছে করোনা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
দেশের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই উঠে আসে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে। প্রথম থেকেই তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ দারিদ্র্যতা। ভলিবলের মতন পিছিয়ে পড়া খেলায় মেঘার মতন খেলোয়াড়রাই আশার আলো। আত্মবিশ্বাস এবং আত্মত্যাগ এগুলোই যেন মেঘার মতন খেলোয়াড়দের প্রধান রসদ। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
