-
দেশ-সহ রাজ্য এখন করোনা অতিমারীর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত বছর থেকে স্তব্ধ জনজীবন। ফুটবলের মক্কা কলকাতার ময়দান খাঁ খাঁ করছে। প্লেয়াররা মাঠে নেমেছে দর্শকদের ছাড়া। মাঠে নেই কোনও ফ্যানেদের চিৎকার। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
ময়দানে পা রাখলেই শ্মশানের নিস্তব্ধতা। সব কিছুরই ঘটেছে ছন্দপতন। মাঠকে ঘিরে যাঁদের জীবিকা তাঁদের সংসারেও নেমে এসেছে অন্ধকার। এই তাঁদের মধ্যেই একজন যমুনা দাস। মাঠের সঙ্গেই যাঁর হৃদয়ের সম্পর্ক। আসল নামে চিনলেও ময়দানে যাকে লজেন্স মাসি বা লজেন্স দিদি বলে এক নামে চেনে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
গড়ের মাঠ থেকে যুবভারতী, সেখান থেকে শহর পেরিয়ে বারাসত, কল্যাণী অথবা শিলিগুড়ির কল্যাণী স্টেডিয়াম, অবাধ যাতায়াত তাঁর। তা সে ইস্টবেঙ্গল হোক, মোহনবাগান-মহমেডান কিংবা অন্য দলের সমর্থক বা কর্মকর্তা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
যাঁদের সঙ্গে নিয়মিত ময়দানি ফুটবলের যোগাযোগ, তাঁদের মধ্যে একবার অন্তত তাঁর কাছ থেকে লজেন্স কিনে খাননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সকলের প্রিয় এই লজেন্স মাসি বা দিদি। তাঁর প্রকৃত নাম যমুনা দাস, সেটা অবশ্য অনেকেই জানেন না। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
এই লকডাউনে উনি এখন নিঃস্ব। লজেন্স মাসির জীবন দুই ভালবাসাকে ঘিরে, প্রথমটা তাঁর স্বামী দ্বিতীয়টা ইস্টবেঙ্গল। করোনা অতিমারীর আগের বছর হারিয়েছেন স্বামীকে। এরপর থেকে বন্ধ হয়েছে ময়দানের খেলা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
এরপর থেকেই টিনের চালার ছোট্ট কামরায় একাকীত্বের দিন কাটছে লজেন্স দিদির। আগরপাড়ায় তাঁর বাড়িতে এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। ব্যাংকে স্বল্প কিছু জমানো আছে, কিন্তু আধার সমস্যায় সেই টাকাও তুলতে পারছেন না যমুনাদেবী। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
তাঁর প্রাণের চেয়েও প্রিয় ইস্টবেঙ্গল। অতিমারীর আগে কোনও ম্যাচ থাকলেই মাঠে হাজির হয়ে যেতেন লজেন্স মাসি। পরনে ক্লাবের জার্সির সঙ্গে ম্যাচিং করা লাল-হলুদ শাড়ি। ইস্টবেঙ্গল লেখা মাথায় ফেট্টি। আর হাতে বিশাল লজেন্স-এর প্যাকেট। কোন চাকচিক্যের বালাই নেই। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
সাদামাটা এই মহিলা মাঠের বিরোধী দলের সব দর্শকদেরও বেশ পছন্দের। কট্টর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক হলেও তাঁকে ভালবাসেন মোহনবাগান এবং মহামেডানের সব কর্মকর্তারাই। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
লজেন্স মাসির কথায়, অতিমারী সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। কিন্তু ভালবাসা শেষ করতে পারেনি। তাঁর কোনও সন্তান নেই। ক্লাবের প্লেয়ার থেকে সমর্থকেরা সকলেই তাঁর সন্তানের মতো। সব সময় খোঁজ খবর নিয়েছে। যখন যতটুকু পেরেছে সাহায্য করেছে। কিন্তু রোজগার ছাড়া একটা মানুষ কতদিন এভাবে চলতে পারে? এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
গত বছর আমফান হয়ে গেল। এই বছর ইয়াস, এখন বর্ষাকাল সব মিলিয়ে একতলা বাড়ির অবস্থা বেশ শোচনীয়। ঘরের আশপাশ জুড়ে জল থইথই। ঘরের ভিতরে জল। জলের থেকে বাঁচতে বিছানার উপরেই সব জিনিস তুলে রেখেছে। ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে দেওয়াল জুড়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁর ছবি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
শেষ উপার্জন করেছিলেন আইএসএল-এর ম্যাচে। এরপর থেকে শূন্য হাতে বসে আলো আঁধারির ছোট্ট ঘরে। রান্নাঘরে উনুন জ্বলেনি অনেকদিন। পাড়ার লোকেরা তাঁকে ভালবেসে দিয়ে যান তা দিয়ে দিন কাটছে। লজেন্স মাসির যেন কারও প্রতি কোন অভিযোগ নেই। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
পুরনো দিনগুলোর কথা মন পড়লেই লজেন্স মাসির চোখে জল আসে। চার দেওয়ালের ঘরের নীরবতা তাঁর যেন সহ্য হয় না। ছোটবেলায় মা বাবার ভালবাসা হারিয়েছেন, কিন্তু মাঠ তাঁকে উজাড় করে ভালবেসেছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
গত দু’বছরে জীবন যে এভাবে ওলট পালট হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি, শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বলেন যমুনা দেবী। সিনেমা সিরিয়াল কোনটাই তাঁর পছন্দ নয়। টিভিতে খেলার খবর দেখা ছাড়া আর কিছুই তিনি কিছুই দেখেন না। মাঠে এখন না গেলেও প্রিয় ক্লাবের সমস্ত খবরাখবর তাঁর জানা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
লজেন্স মাসির মতে, যুদ্ধ করে যা জেতা যায় না তা ভালবেসে জেতা যায়। কোন খারাপ কিছু বেশিদিন আর চিরস্থায়ী হয় না। সুদিন ফেরার অপেক্ষায় বসে আছি। আবার মাঠে নামবে খেলোয়াড়রা। তখন আমার ঘরের নীরবতার বদলে সঙ্গী হবে গ্যালারি জুড়ে দর্শকেরা চিৎকার। সমর্থকদের ভালবাসা। প্রিয় দলের জন্যে পাগলের মতো চিৎকার করে গলা ফাটাবে লজেন্স মাসি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
