-
এখন অলিম্পিকের মরশুম। গোটা দেশ খেলায় মজে। সকলের চোখ টিভির পর্দায়। অ্যাথলিটরা কীভাবে দেশের নাম গোটা বিশ্বের সামনে উজ্জ্বল করছে সেদিকেই নজর। বর্তমানে পড়াশোনার পাশাপাশি স্পোর্টসকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। ভারতও এথেকে ব্যতিক্রম নয়। খেলাকেই কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে অনেক ছেলেমেয়েরাই। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
এই দেশে যেমন নতুন ক্রীড়াবিদ তৈরি হয়, এমন অনেক খেলোয়াড়রা রয়েছেন, যাঁরা সঠিক পরিচর্যার অভাবে হারিয়েও যান। তাঁরা বরাবর অবহেলিত এবং উপেক্ষিত। আর্থিক অনটনে তাদের দিন কাটে। খেলা ছেড়ে তাদের বেছে নিতে হয় অন্য রাস্তা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
পুরো নাম মুকেশ গুপ্তা। বয়স ২২ বছর। হাওড়ার তেলকল ঘাটের কাছে বাড়ি। অল্প বয়সেই তাঁর ঝুলিতে রয়েছে একাধিক রেকর্ড। ২০১৯ সালে, সাঁতারে বাংলা চ্যানেল পার করেছেন। ২০২০তে সিএএ এবং এনআরসির বিরুদ্ধে হাওড়া থেকে বেলুড় মঠ পর্যন্ত সাঁতার কেটে রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
চলতি বছরে ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডে প্রথম ভারতীয় হিসেবে জলে সর্বাধিক ডুব দেওয়ার রেকর্ডও রয়েছে তাঁর নামে। বাবা কারখানার শ্রমিক। কিছু বছর আগে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে মুকেশের কাঁধে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
গঙ্গার ধারে বাড়ি হওয়ার ছোট থেকেই সাঁতারের প্রতি টান ছিল। সুযোগ পেলেই মুকেশ চলে যেতেন গঙ্গায় সাঁতার কাটতে। জলে সময় কাটানোই ছিল তাঁর নেশা। এই নেশাই পরবর্তীতে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় কোনও সুইমিং ক্লাবে ভর্তি হতে পারেনি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিজের চেষ্টাতেই গঙ্গায় সাঁতার কেটে যেত। মুকেশের বক্তব্য, ছোট থেকেই সাঁতারের প্রতি আগ্রহ ছিল বাবার অনুমতি না থাকলেও মায়ের ভীষণভাবে সমর্থন ছিল সাঁতারে। টিভি এবং ফোনে বিভিন্ন সাঁতারুদের ছবি দেখে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের প্রতি তার নেশা জন্মায়। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
এভাবেই খোঁজ করতে করতে একদিন বাংলা চ্যানেলের সন্ধান মেলে। বাংলাদেশের একটি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। বাংলা চ্যানেল পার করার সিদ্ধান্ত নেয়। স্পন্সরশিপের জন্যে শুরু হয় ছোটাছুটি। প্রতি পদে পদে আসছিল বাঁধা। অবশেষে অবহেলা ছাড়া ভাগ্যে জুটল না কিছুই। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
জীবনের প্রথম বড় ইভেন্ট। নেই কোনো ভালো কোচ। নিজেই নিজের শিক্ষক। নিজেই টাকা জোগাড়ের চেষ্টায় ঘুরতে শুরু করলেন তিনি। আর এর পাশাপাশি চলত অনুশীলন। শেষ পর্যন্ত তিনি টাকা জোগাড় করতে সমর্থ হন ২০১৯ এ। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
এর আগে এরকম কোন বড় ইভেন্টের অভিজ্ঞতা তার ছিল না। সমুদ্রেও কখনও সে সাঁতার কাটেনি। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত বাংলা চ্যানেল এর অবস্থান। মুকেশের এই বাংলা চ্যানেল অতিক্রম করার অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ঙ্কর। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
মুকেশের কথায়, জলের তাপমাত্রা সব জায়গায় সমান থাকে না। কোথাও কম থেকে কোথাও বেশি, হাইপোথারমিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জলে নামার আগে তার ভয় হচ্ছিল কিন্তু জলে নেমে যাওয়ার পর সবকিছুই যেন সহজ মনে হচ্ছিল। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
মাঝপথে আবহাওয়া খারাপ হয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলেন। একঘণ্টা ভুল পথে সাঁতার কাটতে হয় তাঁকে। পরে আবহাওয়া ভালো হলে রাস্তা খুঁজে গন্তব্যে পৌঁছন। ১৬.১ কিলোমিটার সমুদ্র পথ সাঁতার কাটতে সময় লেগেছিল ৪ ঘণ্টা ৮ মিনিট। বাংলা চ্যানেল পার করার পর করার শংসাপত্র যখন হাতে পান সব কষ্ট যেন এক নিমেষে চলে গিয়েছিল। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
তিনি ফিরে এসে ভেবেছিলেন, তাঁরজন্য অপেক্ষা করে থাকবে অনেক সুযোগ। কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনও কিছুই হয়নি। তেলকল ঘাট থেকে একটু এগিয়ে গিয়ে মুকেশের ছোট্ট চায়ের দোকান। রুজি রোজগারের জন্যে তার সংসারের এটিই একমাত্র মাধ্যম। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
২০১৯ এর শেষে এবং ২০২০ শুরুতে যখন সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে গোটা দেশ উত্তাল। তখন মুকেশ সিদ্ধান্ত নেয় হাওড়া থেকে বেলুড় মঠ পর্যন্ত এর প্রতিবাদে সাতার কাটবেন। এই খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রের শিরোনামে এলেও মুকেশের ভাগ্যে কোন কিছুই জোটেনি। লকডাউন এর জন্য গোটা এক বছর বন্ধ ছিল দোকান। এর মধ্যেই খোঁজ চলতে থাকে ইন্ডিয়া রেকর্ডের। এক্সপ্রেস ফটো-শশী
-
মুকেশ ভেবেছিলেন গতবার থেকে এবারের স্পন্সরশীপ পাওয়ার কাজ সহজ হবে। এবারেও সেই আগের মতন। স্পনসর এর জন্য ছোটাছুটি করতে করতে একজনের খোঁজ পাওয়া গেল। নিজে কিছু টাকা জোগাড়ের পর স্পন্সরশিপ থেকে পাওয়া কিছু টাকা দিয়ে ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ড এর জন্য আবেদন করেছিলেন। এই করোনাকালে গঙ্গায় একটানা সাড়ে ১১ হাজার ডুব দিয়ে তৈরি করেছেন নতুন রেকর্ড। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
এই নতুন রেকর্ডের জন্যে মুকেশ সময় নেন চার ঘণ্টা দশ মিনিট। সম্ভাব্য প্রথম ভারতীয় হিসেবে মুকেশই প্রথম যে এরকম রেকর্ড তৈরি করলো। এতকিছুর পরেও মুকেশের এখনো হতাশা ছাড়া কোন কিছুই জোটেনি। সংসারে আর্থিক রোজগার নেই। চায়ের দোকানেই কেটে যায় সময়। প্রশিক্ষণের সময়ই মেলা ভার! ঠিক মত খাবারও জোটেনা না। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
মুকেশ নিজের চেষ্টাতেই শিখেছেন রোয়িং, সার্ফিং এক্সপিডিশন। মুকেশের ইচ্ছে এই বছরের শেষের দিকে বা আগামী বছরে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার এবং এর সঙ্গে গিনেস ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডে নিজের নাম তোলার। “স্পনসর পাওয়া গেলে সবকিছুই সহজ হবে আর তা না হলে নিজেকেই সব জোগাড় করতে হবে।” বলছেন তিনি। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
-
সব ইভেন্টের শেষে দু-একদিন সবাই মাতামাতি করলেও এর পরে সবাই ভুলে যায়। এটাই মুকেশের আক্ষেপ। মুকেশ যেন তাদের মধ্যে ব্যতিক্রম নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তার বিশ্বাস একদিন সফলতা আসবেই। “জলে যখন নেমেছি ডাঁঙ্গায় না পৌঁছানো পর্যন্ত থামবো না।” আত্মবিশ্বাস ঝড়ে পরে তাঁর গলায়। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
