-
বাঘা যতীন স্টেশন থেকে সামান্য দূর এগোলেই রাজপুর নাইন স্টার ক্লাব। ক্লাবের সামনের ছোট পার্কেই জনা দশেক ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ক্যারাটে শেখাচ্ছেন ব্রুস লি। পার্কের রেলিংয়ের পাশে ভিড় করে দেখছে পথ চলতি মানুষজন। ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
ব্রুস লির নজর তার ছাত্রদের পারফেক্ট কিকে। দক্ষিণ কলকাতার এই ব্রুস লির আসল নাম প্রহ্লাদ সর্দার। বাঘা যতীন এলাকায় বছর ছাব্বিশের প্রহ্লাদকে সকলে ছোট থেকেই ব্রুস লি নামেই চেনে। ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
ভারতের হয়ে ক্যারাটেতে প্রতিনিধিত্ব করে ইতিমধ্যে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে সোনা এবং রুপো। সাউথ এশিয়া স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপে ক্যারাটের দু’টি বিভাগে (কাতা এবং কুমিতে) সোনাও জিতেছেন তিনি। ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
প্রহ্লাদের ছাত্রছাত্রীরাও কোনও অংশে পিছিয়ে নেই। তাদের মধ্যেও বেশ কয়েকজন ক্যারাটেতে সোনা জিতে এসেছে। ভারতের হয়ে খেলেও এত সবের পরেও অবশ্য তেমন প্রচারে নেই প্রহ্লাদ। ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
দুবেলা খাবার জোগাড় করতে এখনও হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। সংসার খরচ চালাতে হয় কখনও সব্জি বিক্রি করে কখনও বা গাড়ি পরিষ্কার করে। মাত্র ১০ বছর বয়স থেকে শুরু হয় তার ক্যারাটে শেখা। ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
অভাবের সংসারে এই পেশায় নিজেকে টিকিয়ে রাখা নেহাত সহজ নয় প্রহ্লাদ তা বুঝে গিয়েছিলেন অনেক ছোট বয়সেই। ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
ক্যারাটে শেখানোর ফাঁকে প্রহ্লাদ তার ব্রুস লি হয়ে ওঠার গল্প বলছিলেন, “পাড়ার ল্যাম্প পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে যখন ছোটবেলায় প্র্যাকটিস করতাম তখন সবাই ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে বলতো ব্রুস লি। এরপর যখন সত্যি ক্যারাটেতে দেশের হয়ে সোনা জিতলাম তখন ওই মানুষগুলোই এসে বলেছে ইয়ার্কি করে যা বলেছি তাতে আমরা নিজেরাই লজ্জিত। আজ থেকে তুমিই আমাদের কাছে আসল ব্রুস লি।” ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
দক্ষিণ কলকাতার রাজপুর ডি ব্লকের বাসিন্দা প্রহ্লাদ সর্দার সবারি মন জয় করেছে ক্যারাটে দিয়েই। বাঘাযতীনের খাল পাড়ের বস্তিতেই বাবা-মায়ের সঙ্গে বাস প্রহ্লাদের। সিঁড়ির নীচে ছোট্ট ঘরে থরে থরে সাজানো ট্রফি, মেডেল, সার্টিফিকেট। এসবই প্রহ্লাদের সম্পদ। ওর অহঙ্কার। এরই মধ্যে সে নিজের ঝুলিতে পুরেছে বেশ কিছু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের পুরস্কার। ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
বাবা সুবল সর্দার এককালে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। বহুতল থেকে ইট পড়ে আহত হয়ে আপাতত বাড়িতেই, কর্মহীন। সংসার চালাতে বাড়ি বাড়ি কাজ করেন প্রহ্লাদের মা সবিতাদেবী। আর্থিক কারণে নবম শ্রেণির পরে আর পড়া হয়নি প্রহ্লাদের। সংসার চালাতে প্রহ্লাদ কখনও আখের রস বিক্রি থেকে বাড়ি বাড়ি কাগজ দেওয়া, সব কাজই করেছেন। ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
সেই সঙ্গে চলে ক্যারাটে অনুশীলন। কিন্তু কোথাও কোন সরকারি সুযোগ সুবিধে পায়নি। দেশের হয়ে পুরষ্কার জিতে আসার পর অনেকে অনেকরকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এসব প্রতিশ্রুতিই সাময়িক, আক্ষেপ করে বলছিলেন প্রহ্লাদ। ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
তার কথায়, “এই দেশে এখনও শুধু ক্রিকেট আর ফুটবল নিয়েই মাতামাতি হয়। এর বাইরেও যে কোন স্পোর্টস থাকতে পারে তা কেউ জানেই না। একটা কম্পিটিশেনের জন্যে তৈরি হতে অনেকরকম পরিকাঠামোর প্রয়োজন হয়। দরকার সঠিক নিউট্রিশেনের। আমাদের মতন ঘরের ছেলেদের যেখানে দুবেলা খাবার জোটেনা তাতেই এত ভালো ফলাফল করতে পারছি। যদি সব কিছু সঠিক ভাবে পেতাম বিশ্বের দরবারে তবে সবার থেকে সেরা আমরাই হতাম। যেমন অচিন্ত্য শিউলিকেই দেখুন। এরকম কত আচিন্ত্য, প্রহ্লাদ চারপাশে ছড়িয়ে। আমাদের নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। কিছু জিতে আসার পর দুদিন শুধু মাতামাতি হয়। তারপর সব ভুলে যায়।” ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
ব্রুস লির প্রথম শিক্ষক ছিলেন, প্রবীর মন্ডল। প্রথম দর্শনেই প্রবীরবাবু কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামের প্রহ্লাদ-কে দৌড়ে কুড়িটা চক্কর দিতে বলেছিলেন। পনেরোর পরই অজ্ঞান হয়ে মাঠে পড়ে যান প্রহ্লাদ। শিক্ষক বোঝেন এই ছেলে ‘লম্বা রেসের ঘোড়া’। সেই থেকেই লড়াই চলছে। ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
পাড়ার ক্লাবে নিজের উদ্যোগে ক্যারাটে শেখাতে শুরু করেছেন প্রহ্লাদ। কোথাও বিনামূল্যে, কোথাও বা সামান্য অর্থের বিনিময়ে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেন। প্রহ্লাদের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ঘর থেকে উঠে আসা। এদের নিয়েই সারাদিন দিন কেটে যায়। ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
-
ছেলের সাফল্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন প্রহ্লাদের মা সবিতাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেটা নিজের চেষ্টাতেই সব করে। আমরা প্রয়োজনটুকুও মেটাতে পারি না। সঠিক খাবারটুকুও জোগাড় করে দিতে পারি না। দেশের হয়ে সোনা জিতেছে এটাই আমাদের কাছে অনেক। প্রহ্লাদের বাবা বলেন, ‘‘ক্যারাটে ওর জীবন। খেলতে বারণ করি না আমরা। কিন্তু একটা চাকরির বড় দরকার। সংসার তো চলে না!’’ ( এক্সপ্রেস ফটো, শশী ঘোষ )
