-
অশোক দাস। গত ত্রিশ বছর ধরে উনি লোকাল ট্রেনে গান করেন। জন্মের পর থেকেই চোখের সমস্যা। দৃষ্টি গিয়েছে। গান করেই সংসার চালান। গানই তাঁর পরিবারকে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছিল। বারাসাতের ভদ্রবাড়ি এলাকার ৫ নম্বর টিপ্পিকলে ছোট এক বেড়ার বাড়িতে থাকেন। স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলের সংসার। লোকাল ট্রেনে গান করেই জমানো টাকায় দুই মেয়ে এক ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
ছেলে ভ্যান চালিয়ে এবং তিনি গান গেয়ে যা রোজগার করতেন তাতেই তাঁদের ছোট সংসারে এক প্রকার চলছিল। এই বছরের ফেব্রুয়ারির পর থেকেই ছন্দপতন। মহামারী থেকে বাঁচতে সরকারের তরফ থেকে গোটা দেশে লকডাউন জারি করা হল। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
এর পর থেকেই সব ওলট পালট হল। মানুষের সাধারণ জীবনযাত্রায় এল আমূল পরিবর্তন। করোনা থেকে বাঁচতে বন্ধ করা হল সমস্ত রকম গণপরিবহণ। এরমধ্যেই ছিল লোকাল ট্রেনও। লোকাল ট্রেনে যাঁরা জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাঁরা সকলেই কর্মহীন হলেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
তখন থেকে অশোকবাবুও বেরোজগারে, ঘরে বসা। তিনি ট্রেনে গান করতেন একটি সাউন্ড বক্সে ট্র্যাক চালিয়ে। খালি গলায় ভিড় ট্রেনে গান গাইতে খুব কষ্ট হয়, তার জন্যে বছর তিনেক আগে একটি সাউন্ড বক্স কিনেছেন। অশোকবাবুর কথায়, সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত গান গাইলে দেড়শ থেকে দুশো টাকা রোজগার হত। লকডাউনের পর থেকে দীর্ঘ ছ'মাস কেটে গিয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
সাউন্ড বক্সটিও ইঁদুরে কেটে নষ্ট করে ফেলেছে। সারাই করতে প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হবে। এই মুহূর্তে বাড়িতে কোনও রোজগার নেই তাই বক্সটিও ফেলে রাখতে হয়েছে। ট্রেন চালু হলেও এটি সারাই না করা পর্যন্ত তাঁর পক্ষে গান গাওয়া সম্ভব নয়। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
অশোকবাবুর স্ত্রী শেফালি দাস, তিনিও মাঝে মাঝে স্বামীর কাজে সাহায্যে করতেন লোকাল ট্রেনে গান গেয়ে। তিনি বলছেন, লকডাউনের প্রথম তিনমাস সরকার থেকে যা রেশন পাওয়া যেত তাতে দু'বেলা খেতে পারছিলাম। এখন রেশন দেওয়াও কমিয়ে দিয়েছে, এই অল্প রেশনে সারা মাস খাওয়া যায় না। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
-
এক বেলা পেট ভরে খেলেও আরেকবেলা জল খেয়ে শুয়ে পড়তে হয়। অশোকবাবুর আক্ষেপ, সরকারি প্রতিবন্ধী খাতায় তাঁর নাম আছে, কিন্তু কোনও সাহায্যেই তিনি এখনও পাননি। তাঁর মতো প্রতিবন্ধীরা এখন কী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন সেই খবরও সরকারের তরফ থেকে কেউ নিতে আসেনি। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে করোনা মহামারী থেকে বাঁচতে ঘরে থাকতে, কিন্তু এভাবে ঘরে থাকতে থাকতে একদিন না খেয়ে মরে পড়ে থাকলেও কেউ জানতে পারবে না, বলছেন দৃষ্টিহীন পথের গায়ক। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
