New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/07/OLD-artist-cover.jpg)
প্রতিমা শিল্পী মহাদেব পাল, বয়স ৮০। এই বৃদ্ধ বয়সেও নেই তার একটুও ক্লান্তি। নিজের মনেই কাজ করে চলেছেন। গত ৬৫ বছর ধরে এই মৃৎ শিল্পী তৈরি করে যাচ্ছেন প্রতিমা। ১৯৪১ সালে বাংলাদেশের কুষ্টিয়াতে তার জন্ম। তখন অবিভক্ত বাংলা। ছোটবেলা থেকে বাবার কাছেই ঠাকুর তৈরির কাজ শুরু করে ছিলেন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
প্রতিমা শিল্পী মহাদেব পাল, বয়স ৮০। এই বৃদ্ধ বয়সেও নেই তার একটুও ক্লান্তি। নিজের মনেই কাজ করে চলেছেন। গত ৬৫ বছর ধরে এই মৃৎশিল্পী তৈরি করে যাচ্ছেন প্রতিমা। ১৯৪১ সালে বাংলাদেশের কুষ্টিয়াতে তার জন্ম। তখন অবিভক্ত বাংলা। ছোটবেলা থেকে বাবার কাছেই ঠাকুর তৈরির কাজ শুরু করে ছিলেন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ বংশ পরম্পরায় মৃৎ শিল্পীদের সন্তান ছোট থেকে প্রতিমা তৈরিতেই পারদর্শী হয়। ব্যতিক্রম হয়নি মহাদেব পালের ক্ষেত্রেও। তার কথায়, তখন প্রতিমা তৈরি করত শুধু পাল সম্প্রদায়ের মানুষেরা। অন্য কোন সম্প্রদায়ের মানুষ এই কাজে আসত না। কাজের পরিবর্তন শুরু হল স্বাধীনতার পর থেকে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ ১৯৪৬'এ দেশ ভাগের আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হল। ৪৭ সালে দেশভাগ। সে সময় সপরিবারে চলে আসেন ভারতে। এরপর থেকে এই দেশই তার সব। ৮০ বছরের এই বৃদ্ধ ১৯৪৪ এর দুর্ভিক্ষ, ১৯৭১ এর যুদ্ধ, নকশাল আন্দোলন আর বর্তমানে করোনা মহামারী সব কিছুরই সাক্ষী হয়ে আছেন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ মহাদেব পাল বলেন, ১৯৪৪ সাল সে এক বিভীষিকাময় সময় ছিল সকলের কাছে। একমুঠো চাল জোগাড় করতে আমাদের তখন কঠিন অবস্থা। কিছু না পেয়ে শাক ঘাস পাতা খেতে আরম্ভ করেছি। বাবার হাতে কোন কাজ ছিল না। আমাদের বেঁচে থাকাই তখন দায় হয়ে পড়েছিল। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ দলেদলে মানুষগুলো হাঁটা লাগালো কলকাতার দিকে। আর যাঁরা দেশে রয়ে গেল তাঁরা লোকের দোরে দোরে ঘুরে মরছে। মানুষের মৃতদেহ পড়েছিল রাস্তায় রাস্তায়। আমার বয়স তখন পাঁচ বছর। খিদের জন্যে সারাদিন কান্নাকাটি করছি। বছর তিন চারেক এভাবেই চলল। এর মধ্যে দেশ স্বাধীন হল। নিজের দেশের ভিটে মাটি ছেড়ে চলে আসতে হল এই দেশে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ আবার নতুন করে শুরু হল সব। এখনকার সময়ের মত তখন কলকাতায় এত দুর্গাপূজা হত না। কিন্তু যে পরিমাণ অন্যান্য ঠাকুর তৈরি হত তাতে সারা বছর কাজের অভাব হত না। প্রতিমা তৈরির কাজে তখন খুব ভালো উপার্জন ছিল। এর জন্যে পাল সম্প্রদায় ছাড়াও কর্মকার, দাস সম্প্রদায়ের লোকেরাও এই পেশায় আসতে শুরু করলো। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ এরপর মাঝখানে কেটে গেল অনেক গুলো বছর। ১৯৭০-৭১ এর সময়টা আবার এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম শুরু হল। আবার দেশ ছেড়ে দলে দলে মানুষ আসতে শুরু করলো। মানুষের হাতে কাজ নেই। পুজো হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হল। ঠাকুর তৈরি কমলো। কাঁচামালের দাম বেড়ে গেল অনেক পরিমাণ। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ এর সঙ্গে চলছে কলকাতায় নকশাল আন্দোলন। কলকাতায় যাওয়া মুশকিল ছিল। সারাদিন বোমাবাজি হচ্ছে। মানুষের লাশ পরে রয়েছে রাস্তায়। খবরের কাগজে তখন মারামারি আর মৃত্যুর খবর। ৮০ সালের পর থেকে সব ঠিক হয়ে এলো। কলকাতাতে পুজোর সংখ্যা বাড়তে থাকলো। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ এর মধ্যে ছোটখাটো অনেক ঘটনা ঘটলেও মানুষের জীবন থমকে যায়নি। বৃদ্ধ মৃৎ শিল্পীটির কথায়, ২০০০ সালের পর থেকে কাজে যেন জোয়ার এসেছিল। বারোয়ারি পুজোয় বাজেটও অনেক বেশী। বিশাল আকৃতির দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে ভালো রোজগার হচ্ছিল। করোনার সব কিছুই বদলে দিয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ গত বছর থেকে অনেক মৃৎশিল্পী এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যান্য সঞ্চয় করা যা ছিল তা দিয়ে গত বছর চলে গিয়েছে। এই বছর সঞ্চিত কোন অর্থ নেই বলে জানান, মহাদেব পাল। তবুও তার কথায় আগের সময়কাল এখন অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে মানুষ। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ এখন অল্পতেই সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। এর ফলে আরও অনেক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। দুর্গাপূজা সব বাঙ্গালির অন্য এক ভালোবাসা। এই ভালোবাসায় যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ নতুন প্রজন্মের কেউ আর ঠাকুর তৈরিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। মানুষ নিয়ম মেনে চলার পরিবর্তে নিয়ম ভাঙছে। বাজারের মূল্যবৃদ্ধি, লকডাউন আর সঙ্গে মহামারী এই তিন জিনিসের সঙ্গে মানুষ লড়াই করে যাচ্ছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ পুজোর বাকি আর একশ দিনও নেই। তার বক্তব্য, এখন শরীর আর তেমন সায় দেয় না। চোখে কম দেখি, শারীরিক সমস্যা রয়েছে এখন ঠাকুর গড়ে তেমন আয়ও হয় না। তবুও মনোবল ভাঙ্গেনি। প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি। এই এক জীবনে অনেক কিছু দেখা হয়ে গিয়েছে। যা কিছু খারাপ হয়েছে তার স্থায়িত্ব বেশী দিন ছিল না। এবারেও এর থেকে আলাদা কিছু নয়। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ এই বৃদ্ধের নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের এটুকু বলার, জীবনে বেঁচে থাকাটা মূর্তি গড়ার মতন। কোথাও ভেঙ্গে গেলে জোড়া দিয়ে আবার নতুন করে তৈরি করা শিখতে হবে। সামনের বছর গুলো আবার ভালো সময় ফিরে আসবে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ