
বাল্মিকীর রামায়ণ অনুসারে দীপাবলির দিনে শ্রীরামচন্দ্র পৌঁছেছিলেন অযোধ্যায় তাঁর নিজের রাজধানীতে। আর সেই দিনটিকে উদযাপন করতে প্রতিবছর গোটা দেশ দীপাবলি উৎসব পালন করে। দীপাবলিকে আলোর উৎসব বলা হয়। অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির সূচনা করে এই দীপাবলি। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

তবে গ্রাম বাংলার কুটির শিল্পে দীপাবলির সময়ে ঘনিয়েছে অন্ধকার। আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক কুটির শিল্পীদের অন্নের সংস্থান প্রায় বন্ধের মুখে। দীপাবলির আগে আলোর বাজার ছেয়ে যায় চিনা সামগ্রীতে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

রং বেরঙের টুনি বাল্ব, এলইডি আলোর চাহিদায় বেশি থাকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে। কালীপুজো হোক কিংবা দীপাবলি, মণ্ডপ থেকে ঘর, আলোকসজ্জাতে প্রথম পছন্দ সস্তার চিনা আলো। এই চিনা আলোর জন্যেই গত কয়েক বছর মাটির জিনিসের চাহিদা এমনিতে কমে গিয়েছিল। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

একদিকে করোনা আবহ, অন্যদিকে পেট্রল ডিজেলের দাম বৃদ্ধি। এই সব মিলিয়ে করুণ দশা কুটির শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পীদের। দত্তপুকুরের চালতাবেড়িয়া এই এলাকাটি মাটির গ্রাম নামে পরিচিত। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

গ্রামের প্রায় ৮০টিরও বেশি পরিবার মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত। কয়েক প্রজন্ম ধরে এই কাজই তারা করে যাচ্ছেন। এখানকার টেরাকোটা শিল্পের শিল্প সত্তার পরিচিতি পেয়েছে বিশ্বের দরবারে। বাইরের অনেক দেশেই এখানকার মাটির তৈরি জিনিস রফতানি হয়। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

প্রদীপ তৈরির পাশাপাশি দীপাবলির জন্য গড়া হয় লক্ষ্মী-গণেশ ছোট মূর্তিও। কলকাতা ছাড়াও দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, গুজরাত, অসম, পাটনা, রাজস্থানে বেশ চাহিদা রয়েছে এখানকার মাটির প্রদীপ এবং লক্ষ্মী-গণেশের। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

পশ্চিমবঙ্গে যেসব মাটির প্রদীপ বিক্রি হয় তা বেশিরভাগই আসে দত্তপুকুরের চালতাবেড়িয়া থেকে। এ কথা হয়তো অনেকরই অজানা। এক সময় খাওয়ার ঘুম উবে যেতো দীপাবলির বাজারে প্রদীপের চাহিদার জোগান দিতে দিতে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

গত বছর থেকে এসব যেন হারিয়ে গিয়েছে। লকডাউন হয়ে যাওয়াতে বাইরের রাজ্যে কোনও পণ্য পাঠানো যায়নি। লোকসান হয়েছিল প্রচুর। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

এই বছর আশা করেছিলেন কাজ করে লোকসান পুষিয়ে দেওয়া যাবে। তাতেও হয়েছে বিপত্তি। যে হারে তেলের দাম বাড়ছে তাতে বাইরে পণ্য পাঠানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। পরিবহন খরচ বেড়ে গিয়েছে দ্বিগুণ। তার সঙ্গে বেড়েছে মাটির দাম। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

এক লড়ি মাটির দাম যেখানে ছিল ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার। এই খরচ পুষিয়ে বাইরে জিনিস পাঠানো মুশকিল এমনটা জানান শিল্পী মালতি পাল। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ


জাতীয় সড়কের দু’পাশের এলাকার ঘরে ঘরে কুটির শিল্প। সারা বছরের চব্বিশ ঘণ্টায় এখানে প্রদীপ তৈরির কাজ চলে। কিন্তু বর্তমানে যেসব কারিগররা মাটির প্রদীপ বানানোর কারখানায় কাজ করতেন তা সব এখন বন্ধের মুখে। ব্যাঙ্কের লোণ শোধ করতে না পারায় ইতিমধ্যে কোর্টের থেকে নোটিস পাঠানো হয়েছে বলে জানান, শিল্পী রণজিৎ পাল। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

করোনার জন্যে নতুন প্রজন্মের কিছু ছেলে মেয়ে কাজ হারিয়ে এই হস্ত শিল্পের পেশায় এসেছিল। এখানেও কাজ হারানোর উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর ষাটের জয়দেব পাল বলেন, ‘করোনা মহামারী হোক বা বছরের অন্যান্য সময় কুটির শিল্পীদের বাইরে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন পড়ে না। ঘরে বসেই কাজ করলেই রোজগার হয়, এতে করোনারও ভয় নেই উপার্জনও ভাল হয়। কিন্তু বাইরের যা পরিস্থিতি তাতে তৈরি হওয়া পণ্য বাইরে রফতানি করা যাচ্ছে না।’ এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ


স্বামীর সঙ্গে প্রদীপ বানানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন নওসিন বিবি। বললেন, ‘১০ বছর ধরে এই কাজ করছি। আমার মতো অনেকেই প্রদীপ তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে। তবে করোনা গত বছর যা ক্ষতি করেছে তার থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে মূল্যবৃদ্ধির কারণে’ কারখানা মালিক কামাল ইসলাম বলেন, ‘এলাকার মানুষ রোজগার করছেন, আমাদের ব্যবসাও বেড়েছে আগের থেকে অনেক। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ

চিনা লাইটের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে অনেক নতুন নতুন কাজ হয়েছে। তেলের দাম বেড়ে যাওয়াতে সব শেষ। বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে না হলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই’। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ


শিল্পীরা সকলে ২০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে বেতনে কাজ করেন। কাজের মান অনুযায়ী কারও একদিনের রোজগার দুশো থেকে তিনশো টাকা। এখন শিল্পীদের এই টাকাই রোজগার করা মুশকিল হয়ে গিয়েছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ