New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2021/07/Saloon-Cover.jpg)
মানুষকে দেখতে সুন্দর করা যাদের কাজ তাদেরকেই বলে নরসুন্দর। সহজ ভাষায় নাপিত। মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ চুল। এই চুল নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। সেই জন্যে প্রথম থেকেই কেশবিন্যাসের কারিগর নাপিতের কদর ও প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। শুধু বদল ঘটেছে তাদের কাজের জায়গার। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ
মানুষকে দেখতে সুন্দর করা যাদের কাজ তাদেরকেই বলে নরসুন্দর। সহজ ভাষায় নাপিত। মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ চুল। এই চুল নিয়ে যুগে যুগে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। সেই জন্যে প্রথম থেকেই কেশবিন্যাসের কারিগর নাপিতের কদর ও প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি। শুধু বদল ঘটেছে তাদের কাজের জায়গার। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ আগে হাটে-বাজার, ফুটপাথের বট বৃক্ষের ছায়ায় কাঠের পাটাতনে কিংবা ইটের উপর বসিয়ে চুল কাটার এরকম দৃশ্য ছিল খুব পরিচিত। এখন এরকম আর সচরাচর দেখা যায় না। কালের নিয়মে পরিবর্তন হয়েছে সব কিছুরই। যুগের তাল মিলিয়ে যেমন বদলেছে চুলের স্টাইল। ঠিক তেমনি গাছতলা থেকে সেলুন থেকে বর্তমানের হাল ফ্যাশানের বিউটি পার্লারে বিবর্তন ঘটেছে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ হরপ্পা সভ্যতা থেকে ভারতের মধ্য যুগ পর্যন্ত চুলের স্টাইলের পরিবর্তনের ধারাকে তিনটি যুগে ভাগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। চুলের স্টাইলে বিপ্লব ঘটেছে ষাট সত্তরের দশকে সেলুনে। মানুষ গাছের নিচে বসে চুল কাটানোর থেকে বেশী পছন্দ করতো সেলুন যেতে। গ্রামেগঞ্জে সেলুন সে সময় জায়গা করতে না পারলেও কলকাতার মতন শহরে সেলুনের ছিল বাড় বাড়ন্ত। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ এমন বক্তব্য মধ্যে কলকাতার ষাটোর্ধ বাসিন্দা রমাপ্রসাদ রায়ের। এখন যেমন সবাই সেলুন ছেড়ে বিউটি পার্লারে ভিড় করছে। পঞ্চাশ ষাটের দশকে ছেলে ছোকরারা চুল কাটার জন্যে গাছের তলায় বসা নাপিতদের ছেড়ে ভিড় করতো সেলুনে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ বচ্চন স্টাইল কিংবা মিঠুন চক্রবর্তী হেয়ার কাটিং ছিল বেশ জনপ্রিয়। সেলুনের দেওয়ালে থাকতো বলিউডের নায়কদের ছবি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজতো এফএম রেডিও। সপ্তাহের প্রতিদিন চুল দাড়ি কাটার মানুষ এলেও। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ রবিবার সকাল হতেই ভিড় জমে যেত এসব সেলুনগুলোতে। সবাই যে চুল দাড়ি কাটার জন্যে সেলুনে ভিড় করতো তা নয়। কেউ কেউ আসতো এফএমে খবর শোনার জন্যে। এরকমই মধ্যে কলকাতার কলেজস্ট্রিটের একশ বছরের কাছাকাছি স্টার সেলুন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ চুল কাটার বিবর্তন থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার সাক্ষী এই সেলুন। ১৯৩৪ থেকে শুরু হওয়া এই সেলুন এখন অনেকটাই বৃদ্ধ। পুরনো চেয়ার, আয়না সবই এখন নড়বড়ে। মুরালি মোহন মান্না গত পঞ্চাশ বছর ধরে কাজ করছেন স্টার সেলুনে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ তমলুক থেকে কোলকাতায় এসে কাজ করছেন তিনি। তার বক্তব্য, 'পাড়ার সেলুনগুলো অনেক পুরনো হয়ে গিয়েছে। নতুন বিউটি পার্লারগুলো সব এখন ঝাঁ চকচকে। নতুন নতুন যন্ত্র দিয়ে চুল কাটা হয়। আমাদের কাছে ক্ষুর, কাঁচি, চিরুনি ছাড়া আর কিছু নেই। আমার ছেলেরও বিউটি পার্লার আছে। আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে সেলুন বলে কিছু থাকবে না।' এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ মুরালিবাবু যখন কাজ শুরু করছিলেন তখন চুল কাটার মূল্য ছিল জন প্রতি চার টাকা, দাড়ি কাটা এক টাকা বারো আনা, এর আগে আরও কম ছিল দু'পয়সা, চার পয়সা। বর্তমানে সেলুনে চুল কাটতে গেলে লাগে পঞ্চাশ টাকা। সেই জায়গায় বিউটি পার্লারে চুল কাটতেই কমের মধ্যে একশ টাকা। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ লকডাউনের আগে যদিও অনেকে পার্লারে যাওয়ার প্রতি আগ্রহ না দেখালেও এখন সবাই পার্লার যেতেই আগ্রহী। সেলুনে কাজের সূত্রে মফস্বল থেকে কোলকাতায় এসে মুরালিবাবু অনেক কিছুই নিজের চোখে বদলাতে দেখেছেন। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ এম জি রোডের তার দোকানে সামনেই একসময় দেখেছেন নকশাল আন্দোলনের বোমাবাজি, রাজনৈতিক পালাবদল, পুরনো বনেদি বাড়ি ভেঙ্গে বড় বড় মাল্টিস্টোরেজ বিল্ডিং তৈরি হতে। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ দোকানের আরেক পুরনো কর্মচারী রাম চন্দ্র বারিক, তিনিও মফস্বলের। মেদিনীপুর থেকে কোলকাতায় এসেছিলেন। গত চল্লিশ বছরের পেশাদার জীবনে অনেক কিছুই দেখেছেন। আগে সেলুনে কাজ করে শেষ করতে পারতেন না। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ কত ছেলেরা আসতো। সেলুনে রাখা থাকতো সিনেমার ম্যাগাজিন। সেই ম্যাগাজিন নিয়েই টানাটানি পর যেত। এখন এসব বন্ধ। রেডিও খারাপ হয়ে পড়ে আছে। এখন সারাদিনে বড়জোর একজন কাস্টমার আসেন। রোজগারও বন্ধ। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ ইয়ং জেনারেশনের কেউ আসেনা। এমনিতেই সেলুনে লোক আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। করোনার জন্যে সব হয়ে গিয়েছে। মানুষ এখন এসিতে গদি দেওয়া চেয়ারে বসে চুল কাটতেই পছন্দ করছে। আমাদের মতন নাপিতদের এখন কোন মূল্য নেই। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ সেলুন এখন ইতিহাস বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ বিউটি পার্লার বলে মনে করছেন বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধ নাপিত রাম চন্দ্র বারিক। এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ