New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/09/saint-cover.jpg)
কলকাতার গঙ্গারঘাট জুড়ে রয়েছে গল্প আর ইতিহাস। কোন সওদাগর কখন বাণিজ্যের জন্যে এসে এই শহরে ঘাটি গেড়েছিল তা ইতিহাসের বইয়ের পাতায় লেখা আছে। গঙ্গাপারের এরকম ঘাটগুলোই কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যের জায়গা হয়ে গিয়েছে। এরকমই একটি ঘাট বাবু রাজ চন্দ্রের ঘাট। যাকে আমরা বাবুঘাট নামে চিনি। বাবুঘাট বলতেই আমাদের চোখের সামনে যে ছবি ভেসে ওঠে। তা হল বড়ো ভিড়ওয়ালা ঘাটে এক পাশে তেল মালিশ করছে কিছু ষণ্ডা মতন লোক আরেক পাশে টিকি ধারি ব্রাহ্মণের পুজো। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
কলকাতার গঙ্গারঘাট জুড়ে রয়েছে গল্প আর ইতিহাস। কোন সওদাগর কখন বাণিজ্যের জন্যে এসে এই শহরে ঘাটি গেড়েছিল তা ইতিহাসের বইয়ের পাতায় লেখা আছে। গঙ্গাপারের এরকম ঘাটগুলোই কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্যের জায়গা হয়ে গিয়েছে। এরকমই একটি ঘাট বাবু রাজ চন্দ্রের ঘাট। যাকে আমরা বাবুঘাট নামে চিনি। বাবুঘাট বলতেই আমাদের চোখের সামনে যে ছবি ভেসে ওঠে। তা হল বড়ো ভিড়ওয়ালা ঘাটে এক পাশে তেল মালিশ করছে কিছু ষণ্ডা মতন লোক আরেক পাশে টিকি ধারি ব্রাহ্মণের পুজো। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ যদিও গত বছর পর্যন্ত এই ছবি ছিল সকলের চেনা। এই বছরের মার্চ থেকে কলকাতার সব চেনা ছবিই যেন অচেনা হয়ে গেল। বাবুঘাটকে অনেকে চিনতো তেল মালিশের ঘাট নামে। সেই তাল মালিশওয়ালারা যেন কোথায় হারিয়ে গেল। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ ১৯০ বছরের এই বৃদ্ধ গঙ্গারঘাট। জানবাজারের বাবু রাজচন্দ্র দাস ১৮৩০ সালে এই বাবুঘাট নির্মাণ করেন। চৌরঙ্গি থেকে বাবুঘাট পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তাও নির্মাণ করেন রাজচন্দ্র। প্রথমে সেই রাস্তার নাম ছিল বাবু রাজচন্দ্র দাস রোড। পরে হয় অকল্যান্ড রোড, বর্তমানে যা অতি পরিচিত রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ স্ট্র্যান্ড রোডের উপরেই দণ্ডায়মান এই ঘাটের থামগুলিতে দেখা যায় গ্রিসের ডোরিক স্থাপত্যের নিদর্শন। ১২টি আর্চ বিশিষ্ট ঘাটে নতুন করে রং করা হয়েছে। ভেঙে যাওয়া সিঁড়ির পরিবর্তে বসেছে পাথরের স্ল্যাব। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ গঙ্গাঘাটের এই পাথরের স্ল্যাবে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতে শুরু হয়ে তেল মালিশ পর্বের। পর পর কাঠের পাটাতন রাখা ঘাটে। প্রমাণ মাপের আয়তাকার সেই পাটাতন আসলে প্রাচীন 'মাসাজ পার্লার'। এর ওপরেই চলে দলাইমলাইয়ের কাজ। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ এই ঘাট পাকা হওয়ার আগে থেকে এখানে মাসাজ চলে আসছে। উড়িষ্যা থেকে ২০০-২৫০ বছর আগে এদের বাপ-ঠাকুরদা এই শহরে এসে এই পারিবারিক পেশা শুরু করেছিল। তখন থেকে এই ঘাটে চলছে এই মাসাজের কাজ। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ পরিবার পরিজন ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন এই মাসাজ কর্মীরা। রোজগারের সামান্য কিছু নিজদের কাছে রেখে বাকি সবটাই পাঠিয়ে দেন তারা উড়িষ্যায় নিজের পরিবারের কাছে। এভাবেই চলে যাচ্ছিল এতদিন। করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে সব বদলে গেল। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ মার্চ মাসে গোটা দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হতে না হত পরিযায়ী মানুষ এই শহর ছেড়ে নিজের দেশে ফিরতে শুরু করলেন। তার মধ্যে ছিলেন বাবুঘাটের মাসাজ শিল্পীরাও। ২০০ বছর ধরে চলে আসা এই পুরনো পেশা যেন চোখের পলকে উদাও হয়ে গেল ঘাট থেকে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ তেল মালিশের করারা বড় বড় কাঠের পাটাতন গুলো শেকল বেঁধে ফেলে রাখা আছে এখন ঘাটের পাশে। এতদিন মোট ১৪ জন মিলে এই ঘাটে তেল মালিশের কাজ করতেন। এখন সকলেই উড়িষ্যায় শুধু ফিরে এসেছেন একজন তিনি নবীন বারিক। ৬০ বছরের এই মাসাজ শিল্পীর কথায়, তিনি ফিরেছেন পেটের তাগিদে বাপ ঠাকুরদার এই পারিবারিক পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ বাকিরা কবে ফিরবে ঠিক নেই। করোনার জন্যে এখন কেউ আর খোলা আকাশের নিচে মাসাজ করাতে আসবে না। অনেকে পেশা বদল করেছে। এদের মতন একই অবস্থা বাবুঘাটের উড়িয়া বামুনদের। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ এই উড়িয়া বামুনরাও এই ঘাটে এসেছিলেন ২০০ বছর আগে পুজো করতে। গঙ্গারঘাটে শ্রাদ্ধশান্তি, উপনয়ন, পুজো করেই এরা নিজেদের সংসার চালান। মাসাজ শিল্পীদের মতন এই পুরোহিতরাও নিজের পরিবার ছেড়ে এই শহরে রোজগার করতে এসেছিলেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ বাবুঘাট গেলেই দেখা বড় থামওয়ালা সিমেন্টের দালানের ভিতর সারিবদ্ধভাবে কাঠের টেবিল রাখা। এগুলোই তাঁদের ঘর সংসার। ছোট জায়াগাতেই খাওয়া, ঘুমানো, পুজোর সব কাজ করেন। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ গত এক বছর আগেও বেশ চলছিল। এ বছর থেকে সকলের যে ছন্দপতন হল। মাসাজ শিল্পীদের সঙ্গে ব্রাহ্মণরাও ফিরে গেলেন উড়িষ্যা। মহালয়ার দিন দুয়েক আগে কয়েকজন ফিরে এসেছেন পুজো উপলক্ষে কাজের আশায়। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ গত কয়েকমাস রোজগার না থাকায় অনেকে ফেরার গাড়িভাড়া টুকুও জোগাড় করতে পারে নি। গঙ্গা পাড়ের এই ঘাট যেন চোখের নিজের ভোল বদলে ফেলেছে। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ গত কয়েকশ বছর ধরে ওড়িশাবাসীদের বাবুঘাট অন্ন জুগিয়ে গেছে। এখন যেন এই ঘাট অসমর্থ এক বৃদ্ধে পরিণত হয়েছে। ভিন রাজ্যে থেকে আসা মানুষগুলোর ঐতিহাসিক পেশা যেন শেষ পর্যায়ে নাম লিখিয়ে নিয়েছে। সব কিছু আগের মতন হবে কিনা তা কারো জানা নেই। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ